রবিবার , ডিসেম্বর ২২ ২০২৪

সামুদ্রিক মাছ ও সি-উডের ব্যাপক চাষাবাদ এখন সময়ে দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক: বঙ্গোপসাগরের মোট ১ লাখ ১৮ হাজার ৮ শ’ ১৩ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের সামুদ্রিক জলসীমায় বার্ষিক সামুদ্রিক মাছের উৎপাদন মাত্র ৬.৫৫ লাখ মে.টন, যা মাছের মোট উৎপাদনের ১৫.৩১%। তাই তুলনামূলকভাবে অধিক স্বাস্থ্যসম্মত সামুদ্রিক মাছ ও সি-উডের ব্যাপক চাষাবাদ এখন সময়ে দাবি। মিঠাপানির চাষকৃত মাছে আমরা বিশ্বে রেকর্ড করলেও উপকূলীয় লোনা পানির মাছ ও জলজসম্পদের আহরনে পিছিয়ে আছি।

রবিবার (২১ জুলাই) বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (BFRI) কর্তৃক “উপকূলীয় মৎস্যসম্পদের টেকসই উন্নয়ন ব্যবস্থাপনা: এসডিজি প্রেক্ষিত” শীর্ষক সেমিনারে গবেষকরা এসব কথা জানান। তারা বলেন, বাংলাদেশের প্রায় সমপরিমান সমুদ্রাঞ্চল অর্জনের পর মিঠাপানির পাশাপাশি উপকূলীয় এবং সমুদ্রসম্পদেও আমাদের পূর্ণ নজর দিতে হবে এবং মৎস্য ও জলজসম্পদের উন্নয়নে কাজ করতে হবে।

মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট -এর মহাপরিচালক ইয়াহিয়া মাহমুদের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু। অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের সচিব সাজ্জাদুল হাসান, মন্ত্রণালয়ের সচিব রইছউল আলম মণ্ডল, মৎস্য অধিদফতরের মহাপরিচালক আবু সাইদ মো. রাশেদুল হক প্রমুখ।

তারা বলেন, বর্তমানে দেশের মাছের উৎপাদন ৪২.৭৭ লাখ মে.টন হলেও বিস্তীর্ণ উপকূলীয় সুন্দরবনের চিংড়ি ও কাঁকড়া উৎপাদনের পরিমাণ মাত্র ২.৮৪ লাখ মে.টন।

মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট -এর গবেষকরা বলেন, সমুদ্রোপকূলে সনাক্তকৃত সীউইডের ১১৭টি মধ্যে রপ্তানিযোগ্য সবুজ, বাদামি ও লাল রঙের ১০টি সীউইড বা শৈবাল বাণিজ্যিক গুরুত্বসম্পন্ন। খাদ্য হিসেবে সমুদ্র-শৈবালের বিভিন্নরকম ব্যবহারের কথাও জানান তারা।

তারা উল্লেখ করে বলেন, গবেষণাগারে উপকূলীয় দুষ্প্রাপ্য চিত্রা, দাতিনা  ও কাইন মাগুরমাছের প্রজননক্ষম ব্রুড লালন করা হচ্ছে। গলদা ও বাগদা চিংড়ির পাশাপাশি গবেষণায় অধিক উৎপাদনযোগ্য হরিণা চিংড়ির উৎপাদন প্রতি হেক্টরে ২,৫০০ কেজি পাওয়া গেছে এবং তাদের বেঁচে থাকার হার  ৮০%। এমনকি তিন মাসে চাকাচিংড়ির গড় ওজন ১৩ গ্রাম পাওয়া গেছে, যা বাজারজাতকরণের উপোযোগী।

তারা তাদের গবেষণা-ফলাফলের ভিত্তিতে সরকার কর্তৃক বরিশালের হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জের ৮২ কিমি.এলাকাকে ইলিশের ৬ষ্ঠ অভয়াশ্রম ঘোষণা এবং সামুদ্রিক মাছের প্রজনন মৌসুমে (২০শে মে হতে ২৩শে জুলাই) ৬৫ দিন মাছধরা নিষিদ্ধকালীন সময়ের যৌক্তিকতা তুলে ধরেন। সামুদ্রিক মাছের প্রজননকালীন মাছধরা নিষিদ্ধকরণকে যুক্তিযুক্তকরণেএ সপক্ষে গবেষণায় ১৬টি মাছের প্রজননকাল বের করেছেন, যা এপ্রিল থেকে আগস্টের মধ্যেই সম্পন্ন হয়ে থাকে। এমনকি কক্সবাজার উপকূলে ২৩ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে ভেটকি মাছের প্রাকৃতিক প্রজননক্ষেত্র সনাক্ত করা গেছে এবং সাগরে স্থাপিত খাঁচায় ভেটকি মাছের ব্রুড লালন পালন করে প্রজনন উপযোগী করা সম্ভব হলে ভেটকি মাছের পোনা উৎপাদনের সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে, যা মেরিকালচার উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে বলেও তারা উল্লেখ করেন।

বক্তারা বাঁকখালী নদীর মোহনায় পানির উপরভিাগে ভাসমান অবস্থায় প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ২০ হাজাররেও বেশি মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে বলেও একটি ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেন। মহেশখালী, টেকনাফ ও শাহপরীর দ্বীপ থেকে সংগৃহীত অপরিশোধিত লবণের প্রতি কেজিতে  প্রায় ১ হাজার টি এবং বাণজ্যিকি পরিশোধিত পাওয়া গেছে ৭০০ থেকে ৯০০টি মাইক্রোপ্লাস্টিক। লাবণী পয়ন্টে সমুদ্র সৈকত ও উখয়িা-রামুর সংযোগস্থল কাঁকড়া বিচেও প্লাস্টিক-দূষণরে মাত্রা কক্সবাজার শহরের তুলনায় তিনগুণের বেশি। কাঁকড়া বিচজুড়ে নদীর মোহনায় হওয়ায় এ নদীর র্দীঘপথ দিয়ে নেমে আসা বিশাল এলাকার প্লাস্টিক-র্বজ্য বঙ্গোপসাগররে সাথে মিলিত হচ্ছে যা সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ।

প্রতিমন্ত্রী বাংলাদেশকে এশিয়ার মধ্যে সেরা উন্নত দেশে পরিণত করতে কৃষি এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সরকারি-বেসরকারি গবেষকদের মধ্যে সমন্বয়ের ওপর সবিশেষ গুরুত্বারোপ করেন। এর আগে তিনি মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের ক্রয়কৃত ৩টি ফ্রিজিং-ভ্যানের চাবি সংস্থার চেয়াররম্যান দিলদার আহমদের নিকট হস্তান্তর করেন। এসব ভ্যানের মাধ্যমে উপকূলীয় অঞ্চলের আহরিত মাছ ঢাকায় বাজারজাত করা হবে।

This post has already been read 3259 times!

Check Also

হাওরে ইজারা অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত -মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা মিজ্ ফরিদা আখতার বলেছেন, ‘আমি মনে করি, হাওরে ইজারা …