রবিবার , ডিসেম্বর ২২ ২০২৪

লবণাক্ত পানির প্রভাবে আর্সেনিক আক্রান্ত রুগির সংখ্যা বৃদ্ধি

ফকির শহিদুল ইসলাম(খুলনা): পৃথিবীর তিন ভাগ পানিতে পরিবেষ্টিত থাকলেও সুপেয় পানির সংকট রয়েছে। আর এই সুপেয় পানির জন্য মানুষের মধে দেখা দিয়েছে হাহাকার। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রতিবছরই বাড়ছে উপকুল অঞ্চলের নদ নদীতে লবণাক্ততার পরিমাণ। লবণাক্ত পানির প্রকোপ বেড়েছে বলেশ্বর, কচা, আড়িয়াল খাঁ, শিবসা, পশুর নদীসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদীগুলোতে। শুধু লবণই নয় নানাভাবে নদী, খাল, বিলের পানি দূষিত হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে পানি ব্যবহারেরও অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। ফলে এসব এলাকার মানুষের মধ্যে বাড়ছে আর্সেনিক আক্রান্ত রুগির সংখ্যা । তারা যে শুধু স্বাস্থ্যই  ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে না, পাশাপাশি নদ-নদী, হাওর-বাঁওড়ের ওপর নির্ভরশীল মানুষের জীবিকাও হুমকির মধ্যে পড়ছে।

খুলণাঞ্চলে মিঠা পানির সংকটের সঙ্গে আছে আর্সেনিক সংকট। এ জেলার অনেক স্থানেই গভীর বা অগভীর নলকূপের পানিতে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিকের উপস্থিতি রয়েছে। এ পর্যন্ত খুলনা জেলার  নয়টি  উপজেলার  ৪২টি ইউনিয়নে ৫৮৯ জন  আর্সেনিকে আক্রান্ত  রুগিকে সনাক্ত হয়েছেন। অথচ ২০০৩ সালে যেখানে খুলনা জেলায় আর্সেনিকে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৪৮০ জন। ২০১১ সালে রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৩৮ জনে। বর্তমানে আর্সেনিক আক্রান্ত  রুগির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে  ৫৮৯ জন হয়েছে। লবণাক্ততায় ভরা উপকুলীয় জেলা খুলণাঞ্চল। আর এই  লবণাক্ততার ফলে এ অঞ্চলে আর্সেনিক আক্রান্ত রুগির সংখ্যা দিনকে দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সূত্র জানান, অপরিকল্পিতভাবে পানি উত্তোলনের ফলে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্থর নিচে নেমে যাচ্ছে। আর সে স্থানটি দখল করছে বাতাস। ভূ-গর্ভস্থ শিলার স্তর ও বাতাসের সংস্পর্শে এসে জারন-বিজারন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আর্সেনিক পানিতে দ্রবীভুত হয়ে যাচ্ছে। খুলনার ৫৯ হাজার ৮২১টি অগভীর নলকূপের মধ্যে ২৫ হাজার ৬৯৩টি নলকূলের পানিতে আর্সেনিকের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সূত্র মতে, আর্সেনিক কবলিত ইউনিয়নগুলো হচ্ছে, ডুমুরিয়া উপজেলার মাগুরঘোনা, রংপুর, পাইকগাছা উপজেলার হরিঢালি, কপিলমুনি, লতা, দেলুটি, শোলাদানা, লস্কর, গদাইপুর, রাঢ়ুলি, চাঁদখালি, কয়রা উপজেলার আমাদি, বাগালি, মহারাজপুর, দাকোপ উপজেলার চালনা, দাকোপ, তিলডাঙ্গা, কামারখোলা, বটিয়াঘাটা উপজেলার জলমা, ভান্ডারকোর্ট, বালিয়াডাঙ্গা, আমিরপুর, রূপসা উপজেলার আইজগাতি, শ্রীফলতলা, নৈহাটি, টিএস বাহিরদিয়া, ঘাটভোগ, তেরখাদা উপজেলার ছাগলাদহ, ছাচিয়াদহ, আজগড়া, মধুপুর, তেরখাদা, বারাসাত, দিঘলিয়া উপজেলার যোগিপোল, সেনহাটি, দিঘলিয়া, গাজীরহাট ও বারাকপুর।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সিনিয়র কেমিষ্ট জানান, ডুমুরিয়া, তেরখাদা, রূপসা, দিঘলিয়া ও পাইকগাছা উপজেলায় অগভীর নলকূপে স্থাপনের ফলে আর্সেনিকে আক্রান্ত রুগির সংখ্যা বেশি। খুলনা জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তত্বাবধায়ক জয়ন্ত নাথ চক্রবর্তী জানান, আর্সেনিকের প্রকোপ অনেকটা কমেছে। নতুন কোনো রোগী নেই। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ইউনিয়ন কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

উল্লেখ্য, ২০০৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত দিঘলিয়ায় আর্সেনিকোসিসে আক্রান্ত হয়ে ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।

This post has already been read 2944 times!

Check Also

খাদ্য উপদেষ্টার সাথে রাশিয়ান ফেডারেশনের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (Acting Ambassador) এর সৌজন্য সাক্ষাৎ

নিজস্ব প্রতিবেদক: খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদারের সাথে রাশিয়ান ফেডারেশনের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (Acting Ambassador) …