শুক্রবার , নভেম্বর ২২ ২০২৪

কেসিসি’র ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের ৮৬৫ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা  

ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা): খুলনা সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের জন্য ৮ শ’ ৬৫ কোটি ৫৪ লক্ষ ৩ হাজার টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বুধবার (২৪ জুলাই) বুধবার বেলা ১১টায় নগর ভবনের শহীদ আলতাফ মিলনায়তনে সাংবাদিকসহ নগরীর বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের উপস্থিতিতে বাজেট উপস্থাপন করেন। একই সাথে তিনি ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের ২ শ’ ৯৮ কোটি ৮৩ লক্ষ ১৪ হাজার টাকার সংশোধিত বাজেটও ঘোষণা করেন। বাজেট ঘোষণা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন, কেসিসি’র অর্থ ও সংস্থাপন স্থায়ী কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর শেখ মো. গাউসুল আজম এবং অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (যুগ্ম সচিব) পলাশ কান্তি বালা।

বাজেট ঘোষণাকালে কেসিসি মেয়র বলেন, নির্বাচনী ইস্তেহারে আমরা যে প্রতিশ্রুতি নগরবাসীকে দিয়েছিলাম, এ বাজেট প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মধ্যদিয়ে তা বাস্তবে রূপদানের চেষ্টা করছি। একই সাথে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের আয়-ব্যয়ের প্রকৃত অবস্থার ওপর ভিত্তি করে বিগত অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটও প্রণয়ন করা হয়েছে। যার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের হার ৪৬ দশমিক ৯০ শতাংশ।

কেসিসি মেয়র আরো বলেন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাজেটের রাজস্ব ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬৯ কোটি ৮২ লক্ষ ২৬ হাজার টাকা এবং সরকারি বরাদ্দ ও উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা হতে উন্নয়ন খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৯৫ কোটি ৭১ লক্ষ ৭৭ হাজার টাকা। এর মধ্যে থেকে বর্তমানে আমাদের হাতে রয়েছে ৮৬ কোটি ৫১ লক্ষ ৫ হাজার টাকা। নিজস্ব আয় বৃদ্ধির পরিকল্পনা, সরকারি ও বিভিন্ন দাতা সংস্থার প্রতিশ্রুতি এবং জনগণের প্রত্যাশার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এ বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে।

বাজেটের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরে কেসিসি মেয়র বলেন, এ বাজেটে নতুন কোনো কর আরোপ করা হয়নি। এটি একটি উন্নয়ন ও জনকল্যাণমুখী বাজেট। বাজেটে শহরের সড়ক ও ড্রেনেজ তথা জলাবদ্ধতা নিরসনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এছাড়া শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে বাজেটে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। অবকাঠামো উন্নয়নের সাথে এগুলো রক্ষণাবেক্ষণের ওপর এ বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বাজেটে নাগরিক সেবা সম্প্রসারণ ও সেবার মান উন্নত করার পরিকল্পনা রয়েছে।

সিটি মেয়র আরো বলেন, এ বাজেটে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন, পার্ক, ধর্মীয় উপসানালয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন এবং কেসিসি’র বিভিন্ন দপ্তর আধুনিক প্রযুক্তির আওতায় আনা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি করার উপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এছাড়া ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া রোগ প্রতিরোধে মশক নিধন এবং স্বাস্থ্য রক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে যে ক্ষতি নিয়মিত হচ্ছে তা মোকাবেলা ও উপযোগী অবকাঠামো গড়ে তোলা এবং ক্ষতিগ্রস্থ মানুষদের স্বনির্ভর করে গড়ে তোলাসহ বস্তি এলাকার রাস্তাঘাট, ড্রেন, ল্যাট্রিন সহ শিক্ষার মানোন্নয়নের দিক নির্দেশনা এ বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

প্রস্তাবিত বাজেটের উল্লেখযোগ্য দিক সমূহ বর্ণনা করতে গিয়ে সিটি মেয়র বলেন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে জাতীয় এডিপিতে কেসিসি’র ২টি প্রকল্পে ৪০২ কোটি ৫৬ লক্ষ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে যা চলতি অর্থবছরে পাওয়া যাবে। প্রকল্প দু’টির একটি খুলনা সিটি কর্পোরেশনের গুরুত্বপূর্ণ ও ক্ষতিগ্রস্থ রাস্তা মেরামত ও উন্নয়ন প্রকল্প। বর্তমান অর্থবছরে এ প্রকল্পে ১৮৪ কোটি ৮৮ লক্ষ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। অন্যটি হচ্ছে খুলনা মহানগরীতে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্প। এ প্রকল্পে ২০১৯-২০ অর্থবছরে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২১৭ কোটি ৬৮ লক্ষ টাকা।

সিটি মেয়র বলেন, আজকের বাজেটে প্রস্তাবিত জাতীয় এডিপিভুক্ত ৮টি প্রকল্প তুলে ধরা হয়েছে। প্রকল্প সমূহ হচ্ছে খুলনা শহরতলী এলাকায় রাস্তা উন্নয়ন, সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট উন্নয়ন, পরিচ্ছন্নকর্মীদের জন্য সেবক নিবাস নির্মাণ, শিশুপার্ক ও সোলার পার্ক নির্মাণ, নাগরিক সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ওয়ার্ড অফিস ও কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ, খুলনা সিটি সেন্টার নির্মাণ, আধুনিক কসাইখানা নির্মাণ ও শেখপাড়া কিচেন মার্কেট নির্মাণ প্রকল্প। এর মধ্যে সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট উন্নয়ন প্রকল্পে ৩৩৫ কোটি টাকা, পরিচ্ছন্ন কর্মীদের জন্য সেবক নিবাস নির্মাণে ৮০ কোটি টাকা, শিশুপার্ক ও সোলার পার্ক নির্মাণে ৫৫ কোটি টাকা, ওয়ার্ড অফিস ও কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ প্রকল্পে ১৯৩ কোটি ৪৭ লক্ষ টাকা, খুলনা সিটি সেন্টার নির্মাণে ৪৭০ কোটি ৩৯ লক্ষ টাকা ব্যয় করা হবে।

বাজেট ঘোষণাকালে সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, খুলনা মহানগরীর সার্বিক উন্নয়ন ও জনগণের কল্যাণের জন্য আমরা সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন দাতা সংস্থা বা উন্নয়ন সহযোগীদের সাথে কাজ করি। ২০১৯-২০ অর্থবছরে দাতা সংস্থার প্রকল্পসমূহে ১৩৪ কোটি ৬৫ লক্ষ ৫২ হাজার টাকা পাওয়া যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এসব প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্প, বাংলাদেশ মিউনিসিপ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফান্ড, নগর অঞ্চল উন্নয়ন প্রকল্প-২, নিরাপদ পথ খাবার উন্নয়ন কর্মসূচী, আরবান পাবলিক এন্ড এনভায়রনমেন্টাল হেলথ সেক্টর ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প, সিটি ওয়াইড ইনক্লুসিভ স্যানিটেশন এনগেজমেন্ট ইন খুলনা সিটি (এসএনভি), আরবান মেনেজমেন্ট অব ইন্টারনাল মাইগ্রেশন ডিউ টু ক্লাইমেট চেঞ্জ প্রকল্প, সোলার স্ট্রীট লাইট প্রকল্প, খালিশপুর কলেজিয়েট গার্লস স্কুল নির্মাণ প্রকল্প, এনগেজিং মাল্টি সেক্টরাল পার্ট ফর ক্রিয়েটিং অপরচুনিটিজ ইমপ্রুভিং ওয়েলবিয়িং এন্ড রিলিজিং রাইটস অব দি আরবার পুওর প্রকল্প, শিশু রিসপনসিভ কার্যক্রম প্রকল্প ও লাইভস্টক ডেভেলপমেন্ট বেজ ডেইরি রেভ্যুলেশন এন্ড মিট প্রোডাকশন প্রকল্প।

কেসিসি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, খুলনা মহানগরীকে সর্বাঙ্গীন সুন্দর তিলোত্তমা নগরীতে পরিণত করতে আমাদের আন্তরিকতা এবং প্রচেষ্টার কোনো ঘাটতি নেই। যে কোন উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন অর্থের। অর্থ সংস্থানের জন্য একটি স্ব-শাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে খুলনা সিটি কর্পোরেশন শুধুমাত্র সরকারি বা বিদেশী সাহায্য ও ঋণের ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকতে পারেনা। তাকে নিজস্ব আয়ের উপর নির্ভর করে নিজের পায়ে দাাঁড়ানোর চেষ্টা চালাতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

অনুষ্ঠানে সাংবাদিকসহ নগরবাসীর বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে সিটি মেয়র বলেন, সুষ্ঠুভাবে খুলনা মহনগরী এলাকার উন্নয়ন কাজ ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে সেবাদানকারী সংস্থাসমূহের মধ্যে সমন্বয়ের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কাজের সমন্বয়ের লক্ষ্যে সংস্থাসমূহের মধ্যে মাসে অন্তত একবার বৈঠক করা হবে।

সাংবাদিকদের অন্য এক প্রশ্নের জবাবে সিটি মেয়র বলেন, নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে আমরা বদ্ধ পরিকর। জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে ময়ূরনদীসহ ২২ টি খালের ওপর গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ অপরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন আবাসিক এলাকা গড়ে তোলায় ঐ সকল এলাকার নাগরিকগণ কাঙ্খিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তিনি উদাহরণ টেনে বলেন কেডিএ’র আবাসিক এলাকায় ড্রেনেজ ব্যাবস্থা, খেলার মাঠ, কমিউনিটি সেন্টার ইত্যাদির সংস্থান রাখা হয়নি। শিপইয়ার্ড থেকে দৌলতপুর পর্যন্ত শহর রক্ষা বাধ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। অর্থ বরাদ্দ পাওয়া গেলে কাজ শুরু করা হবে।

বাজেট ঘোষনা অনুষ্ঠানে কেসিসি’র উন্নয়ন কর্মকান্ড এবং উন্নয়ন পরিকল্পনা ভিত্তিক ডকুমেন্টারী ভিডিও প্রদর্শন করা হয়। কেসিসি’র প্যানেল মেয়র, কাউন্সিলর, সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর, সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, সাংবাদিকসহ নগরীর বিশিষ্ট নাগরিকবৃন্দ বাজেট ঘোষণাকালে উপস্থিত ছিলেন।

This post has already been read 3838 times!

Check Also

ভেটেরিনারি ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ভ্যাব) এর বিক্ষোভ সমাবেশ

ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদী আওয়ামলীগের বিদায়ের তিন মাস অতিক্রান্ত হলেও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে …