মো. আরিফুল ইসলাম (বাকৃবি) : বৈশ্বিক তাপমাত্রা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় মেরু অঞ্চলের বরফ গলিত হয়ে সামুদ্রিক পানির স্তর বাড়িয়ে দিচ্ছে যার কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বন্যা, অতিবৃষ্টি দেখা দিয়েছে। বৈশ্বিক এই উষ্ণায়নের মূল কারণ হলো- গ্রীনহাউজ গ্যাসের বৃদ্ধি। গ্রীনহাউজ গ্যাস কমানোর জন্য আমাদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গহণ করা জরুরি। কৃষিতে সেচ ব্যাবস্থা নিয়ন্ত্রন এবং কার্যকর সার ব্যবহারের মাধ্যমে গ্রীনহাউজ গ্যাস নির্গমন প্রশমনের করা সম্ভব।
গতকাল শনিবার (২৭ জুলাই) সকাল সাড়ে ১১টায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যাললয়ের (বাকৃবি) কৃষি অনুষদের সম্মেলন কক্ষে “গ্রীনহাউজ গ্যাস ইমিশন মিটিগেশন” শীর্ষক কর্মশালায় এসব তথ্য তুলে ধরেন কৃষি বিজ্ঞানীরা। কৃষি গবেষণা ফাইন্ডেসন (কেজিএফ) এর আর্থায়নে ওই কর্মশালার আয়োজন করা হয়।
মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান প্রফেসর ড. মফিজুর রহমান জাহাঙ্গীরের সভাপতিত্বে কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. লুৎফুল হাসান। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন যথাক্রমে কেজিএফ এর এক্সিজিকেটিভ ডিরেক্টর ড. ওয়াইস কবির এবং বাউরেস এর ভারপ্রাপ্ত পরিচালক, প্রফেসর ড. মাহফুজুল হক।
কর্মশালায় “গ্রীনহাউজ গ্যাস ইমিশন মিটিগেশন” ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রকল্পের প্রধান তত্বাবধায়ক প্রফেসর ড. এম. রফিকুল ইসলাম।
মূল প্রবন্ধে ড. এম. রফিকুল ইসলাম জানান, বিভিন্ন উপায়ে সেচ ও সার ব্যবস্থাপনায় গ্রীনহাউজ গ্যাসের পরিমাণ নির্ণয়, ফসলের উৎপাদন ক্ষমতা এবং গ্রীনহাউজ গ্যাস নির্গমন কমানের জন্য কার্যকর নাইট্রোজেন এবং সেচ ব্যবস্থাপনা উদ্ভাবন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় কার্যকর প্রযুক্তির সমন্বয় করার উদ্দেশ্যে বাকৃবির গবেষকদল কাজ শুরু করেন। গবেষণায় সেচের পানিতে ও মাটিতে অ্যামোনিয়ার পরিমাণ, মিথেনের নির্গমন এবং নাইট্রাস অক্সাইডের নির্গমনের পরিমান সফলভাবে নির্ণয় করতে সক্ষম হয়েছেন তাঁরা এবং গ্রীনহাউজ গ্যাস কমানোর জন্য প্রয়োজনীয় নীতি প্রণয়ন করতেও সক্ষম হয়েছেন বলে জানান গবেষণা প্রকল্পের প্রধান তত্বাবধায়ক।
তিনি আরো জানান, কার্বন ডাই অক্সাইড, মিথেন এবং নাইট্রাস অক্সাইড প্রধান গ্রীনহউজ গ্যাস। গবাদিপশুর বিষ্ঠায় প্রচুর পরিমানে মিথেন গ্যাস উৎপন্ন হয় যা পরিবেশে উন্মুক্ত হয়ে গ্রীনহাউজ গ্যাস হিসেবে কাজ করে। গবাদিপশুকে প্রোটিন সম্পন্ন খাবার খাওয়ালে মিথেনের পরিমান কমানো সম্ভব। কৃষি জমিতে গুটি ইউরিয়া এবং ইউরিয়া ব্রিকুইট এর গভীর সংস্থাপন ব্রডকাস্টের চেয়ে ফসলের উৎপাদনের জন্য এবং গ্রীনহাউজ গ্যাস নির্গমন প্রশমনে বেশী উপযোগী। গৃহস্থলির জৈববস্তুর ছাই এবং প্রাকৃতিক কয়লা জমিতে ব্যবহারে রাসয়নিক সারের পরিমান যেমন কমানো সম্ভব তেমনি জমিতে মিথেন উৎপাদন ও নির্গমনের হারও কমানো সম্ভব।
গবেষণা প্রকল্পের সহকারী পর্যবেক্ষক হিসেবে ছিলেন অধ্যাপক ড. মো. আসলাম আলী এবং বাকৃবির মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম। কর্মশালায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. জহির উদ্দিনসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবৃদ উপস্থিত ছিলেন।