শুক্রবার , নভেম্বর ২২ ২০২৪

ভারতে পোলট্রি ও পশুখাদ্যে নিষিদ্ধ হলো শেষ ভরসার এন্টিবায়োটিক!

মো. খোরশেদ আলম জুয়েল: শুধু বাংলাদেশ কেন, সারাবিশ্বই বর্তমানে এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার নিয়ে চিন্তিত। শেষ হয়ে আসছে এন্টিবায়োটিকের আয়ূষ্কাল, প্রতিরোগী হয়ে উঠছে জীবাণু, সুপার বাগে মৃত্যুর আশংকায় সারাবিশ্বের বিজ্ঞানী ও সচেতন মহল। ফলে পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশেই গবাশিপশু, মাছ ও মুরগিতে এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ ও নিষিদ্ধ করেছে। বাংলাদেশ সরকারও সেটি নিষিদ্ধ করেছে। পাশ্ববর্তী দেশ ভারত নিষিদ্ধ করেছে তারও আগে।

তবে নতুন খবর হলো, বিশ্বের বেশ কয়েকটি মারাত্মক সুপারবাগের বিস্তারকে থামানোর উদ্দেশ্যে ভারত সরকার খামারগুলোর “শেষ ভরসা” হিসেবে পরিচিত একটি এন্টিবায়োটিক পশুখাদ্যে ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। খুব স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন আসতে পারে, ভারতে যদি বহু আগে মাছ, মুরগি ও পশুখাদ্যে এন্টিবায়োটিক নিষিদ্ধ করে থাকে তবে নতুন করে নিষিদ্ধ কারণ কি?

২০১৬ সনের কথা। ভারতের অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা জানতে পারলেন, দেশটিতে বিদেশ থেকে জাহাজে করে ১০০ টন কলিস্টিন এন্টিবায়োটিক আমদানি করা হয়েছে এবং সেগুলা আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানিগুলোর কাছে বিক্রি করছে কোনরকম পূর্বানুমোদন ছাড়া।

ফলে বিষয়টি নিয়ে ভারতের অনুসন্ধানি সাংবাদিকদের সংগঠন ‘ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম’ অনুসন্ধানে নামে এবং ভয়ংকর কিছু তথ্য উঠে আসে।

তারা দেখতে পায়, ভারতের বহু খামারি তাদের পোলট্রি ও  পশু মোটাতাজাকরণের উদ্দেশ্যে খাদ্যে ব্যাপকভাবে কলিস্টিন ব্যবহার করছে, ফলে জন্ম নিচ্ছে অসংখ্য সুপারবাগ।

জানা যায়, মানুষের চিকিৎসার জন্য পৃথিবীতে যতগুলো এন্টিবায়োটিক ব্যবহৃত তার মধ্যে কলিস্টিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কলিস্টিন তখনই ব্যবহৃত হয় যখন একজন মানুষের শরীরে অন্য কোন এন্টিবায়োটিক কাজ করেনা কিংবা রেজিস্ট্যান্স হয়ে যায়। অর্থাৎ মানব চিকিৎসার ‘শেষ ভরসা’ হিসেবে ব্যবহার করা হয় কলিস্টিন এন্টিবায়োটিক।

সংগঠনটি জানিয়েছে, ভারতের পোলট্রি পণ্য উৎপাদন ও  বিপণনকারী সর্ববৃহৎ কোম্পানি ভেঙ্কেজ কলিস্টিন নামক এন্টিবায়োটিক খামারিদের কাছে গ্রোথ প্রমোটর হিসেবে বিক্রি করতো। অথচ ভারতের বড় বড় সুপার মার্কেট, কেএফসি, ম্যাকডোনাল্ড ও পিৎজা হাটের মতো আন্তর্জাতিক ব্রান্ডের ফাস্ট ফুড শপগুলোতে তারা মুরগি সরবরাহ করে। ফাস্টফুড ব্র্যান্ডগুলি অবশ্য জানিয়েছে, তাদের কাছে সরবরাহ করা মুরগীতে কোনও গ্রোথ প্রমোটর এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়নি।

আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এর মতে, পোলট্রি ও গবাশিপশু মোটাতাজাকরণে ব্যবহৃত এন্টিবায়োটিক যেগুলো ‘গ্রোথ প্রমোটর’ নামে পরিচিত সেগুলোই মূলত রেজিস্ট্যান্স হওয়ার জন্য দায়ী। সংস্থাটি বলছে, এ প্র্যাকটিস থেকে বের হয়ে আসা উচিত।

শুধুমাত্র সংক্রমণজনিত চিকিৎসার ক্ষেত্রে ব্রিটিশ পোলট্রি ফার্মগুলোতে কলিস্টিন ব্যবহার করা হয়, যদিও তাদের অফিসিয়াল রেকর্ড বলছে সেটি খুব সীমীত পরিসরে।

বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে নিয়ে জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়ায় গত শুক্রবার (২৬ জুলাই) ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পোলট্রি, গবাদিপশু, মাছের খামারে এবং ফিডের সাপ্লিমেন্ট হিসেবে কলিস্টিনের উৎপাদন, বিপণন, বাজারজাতকরণ ও ফর্মূলেশনে কলিস্টিন সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করেছে। অর্থাৎ ভেটেরিনারি মেডিসিন হিসেবে কোনভাবেই কলিস্টিন ব্যবহার করা যাবেনা।

অতি সাম্প্রতি বাংলাদেশের ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর পাউডার ফর্মে সকল ধরনের কলিস্টিন পোলট্রি ও পশু খাদ্যে নিষিদ্ধ করেছে। যদিও সীমিত পরিসরে লিকুইড ফর্মে কলিস্টিন আমদানির অনুমতি রয়েছে। সেক্ষত্রে শুধুমাত্র ১০০০ মি.লি বোতলে আমদানি ও বিক্রয় করা যাবে।

This post has already been read 5599 times!

Check Also

ভারতীয় পশুতে ক্ষুরা রোগ: মহিষে কমছে রপ্তানি আয়

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: সুস্বাদু, দামেও সস্তা হওয়ার কারণে এক সময় ভারতীয় মহিষের মাংসের বেশ কদর ছিল …