ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা): ওয়ার্ল্ড ফিস বাংলাদেশ ও প্রান্তি একোয়াকালচার লি.-এর যৌথ উদ্যোগে ‘নিরাপদ মাছ চাষ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণ’ বিষয়ক এক বছর মেয়াদী একটি প্রকল্প খুলনায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। সোমবার (২৯ জুলাই) স্থানীয় হোটেল টাইগার গার্ডেন ইন্টারন্যাশনালে দিনব্যাপী প্রকল্পের পরিচিতি ও পরিকল্পনা বিষয়ক এক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান।
কর্মশালায় তিনি বলেন, দেশের ক্রমবর্ধমান আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ধারায় মানুষের জীবন-যাত্রার পরিবর্তন হচ্ছে। সেই সাথে খাদ্যাভ্যাসও পাল্টাচ্ছে। উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে প্রান্তিক পর্যায়ে মানুষের কর্মব্যস্ততা বেড়েছে। সে কারণে মাছ কিনে তা রান্নার উপযোগী করার অন্তবর্তীকালীন কাজে এখন সময় বাঁচানোর চেষ্টা হচ্ছে। এই ক্ষেত্রে রান্নার জন্য রেডি ফিস বাজারজাতকরণ দেশে নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি করবে এবং উদ্যোক্তারা যদি মান ধরে সততার সাথে কাজটি করতে পারেন তা হলে এ উদ্যোগ সফল হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তিনি আরো বলেন, আমাদের দেশের অনেক নামীদামি ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি রয়েছে। তাদের উৎপাদিত পণ্য বিশাল বাজারও পেয়েছে। কিন্তু তার মধ্যেও অনেক কোম্পানি বেশি লাভের আশায় কোয়ালিটি রক্ষা না করে ভেজাল দিয়ে পণ্য উৎপাদন করে ভোক্তাদের ঠকিয়ে জনস্বাস্থ্যের ক্ষতি করছে। এটা খুবই দুঃখজনক ও হতাশার।
তিনি বলেন, মাংস প্রতিদিন খাওয়া যায় না, তার নেতিবাচক দিকও আছে। কিন্তু মাছ দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় থাকলে ক্ষতি নেই। আমাদের দেশে স্থানীয় প্রজাতির মাছের সংকট থাকলেও চাষকৃত মাছের উৎপাদন আশাব্যঞ্জক। তাই দেশে মাছ এখনও সহজলভ্য। এ পরিস্থিতিতে যদি মাছ নিরাপদভাবে চাষ করা যায় এবং তা স্বাস্থ্যসম্মতভাবে প্রসেসিং করা এবং রান্নার উপযোগী করে বাজারজাত করা যায়, তবে এর ব্যাপক চাহিদার সৃষ্টি হবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে দেশে এর একটা নতুন ব্যবসা শুরু হবে। যার সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ব্যাপক নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন হবে।
তিনি খুলনা থেকে এমন উদ্যোগ গ্রহণ করায় সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ল্ড ফিস ও প্রান্তি একোয়াকালচারকে ধন্যবাদ জানান। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের বিভাগীয় উপ-সচিব এস এম নাজিমূল ইসলাম ও জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবু সাঈদ। প্রান্তি একায়াকালচারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আখতার হাসান পান্নার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ কর্মশালায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ এন্ড মেরিন রিসোর্স টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের প্রফেসর ড. মো. নাজমুল আহসান। মূল বক্তব্য উপস্থাপনকালে তিনি দেখান মাছ উৎপাদনের পর সাত হাত ঘুরে কীভাবে মাছের মান কমে যায় এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাজারজাত, বিপনন ও কাটা হয়। এছাড়া ব্যবসায় প্রশাসন ডিসিপ্লিনের প্রফেসর ড. মো. নূর উন নবী বাজারজাতকরণের বিষয় নিয়ে বক্তব্য রাখেন। সেমিনারে মাছের গুণগতমান ও অভ্যন্তরীণ ভোক্তাদের কথা মাথায় রেখে প্যাকেটের আকার ও মূল্যসহ বিভিন্ন বিষয়ে কর্মশালায় বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।
কর্মশালায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ডিসিপ্লিনের শিক্ষক, গবেষণা সহকারী ছাত্র-ছাত্রী, খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তাবৃন্দ বিভিন্ন উপজেলার সিনিয়র উপজেলা মৎস্যকর্মকর্তাবৃন্দ, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট বাগেরহাট ও পাইকগাছা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাবৃন্দ, বিভিন্ন এনজিও কর্মকর্তা ও মাছ চাষীরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, প্রাথমিকভাবে খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলা থেকে এক হাজার মাছচাষী বাছাই করে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে এবং কেবল তাদের উৎপাদিত মাছ উক্ত প্রক্রিয়ায় বাজারজাত করা হবে। যারা এই মাছ প্রসেসিংয়ে কাজ করবেন তাদেরকেও প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে এবং স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে কঠোর মান নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে করা হবে। মাছের উৎপাদনস্থল থেকে সরাসরি প্রসেসিং প্লান্টে চলে আসায় হাতবদলের সুযোগ থাকবে না এবং এমনভাবে তা প্রসেসিং করে বিপনন করা হবে যাতে নিয়েই রান্না করা যাবে। উদ্যোক্তারা মনে করেন এখন শহরে শহরে যেভাবে হাজার হাজার চাইনিজ রেস্টুরেন্টে মুরগীর ফ্রাইসহ বিভিন্ন খাবার তৈরি হয়, তেমনি প্রসেসড মাছ দিয়েও গৃহস্থালীর রান্না ছাড়াও একদিন ছোট-বড় হোটেলে সেভাবে ফিসফ্রাইসহ নানা পদের খাদ্য তৈরি হবে এবং তা জনপ্রিয়তা পাবে। এক বছর মেয়াদী এ প্রকল্পটি চলতি বছরের জুন মাসে শুরু করা হয়েছে এবং প্রকল্পটি আগামী ২০২০ সালের মে মাসে শেষ হবে। এ প্রকল্প নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়ন করা হলে এ অঞ্চলে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলে প্রকল্প সংশ্লিষ্ঠরা আশা ব্যাক্ত করেন ।