শিশুর পুষ্টি অপুষ্টির বিষয়টি মায়ের বুকের দুধের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত এবং স্তন্যদান না করানোর ফলে মায়েদের ব্রেস্ট ক্যান্সার, স্থূলতা, ডায়াবেটিস ইত্যাদি নানা রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। আমাদের দেশে মাতৃদুগ্ধ দানের হার বৃদ্ধি না পাওয়ার অন্যতম মাতৃদুদগ্ধ দানের উপকারিতা সম্পর্কে সচেতনতার অভাব। এই পরিস্থিতির পরিবর্তনে সঠিক সময়ে সঠিক নিয়মে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে জানাতে এবং মাতা-পিতাকে উৎসাহিত করতে সচেতনতা জরুরি। তারই আলোকে শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়াতে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ০৪ আগস্ট নগরীর রউফাবাদ বিহারী কলোনী এলাকায় বিশ্বমাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ উদযাপন উপলক্ষে র্যালী ও ভ্রাম্যমান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন বেসরকারী স্বেচ্ছাসেবী সমাজ উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান আইএসডিই বাংলাদেশ। আর্ন্তজাতিক ভাবে পুষ্ঠি নিয়ে কর্মরত নেটওয়াকিং প্রতিষ্ঠান সিভিল সোসাইটি এলায়েন্স অব সান (Scaling Up Nutrition) সিএসএ ফর সান এর সহযোগিতায় সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচির আওতায় এ আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়।
দেশে আশংকাজনকভাবে কমছে স্তন্যদানকারী মায়ের সংখ্যা
চট্টগ্রাম সংবাদদাতা: “শিশুর যথাযথ পুষ্টি, গঠন এবং মায়ের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে মাতৃদুগ্ধদান একটি অতুলনীয় পন্থা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ৯০% মায়েদের দুগ্ধদানের লক্ষ্য নির্ধারন করেছে। সার্বিক পুষ্টি পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য উন্নতি লাভ করলেও স্তন্যদানকারী মায়ের সংখ্যা আশংকাজনকভাবে কম। ১৯৯৪ সালে এর হার ছিল ৪৬% যা ২০১১ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ৬৪ শতাংশে এবং ২০১৪ সালে এসে তা হ্রাস পেয়ে হয় ৫৫ শতাংশ। ২০১৮ সাল নাগাদ এই অনুপাত আর বাড়েনি।”
চট্টগ্রামে বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ’১৯ উদযাপন উলক্ষে র্যালী ও ভ্রাম্যমান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে এসব তথ্য তুলে ধরেন আয়োজকরা।
সারা বিশ্বব্যাপী শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানো উৎসাহিত করতে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও ১-৭ আগস্ট বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ উদযাপনের জন্য সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগে নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। এবারে সপ্তাহের প্রতিপাদ্য বিষয় হলো “শিশুকে সবসময় মায়ের দুধ খাওয়াতে মাতাপিতাকে ক্ষমতায়ন করুন”।
র্যালী পূর্ব আলোচনা সভায় আইএসডিই বাংলাদেশ’র নির্বাহী পরিচালক এস এম নাজের হোসাইনের সভাপতিত্বে ও ক্যাব বিভাগীয় সংগঠক জহুরুল ইসলামে সঞ্চালনায় সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম সিটিকর্পোরেশনের কাউন্সিলর জেসমিন পারভীন জেসী, আবিদা আজাদ, ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি আলহাজ্ব আবদুল মান্নান, বাকলিয়া পাবলিক স্কুলের অধ্যক্ষ মনিরুজ্জমান, জেলা স্কাউটস সাবেক সম্পাদক এস এম শাহনেওয়াজ আলী মির্জা, প্রাইম ক্যাডেট স্কুলের অধ্যক্ষ আবু ইউনুস, ক্যাব পাঁচলাইশের সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন, ক্যাব মহানগরের যুগ্ন সম্পাদক জানে আলম, নিজাম উদ্দীন খোকন, আইএসডিই বাংলাদেশের মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, রহিমা আখতার, ক্যাব ডিপিও শাম্পা কে নাহার, শাকিল আহমেদ মুন্না, জাবেদ আলম শাহীন, রেশমী আখতার, মুক্তা শেখ মুক্তি প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
র্যালীত্তোর সমাবেশে বক্তারা মায়ের দুধের উপকারিতা ও শিশুকে বুকের দুধ না খাওয়ালে কি কি পরিনাম হতে পারে সে বিষয়ে তৃণমূল পর্যায়ে আরও সচেতনতা সৃষ্ঠিতে সরকারী-বেসরকারী সমন্বিত উদ্যোগ এর দাবি করা হয়। সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রনালয়ের অনেক কর্মসূচির চলমান থাকলেও জনগন এ সমস্ত সুবিধাগুলি থেকে বঞ্চিত। তাই সরকারী সেবাগুলির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতে মাঠ পর্যায়ে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও নাগরিক নজরদারি নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। না হলে কাজীর গরু খাতায় আছে গোয়ালে নাই-সেরকম হবে। আর শিশুকে গুড়ো দুধ খাওয়ালে তার পরিনাম ভয়াবহ কারন, গুড়ো দুধের আমদানি, উৎপাদন ও মেয়াদোর্ত্তীনের বিষয়গুলি এখনও পুরোপুরি নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। সে কারনে টিনের বা কৌটার গুড়ো দুধের বেলায় অধিক সতর্কতা অবলম্বনের আহবান জানানো হয়। ভ্রাম্যমান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ককসবাজারের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রচেষ্টার সদস্য/সদস্যরা মাতৃদুগ্ধ, পুষ্টি ও শিশু স্বাস্থ্য নিয়ে নগরীর রউফাবাদ কলোনী, অক্সিজেন, মুরাদপুর, বিবিরহাট ও বহদ্দারহাট এলাকায় সঙ্গীত পরিবেশন করেন।