চট্টগ্রাম সংবাদদাতা: অনেক মা আধুনিকতা ও ফ্যাশনের নামে শিশুকে বুকের দুধ বাদ দিয়ে গুড়ো দুধ দিয়ে থাকেন। আর শিশুকে গুড়ো দুধ খাওয়ালে তার পরিনাম ভয়াবহ। কারণ, গুঁড়ো দুধের আমদানি, উৎপাদন ও মেয়াদোর্ত্তীনের বিষয়গুলি এখনও দেশে পুরোপুরি নিশ্চিত হয়নি। সে কারণে, শিশুকে টিনের বা কৌটার গুঁড়ো দুধ প্রদান পরিহার করতে হবে। অন্যদিকে বুকের দুধের কারনে একটি শিশুর সাথে মায়ের বন্ধন সুদৃঢ হয়। শিশুর পুষ্টি-অপুষ্টি, শারিরীক গঠন ও বৃদ্ধির বিষয়টি মায়ের বুকের দুধের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত এবং স্তন্যদান না করানোর ফলে মায়েদের ব্রেস্ট ক্যান্সার, স্থূলতা, ডায়াবেটিস ইত্যাদি নানা রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। দেশে মাতৃদুগ্ধ দানের হার বৃদ্ধি না পাওয়ার অন্যতম মাতৃদুদগ্ধ দানের উপকারিতা সম্পর্কে সচেতনতার অভাব। এই পরিস্থিতির পরিবর্তনে সঠিক সময়ে সঠিক নিয়মে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে জানাতে এবং মাতা-পিতাকে উৎসাহিত করতে সচেতনতা জরুরি। সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান বিভাগের অনেক সেবা চলমান থাকলেও বিপুল সংখ্যক জনগন এ সমস্ত সুবিধাগুলি থেকে বঞ্চিত। তাই মাঠ পর্যায়ে সরকারী সেবাগুলির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও নাগরিক নজরদারি নিশ্চিত করা দরকার।
সোমবার (৫ আগস্ট) নগরীর রউফাবাদ বিহারী কলোনীর সমাজ সেবা অফিস চত্বরে বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ উদযাপন উপলক্ষে মা সমাবেশ ও মাতৃদুগ্ধদানকারী মা’দের সম্মাননা অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বক্তাগন উপরোক্ত মন্তব্য করেন। ১-৭ আগস্ট বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ উদযাপনের অংশ হিসাবে সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচির আওতায় আর্ন্তজাতিক ভাবে পুষ্ঠি নিয়ে কর্মরত নেটওয়াকিং প্রতিষ্ঠান সিভিল সোসাইটি এলায়েন্স অব সান (Scaling Up Nutrition) সিএসএ ফর সান এর সহযোগিতায় বেসরকারী স্বেচ্ছাসেবী সমাজ উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান আইএসডিই বাংলাদেশ এ কর্মসূচির আয়োজন করেন। এবারে সপ্তাহের প্রতিপাদ্য বিষয় হলো “শিশুকে সবসময় মায়ের দুধ খাওয়াতে মাতাপিতাকে ক্ষমতায়ন করুন”।
বক্তারা আরো বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অনুযায়ী “সকলের জন্য সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা” কথা বলা হলেও দেশে শিশুকে মাতৃদুগ্ধ দানের প্রবণতা ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। সার্বিক পুষ্টি পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য উন্নতিলাভ করলেও স্তন্যদানকারী মায়ের সংখ্যা আশংকাজনকভাবে কম। ১৯৯৪ সালে এর হার ছিল ৪৬% যা ২০১১ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ৬৪ শতাংশে এবং ২০১৪ সালে এসে তা হ্রাস পেয়ে হয় ৫৫ শতাংশ। ২০১৮ সাল নাগাদ এই অনুপাত আর বাড়েনি। শিশুর যথাযথ পুষ্টি, গঠন এবং মায়ের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে মাতৃদুগ্ধদান একটি অতুলনীয় পন্থা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ৯০% মায়েদের দুগ্ধদানের লক্ষ্য নির্ধারন করেছে। তাই শিশুকে মায়ের দুধ ও ঘরের তৈরি পরিপূরক খাবার খাওয়ানোর অগ্রগতির ধারাকে জোরদার করতে সংশ্লিষ্ট সকলকে আরো কার্যকরভাবে কাজ করতে হবে। সরকারি, বেসরকারি এবং সংশ্লিষ্ট সকল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে আরো কার্যকরভাবে কাজ করতে হবে এবং সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মাতৃ ও শিশু পুষ্টি বিষয়ে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন সক্ষম হবে।
আইএসডিই বাংলাদেশ’র নির্বাহী পরিচালক এস এম নাজের হোসাইনের সভাপতিত্বে ও ক্যাব বিভাগীয় সংগঠক জহুরুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর আবিদা আজাদ, বক্তব্য রাখেন বিজিএমইএ এর স্ট্যান্ডিং কমিটির কো-চেয়ারম্যান সাফা মোতালেব কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হাজী আবু তাহের, ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি আলহাজ্ব আবদুল মান্নান, জেলা স্কাউটস সাবেক সম্পাদক এস এম শাহনেওয়াজ আলী মির্জা, ক্যাব পাঁচলাইশের সহ-সভাপতি ক্যাব মহানগরের যুগ্ন সম্পাদক জানে আলম, ক্যাব নেতা নিজাম উদ্দীন খোকন, শাকিল আহমেদ মুন্না, জাবেদ আলম শাহীন, আইএসডিই বাংলাদেশের মো. জাহাঙ্গীর আলম, রেশমী আখতার, মুক্তা শেখ মুক্তি, রহিমা আখতার, ক্যাব ডিপিও শাম্পা কে নাহার, শিক্ষক সুধাংশু বিকাশ রয়, নিখিল কুমার বিশ্বাস, মৌলানা মনির আহমদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
পরবর্তীতে প্রধান অতিথি ও অতিথিবৃন্দ ১০ জন দুগ্ধদানকারী শ্রেষ্ঠ মা’কে পুরস্কার ও সম্মাননা প্রদান করা হয়।
উল্লেখ্য, আইএসডিই চট্টগ্রামে বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ’১৯ উদযাপন উপলক্ষে সপ্তাহ ব্যাপী কর্মসুচির অংশহিসাবে মা সমাবেশ ও মাতৃদুগ্ধদানকারী মা’দের সম্মাননা প্রদান, মাতৃদুগ্ধ নিয়ে উঠান বৈঠক, র্যালী, আলোচনা সভা ও ভ্রাম্যমান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিভিন্ন শিক্ষা ও তথ্য উপকরণ বিতরনসহ নানা কর্মসূচির আয়োজন করেন।