সাখাওয়াত হোসেন হৃদয় (কিশোরগঞ্জ): কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় অসময়ে তরমুজ চাষ করে সফল হয়েছেন নূরুল ইসলাম নামের এক কৃষক। তরমুজ মৌসুমী ফল হলেও অফ সিজনে মাচায় এর চাষ করে সফলতা পেয়েছেন তিনি। তাছাড়া মৌসুম ছাড়া অফ সিজনে এর আবাদ করে ভালো ফলনও পেয়েছেন। বর্তমান বাজারে অফ সিজনে এ তরমুজের চাহিদাও ব্যাপক। এতে বাড়তি আয়ও হচ্ছে কৃষক নুরুল ইসলামের। পরীক্ষামূলকভাবে এ উপজেলায় এর আবাদ করতে পেরে সফল হয়েছে কৃষি বিভাগও।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, তরমুজ মৌসুমী ফল। সাধারণত বেলে দো-আঁশ মাটিতে তরমুজের চাষ হয়ে থাকে। এ ফলের রয়েছে প্রচুর পুষ্টিগুণ। মৌসুম ব্যতিত তরমুজের জুড়ি মেলা ভার। আর সেই অসম্ভবকেই সম্ভব করেছে পাকুন্দিয়া উপজেলা কৃষি বিভাগ। তরমুজ এখন আর শুধুমাত্র মৌসুমের ফল নয়। অফ সিজনেও এর আবাদ করে ভালো ফলন পাওয়া গেছে।
উপজেলার এগারসিন্দুর ইউনিয়নের আংগিয়াদী গ্রামের নূরুল ইসলাম নামের এক কৃষকের এক বিঘা দো-আঁশ জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে তরমুজ চাষ করা হয়েছে। প্রথম বারের মতো তরমুজ চাষ করেই ব্যাপক সাফল্য পাওয়া গেছে। বীজ বপনের ৪০ দিনের মাথায় ফুল আসে। আর এ ফুল হতে পরিপুষ্ট তরমুজ হতে সময় লাগে ৩০ থেকে ৩৫ দিন। এই মোট ৭০ থেকে ৭৫ দিনের জীবনকাল। বাইরে কালো আর ভিতরে টকটকে লাল। প্রতিটি তরমুজ ওজনে প্রায় চার থেকে পাঁচ কেজি। তরমুজগুলো খেতে খুবই মিষ্টি। অফ সিজনের তরমুজ হওয়ায় এর বাজার দরও চড়া। স্থানীয় বাজারে ৬০ থেকে ৭০টাকা কেজি ধরে বিক্রি হচ্ছে। আর ঢাকার বাজারে তা পাওয়া যাচ্ছে ৮০ থেকে ৯০টাকা কেজি।
সরেজমিনে উপজেলার আংগিয়াদী গ্রামের কৃষক নূরুল ইসলামের তরমুজ ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায়, মাচায় ঝুঁলে আছে শত শত তরমুজ। প্রতিটি তরমুজ লাল রঙের নেটে মোড়ানো। জমির মালিক নূরুল ইসলাম তরমুজ ক্ষেতের দেখভাল করছেন।
কৃষক নূরুল ইসলাম বলেন, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ হামিমুল হক সোহাগ ভাইয়ের পরামর্শে এক বিঘা জমিতে অফ সিজনের তরমুজ চাষ শুরু করি। এতে আমার খরচ হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার টাকা। যদিও প্রথমে কিছুটা সংশয় ছিল। কিন্তু ফলন দেখে ও বাজারে ভালো দরে বিক্রি করতে পেরে এখন আমি অনেক খুশি। এক বিঘা জমিতে ৩৫০টি তরমুজের চারা রয়েছে। যার প্রত্যেকটিতে দুই থেকে তিনটি করে তরমুজ ধরেছে। সে হিসাবে ৮০০ থেকে ৮৫০টি তরমুজ রয়েছে। গড়ে প্রতিটি তরমুজের ওজন প্রায় চার থেকে পাঁচ কেজি। বর্তমানে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি ধরে বিক্রি হচ্ছে। বাজার মূল্য ঠিক থাকলে তরমুজ থেকে দুই লক্ষাধিক টাকা আসবে বলে ধারণা করছি। অন্য যে কোনো ফসলের চেয়ে অফ সিজনের এ তরমুজ চাষ করে বেশ লাভবান হয়েছি।
আংগিয়াদী ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ হামিমুল হক সোহাগ জানান, এই অঞ্চলে সাধারণত তরমুজের আবাদ হয়না। অফ সিজনে প্রথমবারের মতো তরমুজ আবাদ হয়েছে। ওই কৃষকের এক বিঘা জমিতে কৃষি বিভাগের নিবিড় তত্ত্বাবধানে নিয়মিত পরামর্শ প্রদানের মাধ্যমে ভার্মি কম্পোস্ট, ইয়েলো কালার ট্র্যাপ, ফেরোমেন ট্র্যাপ ব্যবহার করে সম্পূর্ণ বিষমুক্ত পদ্ধতিতে তরমুজ আবাদ করা হয়েছে। যা স্বাস্থ্যসম্মত হওয়ায় বাজারে এর ব্যাপক কদর রয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সাইফুল হাসান আল-আমিন বলেন, ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল টেকনোলজি প্রোগ্রাম ফেজ-২ (এনএটিপি-২) প্রকল্পের আওতায় উচ্চ মূল্যে প্রদর্শণীতে পরীক্ষামূলকভাবে কৃষক নুরুল ইসলামের এক বিঘা জমিতে অফ সিজনের তরমুজ আবাদ করা হয়েছে। প্রথম বারেই বেশ ভালো ফলন হয়েছে। অফ সিজন হওয়ায় বাজারে বিক্রিও হচ্ছে ভালো দরে। এতে কৃষক লাভবান হয়েছেন। যা সাড়া জাগিয়েছে অন্য কৃষকেরদেরও। এতে আগামিতে এ উপজেলায় তরমুজের আবাদ আরো বৃদ্ধি পাবে।