রবিবার , নভেম্বর ২৪ ২০২৪

সচিবালয়ের ক্লিনিকে এডিস মশার লার্ভা!!

প্রতিকী ছবি

আমি আজ আমার অসুস্থতা অর্থাৎ জ্বর, পাতলা পায়খানা ও শরীর ব্যথার চিকিৎসার জন্য কর্মস্থল বাংলাদেশ সচিবালয়ের ৯ নম্বর ভবনের ক্লিনিকে গেলাম। সাথে ছিল ছোটমেয়েও, তার চোখের সমস্যা। তার চশমা পরিবর্তনের জন্য ডাক্তার পরামর্শ লিখে দেয়ার পর আমি নিজের চিকিৎসার জন্য ৭ নং কক্ষে সিরিয়ালে দাঁড়ালাম।

চেয়ারে বসতে গেলে দেখি পাশের চেয়ারে একটি খালি বালতি রাখা। ক্লিনিকের একজন কর্মচারী এসে চেয়ারে বসতে আমাকে মানা করলেন এবং আরেকটা চেয়ারে জমা কিছু পানির ওপর রাখা ঢাকনাটা খুললেন। তার ও লোকজনের কথাবার্তায় বুঝলাম, সেই পানিতে এডিস মশার লার্ভা আছে।

তখন চেয়ারের ওপরে দেয়ালের দিকে তাকিয়ে একটি পানির ফিল্টার আবিস্কার করলাম। ৭ নং রুমের একজন ডাক্তার এসিআই এরোসেল নিয়ে সেই পানিতে অনেকবার স্প্রে করতে-করতে বলতে থাকেন, দেখি মরে কিনা? আমি তখন অতি উৎসাহী হয়ে চেয়ারের পানির দিকে তাকিয়ে দেখি, অনেকগুলো লার্ভা লাফাচ্ছে। আমিও জীবনে এডিসের লার্ভা দেখিনি। বাসীপানিতে যেমন পোকা হয় এবং তিড়িংবিড়িং লাফায়, দেখতে তেমনই।

আমি ডাক্তারকে বললাম, এই এরোসোল তো আমিও ব্যবহার করি, তাই আমিও দেখতে চাই লার্ভা মরে কিনা? মেয়েকেও ডেকে এনে দেখালাম এবং ফিল্টারের নিচে জমাপানি থেকে সাবধান করলাম।

তবে প্রশ্ন উঠতেও পারে যে, এরা এডিসের লার্ভা, তার প্রমান কী? ডাক্তাররাই যখন তাদের অভিজ্ঞতার আলোকে এদের এডিসের লার্ভাই বললেন, তখন আমার সন্দেহ নেই।এবার আমার ডাক পড়ায় ডাক্তারের চেম্বারে ঢোকার কিছুক্ষণ পর স্প্রেকারী ডাক্তারও সেই চেম্বারে এসে বসলেন। তারা দুজন ডাক্তার একই চেম্বারে বসেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, লার্ভাগুলো কি মরলো?

: নাহ, তিনি হতাশার সুরে বললেন।
: তাহলে কী করলেন, জিজ্ঞেস করলাম।
: এরোসোলে না মরায় আমরাই মেরে ফেললাম।
: কীভাবে মারলেন বলেন তো, আমরাও পেলে যাতে মারতে পারি।
: কাগজ দিয়ে পিষেই মেরেছি।

পাশের আরেকজন রোগী বললেন, পানিতে বেড়ে ওঠা লার্ভা এভাবে মারলেও মরে না। আপাত মৃতলার্ভা ১০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে তাপ দিলেই শুধু মরে। তখন সেই ডাক্তার আমার ব্যবস্থাপত্র লিখতে ব্যস্ত ডাক্তার মাহমুদুল হাসানকে বলতে থাকেন, আমাদের তো মশা কামড়ালো, এখন কী হবে!

সচিবালয়ের মতন ভিআইপিদের এলাকার ক্লিনিক বা হাসপাতালেই যদি এডিসের লার্ভা থাকে, তাহলে আমরা কতটা অরক্ষিত ভাববার বিষয়। রাজশাহী মেডিক্যালের আবাসিক এলাকাতেও অনেক লার্ভা পাবার খবর গণমাধ্যমে এসেছিল, যা আমাদের জন্য লজ্জার! তাই এডিস মশার ওষুধের চেয়ে এখন বেশি দরকার এর জন্মস্থান ও লার্ভাধ্বংসের। আর সেজন্য দরকার পবিত্র ইসলামের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার গুরুত্বের আলোকে আমাদের আবাসস্থলসহ সর্বত্র ধারাবাহিক পরিচ্ছন্নতা অভিযান এবং জনসচেনতামূলক ব্যাপক কান্সেলিং। এজন্য সরকার ও জনগণের সমন্বিত উদ্যোগ অতিজরুরি।

আমাদের জনগণ শিক্ষিত-অশিক্ষিতনির্বিশেষে অধিকাংশই পথেঘাটে পানি ও ড্ররিঙ্কের বোতল, ডিম বা ডাব-নারকেলের খোসা, পলিথিন ইত্যাদি ফেলে যেমন পরিবেশ দূষিত করে, তেমনই এডিস মশার বৃদ্ধিতেও সহায়তা করে। অথচ বিদেশে এমনটি নেই। কেননা তারা স্কুল-কলেজের পাঠ্যেই ছাত্রছাত্রীদের পরিবেশ-সচেতনতা, পরিষ্কারপরিচ্ছন্নতা, আইনকানুন, মানবতা ইত্যাদির শিক্ষাই শুধু নয়, মাঠে-ময়দানে নিয়ে গিয়ে ট্রাফিক আইন, ফুতপাতে চলার নিয়ম, অন্ধদের রাস্তাপারাপা্‌রে সহায়তা, গাড়িপার্কিং ইত্যাদি হাতেকলমেও শিখিয়ে অভ্যস্ত করে তোলে। জাপানিরা এদিক থেকে বিশ্বে অধিক অগ্রসর।

রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত গত ফুটবল বিশ্বকাপে তার হারলেও উচ্ছৃঙ্খলতা-প্রদর্শনের বদলে তারা তাদের টেন্টের ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করে নজির স্থাপন করেছিল। এজন্য চাই সুনাগরিকসৃষ্টির লক্ষাভিসারী পাঠ্যপুস্তক ও শিক্ষাব্যবস্থা। ধর্মীয় শিক্ষাও এক্ষেত্রে ফলপ্রসূ হবে বলে আমি মনে করি।

যাইহোক, আমি ক্লিনিকে ডেঙ্গুর টেস্ট করতে চাইলেও ডাক্তার বললেন, এখানে সে ব্যবস্থা নেই। তাহলে সচিবালয়ের মতন ভিআইপি এলাকার লোকদের ডেঙ্গু হলে উপায় কী হবে?

তাই সচিবালয় ক্লিনিকে ডেঙ্গুরোগীর ভর্তির আবাসিক ব্যবস্থা না থাকলেও অন্তত ডেঙ্গু-সনাক্তের যাবতীয় সুযোগসুবিধা থাকা উচিত নয় কি?

 

This post has already been read 4133 times!

Check Also

ডিম ও মুরগির বাজার স্থিতিশীলতায় দরকার  “জাতীয় পোল্ট্রি বোর্ড” গঠন

কৃষিবিদ অঞ্জন মজুমদার : পোল্ট্রি শিল্পের সাথে আন্ত:মন্ত্রনালয়, আন্ত:অধিদপ্তর  এবং উৎপাদন ও বিপননে ডজনের উপরে …