ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা): মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক পরিবেশ ও বিভিন্ন বন্যজন্তুর পদচারণায় সমৃদ্ধ সুন্দরবনের রয়েছে অপরিমেয় অর্থনৈতিক গুরুত্ব। স্থায়ী এবং অস্থায়ী মিলে প্রায় ৪০ লক্ষ মানুষের বসবাস এই সুন্দরবনকে ঘিরে। এই একমাত্র বনকে কেন্দ্র করেই তারা তাদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। কেউ হয়তো বনের ভেতর গাছ কেটে জ্বালানির ব্যবস্থা করে, কেউ গোলপাতা নিয়ে ঘরের ছাদ ছেয়ে দেয়, মৌয়ালরা মধু সংগ্রহ করে উপজীবিকা নির্বাহ করে। আমাদের দেশের কাঠ এবং জ্বালানির প্রায় ৪৫% আসে সুন্দরবনের বুক থেকে।
এছাড়াও বন থেকে প্রাপ্ত আয়ের প্রায় ৪১% আসে এই অরণ্যভূমি থেকেই। আর সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীলদের বন বিভাগ থেকে পাশ পারমিট দেয়া হয়। প্রতি বছরের জুন মাসের ১ তারিখ থেকে শুরু করে ৩১ জুন পর্যন্ত তারা প্রত্যেকটি নৌকা বিএলসি-এর মাধ্যমে নবায়নের মধ্য দিয়ে জীবন জীবিকার জন্য তৈরী হয়। কিন্তু বিপত্তি ঘটে পাশ-পারমিট দেয়ার পর। ১ জুন পাশ দেয়া হলেও ৩ দিন পর তা পুনরায় ক্লোজ করে নেয়া হয়। এতে জেলে পরিবারগুলোর মধ্যে তৈরী হয়েছে চরম হতাশা, ক্ষোভ ও অশান্তি। সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীলদের চলতি আগষ্ট মাসের ১ তারিখ পাশ-পারমিট দেয়া হয়। পাশ পারমিট দেয়ায় সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীলদের পরিবার পরিজনের মধ্যে ফিরে আসে স্বস্তি।
কিন্ত পারমিট চালুর তিন দিনের মাথায় হঠাৎ বন বিভাগ উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের দোহাই দিয়ে বনজীবিদের দেয়া পাশ-পারমিট তুলে নেয়া হয়। পাশ-পারমিট তুলে নেয়ার ফলে সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকার হাজার হাজার পরিবার চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে। নেমে আসে তাদের প্রাত্যহ্যিক জীবন যাপনে হতাশার ছায়া। উপকুলীয় অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষের জীবনযাত্রা সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল। বন বিভাগ এই বিপুল সংখ্যক মানুষের জীবন জীবিকার ভিন্ন কোনো পথের সংস্থান না করেই তাদের বিএলসি প্রত্যাহার করা হয়।
সুন্দরবনের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ ও জেলেদের মাধ্যমে জানা গেছে, গত ১ আগস্ট সুন্দরবনে মাছ ও কাঁকড়া আহরণের পাশ-পারমিট দেয়া শুরু হয়। পাশ-পারমিট দেয়ার ৩ দিন পর তা’ আবার তুলে নেয়া হয়। এতে সুন্দরবনসহ উপকুলীয় অঞ্চলের উপর নির্ভরশীল পেশাজীবীরা চরম বেকার ও অসহনীয় দুরবস্থার মধ্যে পড়েছে। ছেলে/মেয়েদের পড়ার খরচ এবং সাংসারিক নিত্য প্রয়োজনীয় চাল-ডাল, বাজার-ঘাট বন্ধ হয়ে গেছে। এই মুহূর্তে তাদের বিকল্প কোনো আয়ের পথ খোলা নেই বলে তারা জানান। জুন মাসের ১ তারিখ থেকে শুরু করে ৩১ জুন পর্যন্ত তারা প্রত্যেকটি নৌকা বিএলসি-এর মাধ্যমে নবায়নের মধ্য দিয়ে জীবনজীবিকার জন্য তৈরী হয়। কিন্তু বিপত্তি ঘটে পাশ-পারমিট দেয়ার পর। পয়লা জুন পাশ দেয়া হলেও ৩ দিন পর তা পুনরায় ক্লোজ করে নেয়া হয়। এতে জেলে পরিবারগুলোর মধ্যে তৈরী হয়েছে চরম হতাশা, ক্ষোভ ও অশান্তি।
তারা জানান, বছরের শুরুতে যদি বিএলসি নবায়ন না হতো তাহলে আমরা বিকল্প আয়ের পথ বেছে নিতে পারতাম। এমন এক সময় এসে পাশ-পারমিট বন্ধ করে দেওয়া হলো যে সময় বিকল্প কোনো আয়ের পথ আমাদের সামনে খোলা নেই। ফলে আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে এবং ছেলে/মেয়ের লেখাপড়া নিয়ে পড়ছি বিপাকে।
উল্লেখ্য, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে একমাত্র পর্যটন কেন্দ্র সুন্দরবন। প্রতি বছর দেশ-বিদেশের হাজার হাজার পর্যটক ভিড় করেন সুন্দরবনে। দেশী বিদেশি পর্যটকদের সমাগমের ফলে এ অঞ্চলে পর্যটক নির্ভর কর্মসংস্থান এব বিদেশীদের আগমনে দেশের জাতীয় আয়ের হিসাবে বেশ কিছু বৈদেশিক মুদ্রাও যোগ হয়।