সাখাওয়াত হোসেন হৃদয় (কিশোরগঞ্জ): কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় ট্রাইকো কম্পোস্ট সার ও লিচেট ব্যবহারে কৃষকদের মধ্যে দিনদিন আগ্রহ বাড়ছে। এ প্রযুক্তিতে উৎপাদিত সার ও লিচেট ব্যবহারে উপকৃত হচ্ছেন কৃষকেরা। ট্রাইকো কম্পোস্ট সার ব্যবহারে মাটির গঠন ও বুনট উন্নত করে পানি ধারণ ক্ষমতা বাড়ায়, পানির অপচয় রোধ করে। মাটির অম্লত্ব ও লবণাক্ততা নিয়ন্ত্রণ করে ফসলের উৎপাদন ও গুণগত মান বাড়িয়ে কৃষকের আয় বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
এছাড়া ও ট্রাইকো কম্পোস্ট সার উৎপাদনের সময় যে লিচেট (তরল জাতীয়) সংগ্রহ করা হয় তা বিভিন্ন সবজি ও পান বরজে ব্যবহার করে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধিসহ ফসলের রোগবালাই নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তাই স্বল্প খরচে ও সহজ পদ্ধতিতে উৎপাদিত এ সার ও লিচেট ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল টেকনোলজি প্রোগ্রাম ফেজ-২প্রজেক্ট(এনএটিপি-২) প্রকল্পের আওতায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ‘ট্রাইকো কম্পোস্ট’ উৎপাদন প্রদর্শনী স্থাপন করা হয়েছে। সেখান থেকে উৎপাদিত সার জমিতে ব্যবহার করে ভাল ফলন পেয়েছেন এখানকার কৃষকেরা। ইতোমধ্যেই উপজেলার খামা, আংগিয়াদী ও আদিত্যপাশা গ্রামের বেশ কয়েকজন কৃষক এ প্রযুক্তিতে সার উৎপাদন ও ব্যবহার করছেন। পাশাপাশি ট্রাইকো কম্পোস্ট সার উৎপাদনের সময় যে লিচেট সংগ্রহ করা হয় তা পান বরজ ও বিভিন্নি সবজি চাষে ব্যবহার করে ভাল ফলন পাচ্ছেন। এতে উপজেলার অন্যান্য কৃষকের মধ্যেও এ প্রযুক্তিতে উৎপাদিত সার ও লিচেট ব্যবহারে আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। টিন বা খড়ের চালাসহ একটি পাশর্^ ছিদ্র বিশিষ্ট পাকা চৌবাচ্চা অথবা স্যানিটারী রিং দ্বারা বানানো হাউজে ট্রাইকো কম্পোস্ট তৈরি করতে হয়। এতে গোবর-২৮%, মুরগির বিষ্ঠা-৩৬%, সবজির উচ্ছিটাংশ-৫%, কচুরিপানা-২৫%, কাঠের গুঁড়া-৩%, নিমপাতা-১% ও চিটাগুড়-২% এই অনুপাতে মিশ্রণ তৈরি করা হয়। একটন মিশ্রণ পঁচাতে ৫০০মিলি ট্রাইকো ড্রামা অনুজীব মিশাতে হয়। এতে ৪০ থেকে ৪৫দিনের মধ্যেই জৈব পদার্থ পঁচে ট্রাইকো কম্পোস্ট সার উৎপাদিত হয় ও লিচেট পাওয়া যায়।
খামা গ্রামের কৃষক নিজাম উদ্দিন বলেন, কৃষি বিভাগের পরামর্শে ট্রাইকো কম্পোস্ট সার উৎপাদন শুরু করি। আমার দুটি চেম্বার হতে প্রথমবারে ২০লিটার লিচেট সংগ্রহ করি। যা জমিতে ব্যবহার করে ভাল ফলন পেয়েছি। ফলন ভাল হওয়ায় অন্যান্য কৃষকরোও আমার কাছ থেকে ট্রাইকো কম্পোস্ট সার ও লিচেট কিনে নিয়ে তাদের জমিতে ব্যবহার করছেন।
আংগিয়াদী গ্রামের কৃষক নূরুল ইসলাম জানান, পানের বরজে ট্রাইকো লিচেট ব্যবহার করে পানের পচন রোধ করা সম্ভব হয়েছে। এতে পানের ফলনও বেশ ভাল হয়েছে। যা বাজারে ভালো দরে বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছি।
আংগিয়াদী ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ হামিমুল হক সোহাগ বলেন, ট্রাইকো কম্পোস্ট উৎপাদনে কৃষক দুইভাবে লাভবান হচ্ছেন। প্রথমত এ সার জমিতে ব্যবহার করে কৃষকেরা ভাল ফলন পাচ্ছেন। অপরদিকে ট্রাইকো লিচেট ব্যবহার করে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি রোগবালাই দমনে তা ব্যবহৃত হচ্ছে। এতে কৃষকদের রোগবালাই দমনে কীটনাশক ব্যবহার করতে হচ্ছে না।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো.সাইফুল হাসান আলামিন বলেন, এনএটিপি-২ প্রকল্পের আওতায় সিআইজিভুক্ত কৃষকদের ট্রাইকো কম্পোস্ট উৎপাদন প্রর্দশনী দেওয়া হয়েছে। তা থেকে উৎপাদিত সার ও লিচেট ব্যবহার করে কৃষকেরা লাভবান হচ্ছেন। এতে অন্যান্য কৃষকদের মধ্যেও ব্যাপক আগ্রহ দেখা দিয়েছে। তাই ট্রাইকো কম্পোস্ট উৎপাদন ও লিচেট ব্যবহারে কৃষকদের পর্যাপ্ত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।