Wednesday , April 2 2025

উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য না পাওয়াতে আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষক

চট্টগ্রাম সংবাদদাতা: সরকার খাদ্য উৎপাদনে সফলতা দাবি করলেও প্রতি বছর কৃষক কোন না কোন কৃষি পণ্যের ন্যায্য মূল্য পায় না, যার কারণে কৃষকরা রাস্তায় আলু, টমেটো, পেঁয়াজ, ধান, দুধ ফেলে প্রতিবাদ জানায়। আর ঐ বছর এ শস্য উৎপাদনে কৃষক আগ্রহ হারায়। ফলশ্রুতিতে খাদ্য সংকট তৈরি হয়। আর দেশ খাদ্য আমদানি নির্ভর হয়ে যান। এ সুযোগে কিছু খাদ্য ব্যবসায়ী বিদেশ থেকে খাদ্য-শস্য আমদানিতে জটিলতা তৈরী করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে জনগণের পকেট কাটে।

মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) নগরীর ব্র্যাক লানিং সেন্টারে খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ এর চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রতিনিধি সভায় উপরোক্ত মত প্রকাশ করা হয়। খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় পর্ষদের সদস্য এস এম নাজের হোসাইনের সভাপতিত্বে সভায় মুখ্য আলোচক ছিলেন খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ’র সাধারণ সম্পাদক মহসিন আলী। বিশেষ অতিথি ছিলেন চিটাগাং ভেটেরিনারী অ্যান্ড অ্যানিমেল সাইন্স ইউনিভার্সিটির খাদ্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফ্যাকাল্টির ডীন প্রফেসর ড. জান্নাতারা খাতুন, সরকারী মহসিন কলেজের অধ্যাপক ইদ্রিস আলী, সিভয়েস২৪ডটকমের সম্পাদক এম নাসিরুল হক। খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ চট্টগ্রামের সাধারন সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরীর সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশনেন চিটাগাং ভেটেরিনারী অ্যান্ড অ্যানিমেল সাইন্স ইউনিভার্সিটির  এপ্লাইড ফুড সাইন্স অ্যান্ড ন্উিট্রিশনের প্রধান অধ্যাপক আলতাফ হোসেন, খাদ্য অধিকার বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলা কমিটির আলহাজ্ব আবদুল মান্নান, লিটন চৌধুরী, সায়েরা বেগম, নুরুল হক, সেলিম সাজ্জাদ, কুমিল্লার কোষাধ্যক্ষ নাজনীন আক্তার, বিবাড়ীয়া জেলা কমিটির সাধারন সম্পাদক এস এম শফিকুল ইসলাম, চাঁদপুরের মোহাম্মদ সাদেক সফিউল্লাহ, রাঙ্গামাটির শিমুল চাকমা, ফেনীর এ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম নান্টু, লক্ষ্নীপুরের শাহজাহান কামাল, ককসবাজারের অধ্যাপক আনোয়ারুল হক, বান্দাবানের সুমিত তাংচাঙ্গিয়া  প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, দেশে আয় ও সম্পদের বৈষম্যের ব্যাপকতা ক্রমেই বেড়েই চলেছে। ধনী পরিবারের আয় বৃদ্ধির কারণে শীর্ষ ১০ ভাগ মানুষ দেশের ৩৮ শতাংশ সম্পদের মালিক। অপরদিকে, নিম্ন অবস্থানকারী ১০ শতাংশ অতি দরিদ্র জনগোষ্ঠী দেশের মাত্র ১ শতাংশ সম্পদের মালিক। ২০১২ সাল থেকে বিগত ৫ বছরে দেশে ধনীর সংখ্যা বেড়েছে গড়ে ১৭% হারে। এ হার যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান, ভারতসহ ৭৫টি বড় অর্থনীতির দেশের চেয়ে বেশি।

তাঁরা বলেন, বর্তমান সরকার ও বিভিন্ন জাতীয়-আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার উদ্যোগের কারণে দেশে খাদ্য নিরাপত্তায় ব্যাপক অগ্রগতি সাধিত হলেও নিরাপদ খাদ্যের বেলায় মারাত্মক হুমকিতে আছে। খাদ্য উৎপাদন ও বিপনণে বহুজাতিক কোম্পানী গুলির ক্রমাগত একছত্র আধিপত্য সবার জন্য খাদ্য নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। আর সে কারনে বিগত বিশ বছরে দেশে খাদ্যের মুল্য বৃদ্ধি পেয়েছে দ্বিগুনেরও অনেক বেশি, মোটা চালের দাম বিগত ১ বছরে দ্বিগুনেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। অথচ মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের মতো উন্নত দেশগুলিতে খাদ্যের মূল্য সেভাবে বাড়েনি। অন্যদিকে প্রকৃত কৃষক তার উৎপাদিত খাদ্য পণ্যের ন্যায্য মুল্য পাচ্ছে না, যা মধ্যস্বত্বভোগী ও ফাড়িয়ারা এবং খাদ্য ব্যবসবায়ীরাই সিংহভাগ হাতিয়ে নিচ্ছেন। ফলে দেশীয় কৃষক প্রতিবছরই লোকসান গুনতে বাধ্য হচ্ছেন। সেকারনেই সবার জন্য খাদ্য অধিকার আইন প্রণয়ন ও নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা প্রদানে রাস্ট্রকে বাধ্য করতে ব্যাপক সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার বিকল্প নেই। প্রতিনিধি সভায় চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলার ৩২ জন অংশগ্রহনকারী অংশ নেন।

This post has already been read 3958 times!

Check Also

আমদানি ও রপ্তানি প্রক্রিয়া সহজীকরণে DLS e-Trade Portal চালু

নিজস্ব প্রতিবেদক: আমদানি ও রপ্তানি প্রক্রিয়াকে আরও সহজ ও কার্যকর করতে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর (DLS)  চালু …