মো. খোরশেদ আলম জুয়েল: ভ্যাপসা গরমে হঠাৎ এক পশলা বৃষ্টি। এমন সময় বৃষ্টি কার না ভালো লাগে বলেন? প্রেমিক-প্রেমিকা, কপোত-কপোতীর জন্য এ যেন সোনায় সোহাগা। তবে তা যদি প্রাত্যহ হয় তবে, বৃষ্টি নামক সুখের মিষ্টি তখন তেতো হয়ে যায়। ওদিকে রোদ-বৃষ্টির লুকোচুরি আবহাওয়ায় ফার্মের মুরগীগুলো যেন বেকে বসেছিল, কমিয়ে দিয়েছে ডিমপাড়া, কমেছে উৎপাদন। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে লেয়ার খামারিদের (ডিমপাড়া মুরগী) সাথে কথা বলে এমনই তথ্য পাওয়া গেছে।
অন্যদিকে গেল সপ্তাহে টানা কয়েকদিন বৃষ্টিতে বেড়েছে ডিমের দাম। খামারিদের মতে, উৎপাদন কমে যাওয়া এর অন্যতম কারণ বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে গাজীপুর জেলার মাওনাতে অবস্থিত মেসার্স আজিরন পোলট্রি ফার্মের মালিক মো. তোফাজ্জল হোসেন –এর সাথে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তিনি জানান, টানা ভ্যাপসা গরমে হঠাৎ বৃষ্টি হওয়াতে তার ফার্মের ডিমের উৎপাদন প্রায় ১০-১২% পর্যন্ত কমে গেছে। তার খামারে লেয়ার মুরগীর সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার। আগে যেখানে দৈনিক প্রায় ২৭ হাজারের মতো ডিম সংগ্রহ করতেন সেখানে বর্তমানে তা নেমে এসেছে ২২-২৪ হাজারে। আবহাওয়ার হঠাৎ বৈরী আচরন, ঠিকমতো বিদ্যু না থাকাকে এজন্য দায়ী বলে মনে করছেন তিনি।
কিশোরগঞ্জ জেলার তারাপাশা এলাকার হক পোলট্রি ফার্মের মালিক এবং পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশন –এর জেলা সভাপতি একে ফজলুল হক –এর সাথেও কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তিনি জানান, তার খামারেও ডিমের উৎপাদন হঠাৎ কমে গেছে। তার খামারে প্রায় ১০ হাজার লেয়ার মুরগী রয়েছে এবং সেখান থেকে প্রতিদিন এখন ডিম পাওয়া যাচ্ছে প্রায় ৭৮০০ থেকে ৮০০০ হাজার পিস। আগে দৈনিক পেতেন প্রায় ৯ হাজার। অর্থাৎ উৎপাদন ১০-১২% কমে ৭৮-৮০% -এ নেমে এসেছে। এর কারণ জানতে চাইলে তিনি আবহাওয়ার হঠাৎ বৈরী আচরনকে দায়ী করলেন।
তিনি বলেন, খুব বেশি গরমে যেমন মুরগীর ক্ষতি হয় তেমনি হঠাৎ করে ঠান্ডা পড়ে গেলেও হয়। ইদানিং আবহাওয়া স্থির আচরন করছেনা। হঠাৎ গরম, হঠাৎ ঠান্ডা। এর ফলে লেয়ার মুরগীর ডিম উৎপাদন যেমন কমছে তেমনি মাইকোপ্লাজমা, করাইজার মতো ঠান্ডাজনিত রোগ রোগবালাই দেখা দিচ্ছে। উৎপাদন কমার পাশাপাশি কিছু মুরগি মারাও যাচ্ছে।
এ সম্পর্কে বাংলাদেশ পোল্ট্রি খামার রক্ষা জাতীয় পরিষদ(বিপিকেআরজেপি) -এর সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মহসিন বলেন, প্রায় এক সপ্তাহের অধিক সময়ে টানা বৃষ্টি ও ঝড়ো আবহাওয়ায় লেয়ার খামারগুলোতে হঠাৎ করেই ডিম উৎপাদন কমে গিয়েছে। কোন কোন খামারে ৮-১২% পর্যন্ত ডিম উৎপাদন কমে গিয়েছে। শুধু আমার এলাকা (গাজীপুর) নয়, সারাদেশে যেখানেই এমন আবহাওয়া বিরাজ করছে সেখানকার খামারগুলোতে এমন হয়েছে।
বৃষ্টিতে ডিমের উৎপাদন কমে যাওয়ার কারণ কী জানতে চাইলে খন্দকার মহসিন বলেন, ডিমপাড়া মুরগীর হরমোনাল উদ্দীপনের আলোর প্রয়োজন হয়। রাতের বেলাতেও কৃত্রিম আলোর প্রয়োজন পড়ে। কাঙ্খিত আলো না পেলে মুরগীর উক্ত উদ্দীপন হয়না বা কমে যায়। ঝড়ো আবহাওয়ায় দিনের আলো যেমন থাকেনা তেমনি দিন-রাত বিদ্যুৎ থাকেনা। ফলে ডিমের হঠাৎ উৎপাদন কমে গেছে। কারণ, মুরগীর হরমোনাল উদ্দীপনের সাথে আলোর সম্পর্ক রয়েছে।
তিনি বলেন, পল্লী বিদ্যুৎ অধ্যুষিত অঞ্চলের খামারগুলোতে দেখা যায় সামান্য বৃষ্টি হলেই বিদ্যুৎ
থাকেনা। ফলে ফার্মগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অন্যদিকে বৃষ্টির কারণে অনেক খামারের মুরগী ভিজে যায়। ফলে ডিম উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
বৃষ্টি থেকে গেলেই কি ডিম উৎপাদন বাড়বে এমন প্রশ্ন করা হলে খন্দকার মহসিন এগ্রিনিউজ২৪.কম কে জানান, মুরগীর হরমোনাল উদ্দীপন হঠাৎ কমে গেলে আবহাওয়া ভালো থাকলেও উক্ত ধকল কাটিয়ে উঠে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে ৩-৪ সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগে।