মো. আরিফুল ইসলাম (বাকৃবি) : দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সেরা কৃষি বিদ্যাপীঠ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন। আবাসিক এ বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছেন প্রায় পাঁচ শতাধিক শিক্ষক ও দেড় হাজারের অধিক কর্মকর্তা কর্মচারী। সব মিলিয়ে প্রায় দশ হাজার লোকের বসবাস এ ক্যাম্পাসে। বাংলাদেশের প্রথম ও প্রধান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হওয়া সত্ত্বেও এখানে রয়েছে নানাবিধ সমস্যা। এসব সমস্যার অন্যতম গণপরিবহন ব্যবস্থা। বাকৃবির গণপরিবহন ব্যবস্থায় চলছে নানা অনিয়ম। বাস সংকট, পুরোনো সূচিতে বাস চলাচল, শিক্ষার্থীদের বাসে তদারকির অভাব, যথাযথ নিয়ম-কানুন না থাকায় প্রায় প্রতিদিনই অভিযোগ থাকছে শিক্ষার্থীদের। শিক্ষার্থীরা এসব বিষয় নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছে দাবি জানালেও কোনো উদ্যোগ নেয়নি প্রশাসন।
পরিবহন শাখাসূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের জন্য রয়েছে চারটি মিনি বাস। যার একটি এসি। অন্যদিকে পাঁচ হাজারের অধিক শিক্ষার্থী, দেড় হাজারের অধিক কর্মচারী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরতদের পোষ্যদের শহরে-ক্যাম্পাসে পরিবহনের জন্য রয়েছে মাত্র চারটি বাস। আর একটি মিনি বাস রয়েছে ফার্মে যাতায়াতের জন্য।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের জন্য আলাদা বাস সার্ভিস চালু থাকলেও কর্মচারীদের জন্য কোনো আলাদা বাস সার্ভিস নেই। আর তাই শিক্ষার্থীদের বাসেই যাতায়াত করেন তারা। এর ফলে বাসের বেশিরভাগ সীটই বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীদের দখলেই চলে যায় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বাসের ভেতর দাঁড়িয়ে থেকে শহরে যেতে হয়। এমনকি ছাত্রীদেরকেও বেশিরভাগ সময় দাঁড়িয়ে যেতে দেখা যায় যখন কর্মচারীরা বাসের সীটে বসে থাকেন। আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী বাড়লেও সেই অনুপাতে বাড়েনি বাসের সংখ্যা। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকেই। বাসে চড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে শহরে যাতায়াতের সময় প্রতিনিয়ত শিক্ষার্থীদের চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হয়। বিশেষ করে বিকেলের বাসগুলোতে দেখা যায় প্রচ- ভিড়। ভিড় ঠেলে অনেক শিক্ষার্থী বাসে উঠতেই পারেন না। ছাত্রীদের জন্য ব্যাপারটি খুবই কষ্টসাধ্য।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, কর্মচারীরা বাসের ভেতরে বসে থাকেন আর মেয়েদেরকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শহরে যেতে হয়। অনেক কর্মচারী আবার ২-৫ মিনিটের রাস্তা পারাপারের জন্যও বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে সীট দখল করে বসে যায়। অধিকাংশ মেয়েরা তাদের হলের সামনে থেকে বাসে উঠে বিধায় তারা কোনো সীট না পেয়ে বাসে দাঁড়িয়ে যাতায়াত করে। ফলে অনেক শিক্ষার্থীকেই বাদুড় ঝোলা হয়ে যাতায়াত করতে হয়। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বারবার অবহিত করা হলেও কাজ হয়নি। এ সমস্যা দ্রুত সমাধান করা না হলে কোনো শিক্ষার্থীকে যাতায়াতের সময় দুর্ঘটনার কবলে পড়ার আশংকা করছেন অনেকেই।
অন্যদিকে বহিরাগত ও ক্যাম্পাসের আশেপাশের স্কুল-কলেজ পড়–য়া ছেলে মেয়েরা নিয়মিত বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে যাতায়াত করেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এসব বিষয়ে কখনো কোন ব্যবস্থা নেয়নি।
শিক্ষার্থীরা আরও অভিযোগ করেন, বাসে বহিরাগতদের জন্য আমরা সিট পাই না। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থাকবে। কর্মচারীদের জন্য আলাদা বাস থাকবে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় হতে সকাল সাড়ে ৬ টায় প্রথম বাসটি ময়মনসিংহ শহরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় এবং রাত ৯ টায় সর্বশেষ বাসটি পুনরায় ফিরে আসে। এর মাঝে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসগুলো মোট ১৬ বার আসা যাওয়া করলেও তাদের অনেকগুলো সূচিই বিতর্কিত। এতদিনেও কেনো সূচিতে পরিবর্তন করা হচ্ছে না সে বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের সুবিধার জন্য বিকেলে বাসের সংখ্যা বৃদ্ধি করার দাবি করেছেন শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন শাখার পরিচালক প্রফেসর ড. সুবাশ চন্দ্র দাস বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে এ মুহূর্তে বাস সংকট রয়েছে। সামনের ডেলটা প্রকল্পের অর্থ ছাড় পেলে আরও চারটি বাস ক্রয় করা হবে। আশা করি, তখন আর এ ভোগান্তি থাকবে না। আর বাসে বহিরাগতদের বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে তথ্যগত বিভ্রাট রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, শিক্ষক- কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পোষ্যদের বাস কার্ড করার একটি আইন রয়েছে। ফলে বাসে তারা যাতায়াত করেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মো. ছোলায়মান আলী ফকির বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের দাবি দাওয়ার বিষয়ে সামনে সপ্তাহে আলোচনায় বসবো। আশাকরি সমস্যার দ্রুত সমাধান হবে।