ফকির শহিদুল ইসলাম(খুলনা) সুন্দরবনের দুবলার চরের আলোরকোলে আগামী ১০ নভেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী তিনদিনের রাসমেলা। দেশি-বিদেশি পুন্যার্থী, ভক্ত ও পর্যটকদের স্বাগত জানাতে প্রতি বছরের মতো এবারও আয়োজন করা হয়েছে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের। তিনদিনব্যাপী রাস উৎসব উপলে ইতিমধ্যেই মন্দির নির্মাণসহ সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে মেলা উদযাপন কমিটি। এদিকে রাস উৎসবকে কেন্দ্র করে সংঘবদ্ধ হরিণ শিকারী চক্রও তৎপর হয়ে উঠেছে। রাস মেলায় তীর্থযাত্রী বা দর্শণার্থীর আড়ালে এসব চোরা শিকারীর দল হরিণ নিধনের ব্যাপক পরিকল্পনা নিয়েছে। এ চক্রের অনেক সদস্য ইতিমধ্যে সুন্দরবনের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেছে। অন্যরা সুবিধা মতো নানা কৌশলে বনের অভ্যন্তরে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। তবে রাস উৎসবকে ঘিরে সুন্দরবনের বাঘ-হরিণসহ বন্যপ্রাণী শিকার ও পরিবেশের তিরোধে এবং যাতায়াতে আটটি রুট নির্ধারণসহ চারদফা সতর্কতা জারি করেছে বনবিভাগ।
রাস উৎসবের আয়োজক কমিটির সভাপতি কামাল উদ্দিন আহম্মেদ জানান, ধর্মভীরু হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা দুবলার মেলায় মানত করে এবং বছরের এ সময় এসে মানতকারীরা আনুসঙ্গিক অনুষ্ঠানাদী সম্পন্ন করে থাকে। আবার কেউ কেউ জীবনের কৃত পাপ মোচন হবে ভেবে এ স্থানে আগমন করে এবং সমুদ্রের ঢেউয়ের মধ্যে স্নান করে পূত পবিত্র হতে দেখা যায়। এ সময় ঢেউ সেবনের মন্ত্রনাদী উচ্চারণ করে পাঠা ছাড়া, ফল ও মিষ্টি সাগরে নিক্ষেপ করতে দেখা যায় ভক্তদের। এ বছর ১০ থেকে ১২ নভেম্বর বর্ণাঢ্য রাস উৎসব উপলক্ষে মন্দির নির্মাণ, পুলিশ, র্যাব, কোস্টগার্ড প্রশাসনের সাথে সমন্বয় সভাসহ সব আয়োজনই এরমধ্যে সম্পন্ন করেছে রাস মেলা উদযাপন কমিটি। রাস উৎসবকে ঘিরে থাকছে ধর্মীয় পূজা-পার্বন, আলোচনা সভা, নৃত্যগীতি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও গ্রামীণ কুটির শিল্প মেলার ইত্যাদি’র আয়োজন। তিনদিনের এ রাসমেলায় হিন্দু-মুসলিমসহ সব ধর্মের পুণ্যার্থী আর দেশি-বিদেশি বিপুল সংখ্যক পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত হবে-সুন্দরবনের গহীনে দুবলারচরের আলোর কোলসহ আশপাশের এলাকাগুলো এমন প্রত্যাশা আয়োজকদের।
এদিকে, রাস উৎসবে পুণ্যার্থী ও পর্যটকদের যাতায়াতে আটটি রুট নির্ধারণসহ সুন্দরবনের প্রতিবেশ রায় সতর্ক ব্যবস্থা নিয়েছে বনবিভাগ। রাস উৎসবকে নির্বিঘ্নে করতে সমন্বিত কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসন।
আগামী ১২ নভেম্বর ভোরে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে দিনের প্রথম জোয়ারে বঙ্গোপসাগরের নোনা পানিতে পুণ্যস্নানের মধ্য দিয়ে শেষ হবে রাস উৎসব। আলোরকোলে রাস উৎসবে আগতদের যাতায়াতের জন্য সুন্দরবন বিভাগ ৮টি রুট নির্ধারণ করছে। প্রত্যেক পুণ্যার্থী ও দর্শনার্থীর তিনদিন সুন্দরবনে অবস্থানের জন্য ৫০ টাকা, নিবন্ধিত ট্রলার ২ শত টাকা এবং অনিবন্ধিত ট্রলারে ৮ শত টাকা রাজস্ব ধরা হয়েছে। পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান জানান, পুণ্যার্থী ও দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা এবং বন ও বন্যপ্রাণী রায় বন বিভাগের পাশাপাশি নৌবাহিনী, র্যাব, কোস্টগার্ড, পুলিশের পাশাপাশি বনরীরাও নিয়োজিত থাকবে। এছাড়া, কন্ট্রোলরুমে সার্বাক্ষনিক একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তদারকির দায়িত্বে থাকবেন। এবার রাস উৎসবের নিয়মাবলীতে একটু ভিন্নতা আনা হয়েছে। অন্যান্য বছরগুলোতে পুণ্যার্থীরা রাতের বেলায় রওনা হতো। কিন্তু এবার নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন কারণে ১০ নভেম্বর সকাল ৬ টা থেকেই যাত্রা শুরু হবে। তাছাড়া আলোরকোলে নারী পুণ্যার্থীদের পোশাক পরিবর্তনের জন্য আলাদা শেড ও পর্যাপ্ত টয়লেট তৈরি করা হয়েছে। তিন দিনের এ রাস মেলায় প্রশাসন, বন বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা রা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণের কথা রয়েছে।