অনিবন্ধিত খামারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। নিবন্ধনের আওতায় না এলে শীঘ্রই আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে । মুরগির বিষ্ঠা সরাসরি ভূট্টার ক্ষেতে ব্যবহার না করে কম্পোষ্ট সার তৈরির পর তা ব্যবহার করলে অনেক বেশি উপকার পাওয়া যাবে।
কথাগুলো বলছিলেন দিনাজপুরের জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. শাহিনুর আলম। গত ১১ নভেম্বর দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত নিরাপদ পোল্ট্রি পালন বিষয়ক কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন। বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাষ্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) এবং প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এ কর্মশালার সহযোগী প্রতিষ্ঠান আনোয়ার সিমেন্ট শীট।
তিনি বলেন, নিরাপদ খাদ্যের উৎপাদন নিশ্চিত করতে চায় সরকার। তাই খামারিদেরকেও এ বিষয়ে সহযোগিতা করতে হবে। নিবন্ধিত খামারিদের জন্য স্বল্পমূল্যে রোগ প্রতিষেধক টিকা ছাড়াও বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপনেও সহযোগিতা করছে সরকার।
ডা. মো. শাহিনু বলেন, খামারিরা যেন নিরোগ স্বাস্থ্যসম্মত বাচ্চা পান সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজন ছাড়া এন্টিবায়োটিক নয়; আর প্রয়োজন হলেও এন্টিবায়োটিকের দায়িত্বশীল ব্যবহার ও তার প্রত্যাহার কাল অবশ্যই মেনে চলতে হবে বলে জানান ডা. শাহিনুর।
তিনি বলেন, ধান-লিচুতে ভরপুর তার নাম দিনাজপুর। এক সময়ের এ প্রবাদ বাক্যটি পরিবর্তিত হতে চলেছে। “প্রাণিসম্পদে ভরপুর নাম তার দিনাজপুর”- এ বাক্যটিই এখন উচ্চারিত হচ্ছে মুখেমুখে এ জেলার পোল্ট্রি ও গবাদি পশু খামারিদের সফলতার কারণে।
ডা. শাহিনুর আলম জানান, ২০১১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী দিনাজপুরের লোকসংখ্যা ৩১,০৯,৬২৮ জন। এ জেলায় বর্তমানে লেয়ার খামারের সংখ্যা ৩৪১টি, ব্রয়লার ৮২৯টি, হাঁসের খামার ৪৩৭টি, প্যারেন্টস্টক খামার ১১টি, গ্রান্ড প্যারেন্টস্টক খামার ২টি, হ্যাচারী ১২টি, কোয়েল খামার ২৯টি, কবুতর খামার ৪৮৪টি, টার্কি খামার ১২৬টি, গাভীর খামার ১১২৯টি, গবাদিপশু হৃষ্টপুষ্ট খামার ৯২৬টি, মহিষের খামার ১১ টি, ছাগলের খামার ৫৯৯টি এবং ভেড়ার খামার ৩৩০টি। ডিমের বার্ষিক চাহিদা ৩২,৩৪,০১,৩১২টি, উৎপাদিত হয় ৩৪, ৪১,৩৭,৪১৯টি। মাংসের বার্ষিক চাহিদা ১৩৬,২০২ মেট্রিক টন (দৈনিক ১২০ গ্রাম), উৎপাদিত হচ্ছে ১৪০,৩৫৫ মে.টন (দৈনিক ১২৪ গ্রাম)।
ঘোড়াঘাট উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আব্দুস সামাদ বলেন, অসচেতনতা এবং ডিলারদের প্রতি অধিক নির্ভরশীলতার কারণে সাধারণ খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ডিলারের দোকানগুলো এখন একই সাথে ফিড, বাচ্চা এবং ঔষধ বিক্রি করছে- এটি কাম্য নয়। উপজেলা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ঘোড়াঘাট উপজেলায় সেপ্টেম্বর মাসে ডিমের উৎপাদন ছিল ৮২৫,২২৪ টি এবং অক্টোবরে ৬৭৪,৫৬৭ টি। মাংসের উৎপাদন ছিল যথাক্রমে ৯৮.২৮ ও ৯৫.৪৪ লাখ মে.টন।
ঔষধ ব্যবহারের আগে রেজিস্টার্ড ভ্যাটেরিনারি ডাক্তারদের পরামর্শ নেয়ার আহ্বান জানান বিপিআইসিসি’র সেক্রেটারি দেবাশিস নাগ।
তিনি বলেন, ভোক্তার জন্য নিরাপদ ডিম ও মুরগির মাংস নিশ্চিত করতে হবে, সেই সাথে প্রাণিজ এ আমিষ যেন সাশ্রয়ী মূল্যে উৎপাদন করা যায় সে বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে।
ওসমানপুরের খামারি রাহাত বলেন, শিক্ষাজীবন শেষ করে চাকুরির পেছনে না ছুটে তিনি পোল্ট্রি খামার করেছিলেন। শুরুতে লাভের মুখ দেখলেও এখন প্রায়ই লোকসানে পড়তে হচ্ছে। ১৩ বছর আগে যখন খামার শুরু করেছিলেন তখন ফিডের দাম ছিল ১২৫০ টাকা, আর এখন এক বস্তা ফিডের দাম প্রায় ২৪০০ টাকা।
তিনি বলেন, বিগত ১৩ বছরে উৎপাদন খরচ প্রায় দ্বিগুণ বাড়লেও মুরগির দাম প্রায় একই রয়ে গেছে। লোকসানের কারণে অনেক খামারিই ব্যবসা ছেড়ে দিচ্ছেন। তাই এ বিষয়ে সরকারের উদ্যোগ প্রয়োজন।
রাহাত বলেন, প্যারেন্টস্টক বাঁচাতে গিয়ে যেন সোনালী ব্রিডাররা অতিমাত্রায় এন্টিবায়োটিক ব্যবহার না করেন সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে কারণ আমার খামারের মুরগি আমার বাচ্চা খায়। সে যদি অসুস্থ হয় তবে আমার পকেট থেকেই টাকা খরচ করতে হবে। সাধারণ খামারিরা বলেন, নাভি কাঁচা রোগের কারণে সোনালী খামারিরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
খামারে জীবনিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার মাধ্যমে খামারিরা কিভাবে লাভবান হতে পারবেন সে সম্পর্কে আলোচনা করেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মাঝে উপস্থিত ছিলেন, ঘোড়াঘাট উপজেলার মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান শ্রীমতি রুশিনা সরেন, ২নং পালশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. কবিরুল ইসলাম, আনোয়ার সিমেন্ট শীটের পোল্ট্রি কনসালট্যান্ট ডা. অজিত কুমার দেবনাথ, ঘোড়াঘাট উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মোছা. রুমানা আকতার রোমি, বিপিআইসিসি’র যোগাযোগ ও মিডিয়া উপদেষ্টা মো. সাজ্জাদ হোসেন এবং অফিস এক্সিকিউটিভ আবু বকর। কর্মশালায় ঘোড়াঘাট উপজেলার ৬০ জন খামারি ও উদ্যোক্তা উপস্থিত ছিলেন।