ছোট-বড় সব ধরনের খামারকে প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে নিবন্ধিত হতে হবে। প্রাণিজ আমিষের উৎপাদন উৎসাহিত করার কারণে এতদিন সরকার কিছুটা নমনীয় থাকলেও, নিরাপদ ডিম ও মাংস উৎপাদনের স্বার্থে ধাপে ধাপে শক্ত অবস্থানে যাবে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর- এমন কথাই বললেন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাবৃন্দ। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাষ্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) পরিচালিত খামার জরিপে দেখা যাচ্ছে গাইবান্ধা সদর ও কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলায় নিবন্ধিত খামারের সংখ্যা যত সামান্য। এতে সেবা দানের ক্ষেত্রে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। বিশেষ করে সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত টিকা চাহিদা মত সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছেনা। শুধু তাই নয় এর ফলে উপজেলা দু’টিতে মোট খামারের সংখ্যা, ডিম ও মাংস উৎপাদনের সক্ষমতা, উৎপাদনের পরিমান প্রভৃতি ক্ষেত্রেও তথ্য ঘাটতি রয়ে যাচ্ছে। আর সে কারণেই স্বল্পতম সময়ের মধ্যেই সব ধরনের খামার, হ্যাচারি, ফিড মিল, ফিডের ডিলারের নিবন্ধন জরুরি বলে মনে করছেন তাঁরা।
গত ১২ নভেম্বর গাইবান্ধা জেলা সদরে এবং গত ১৩ নভেম্বর কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলায় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাষ্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) আয়োজিত খামারি প্রশিক্ষণ কর্মশালায় এ বিষয়টিই জোরালোভাবে উচ্চারিত হয়েছে। কর্মশালা দু’টি আয়োজনে সহায়তা প্রদান করে আনোয়ার সিমেন্ট শীট লি.।
গাইবান্ধার লাইভস্টক রিসার্চ এন্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের প্রিন্সিপাল কৃষিবিদ জনাব আব্দুল মান্নান বলেন, পোল্ট্রি ও প্রাণিসম্পদ বিষয়ে ডিপ্লোমা কোর্স চালু করলেও পড়াশুনার চাপে অনেকেই মাঝপথে চলে যায়। তাছাড়া রোগজীবানু পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুবিধা থাকা সত্তে¡ও খুব কম সংখ্য খামারিই তাঁদের কাছে আসেন। তবে খামারিরা অভিযোগ করেন পরীক্ষার ফলাফল পেতে যে সময় ব্যয় হয় তাতে চিকিৎসা দেয়ার আগেই মুরগি মারা যায় কিংবা মুরগি বিক্রির সময় হয়ে যায়- সে কারণেই তাঁরা এ বিষয়ে খুব বেশি আগ্রহী হন না।
বিপিআইসিসি’র সেক্রেটারি দেবাশিস নাগ বলেন- আন্তরিকতা দেখাতে গিয়ে খামারিরা অনেক সময় নিজের অজান্তেই রোগ-জীবানুকে স্বাগত জানান, নিজের সর্বনাশ নিজেই ডেকে আনেন। রোগ জীবাণু যে কোন বাহকের মাধ্যমেই খামারে প্রবেশ করতে পারে। তাই প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা না মেনে কাউকেই খামারে প্রবেশ করতে দেয়া উচিত নয়।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আব্দুল হাই সরকার বলেন, অসুখ না হওয়া সত্বেও ডিলার কিংবা অন্য কারো পরামর্শে খামারিরা অনাবশ্যক ঔষধ খাওয়াচ্ছেন। শীত আসছে অতিথি পাখিরা আমাদের দেশে আসছে। এরা রোগ জীবানুর বাহক। কাজেই সতর্ক থাকতে হবে। খামারের প্রবেশ মুখে ফুট বাথ স্থাপন ও তার সঠিক ব্যবহারের যৌক্তিকতা তুলে ধরেন ডা. আব্দুল হাই। তিনি জানান কুড়িগ্রাম জেলা গবাদি পশু উৎপাদনে স্বাবলম্বী হলেও পোল্ট্রি উৎপাদনে এখনও কিছুটা পিছিয়ে।
নাগেশ্বরীর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. রফিকুল আলম জানান এ উপজেলায় ১৯১ টি ব্রয়লার ও ৮টি লেয়ার খামার আছে যার মধ্যে মাত্র ৬টি খামার নিবন্ধিত।
বিপিআইসিসি’র যোগাযোগ ও মিডিয়া উপদেষ্টা মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, খামারিদের স্বার্থ সংরক্ষণ ও সার্বিকভাবে পোল্ট্রি শিল্পের উন্নয়নে কাজ করছে বিপিআইসিসি। খামারিদের বহু কাঙ্খিত পোল্ট্রি বীমার বিষয়ে সরকার ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলেও জানান তিনি।
খামারি প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অন্যান্যের মাঝে উপস্থিত ছিলেন গাইবান্ধা সদরের উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. হীরা মিয়া, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ও আনোয়ার সিমেন্ট শীট লি. এর কনসালট্যান্ট ডা, মোছাদ্দেক হোসেন, আনোয়ার সিমেন্ট শীট লি. এর পোল্ট্রি কনসালট্যান্ট ডা. অজিত কুমার দেবনাথ। কর্মশালা দু’টিতে মোট ১৫০ জন খামারি অংশগ্রহণ করেন।