নিজস্ব প্রতিবেদক: খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, ব্যবসায়ীদের সেবার মনোভাব নিয়ে ও নীতি-নৈতিকতার মাধ্যমে পরিমিত লাভের কথা চিন্তা করে ব্যবসা করতে হবে। সহনশীল ও গ্রহণযোগ্য বাজার দর বজায় রেখে পণ্য বিক্রি করার আহবান জানা তিনি।
রবিবার (২৪ নভেম্বর) দুপুরে এফবিসিসিআই কর্তৃক রাজধানীর মতিঝিলে ফেডারেশন ভবনে আয়োজিত ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ‘নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রীর বছরব্যাপী চাহিদা, উৎপাদন, আমদানি, মজুদ ব্যবস্থা, সরবরাহ ব্যবস্থাপনা ও যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণের প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, যেসব ব্যবসায়ী ভেজাল দিয়ে ও কারসাজি করে লাভবান হন; তিনিও অন্য পণ্যের একজন ভোক্তা। তখন ভোক্তা হিসেবে তিনিও ভেজাল এবং কারসাজির মাধ্যমে প্রতারিত হন। দেশে চালের যথেষ্ট মজুদ আছে এবং চালের মূল্য বৃদ্ধির কোনো কারণ নেই বলেও উল্লেখ করেন তিনি। খাদ্যমন্ত্রী বলেন, কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে। কিন্তু কৃষকের কথা কেউ চিন্তা করে না। এতো কষ্ট করে কৃষক ফসল ফলায়; কিন্তু সে তার ন্যায্য মূল্য পায় না।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, মানুষের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন হয়েছে, এখন সবাই সরু চাল খেতে পছন্দ করে। এ কারণে সরু চালের উপর একটু চাপ বেড়েছে। তাই চালের দাম মাঝে দু-এক টাকা বাড়লেও চাল মিল মালিক এবং ব্যবসায়ীদের সাথে বৈঠক করা হয়েছে। এখন চালের দাম আবার একই রকম আছে। তিনি বলেন, দেশে যথেষ্ট খাদ্য মজুদ আছে; চালের দাম বৃদ্ধির কোনো কারণ নেই।
মন্ত্রী বলেন, আমরা সবাই মিলে সম্মিলিতভাবে ও আন্তরিকতার সাথে, নীতি-নৈতিকতার সাথে কাজ করতে পারলে দেশকে শিগগিরই সোনার বাংলায় পরিণত করতে পারবো।
এ সময় বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ২৪ থেকে ২৬ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে বিদেশ থেকে আমদানি করা হয় ৯ থেকে ১১ লাখ মেট্রিক টন। আমদানিকৃত পেঁয়াজের মধ্যে ভারত থেকে আমদানি করা হয় শতকরা ৯৭ থেকে ৯৮ ভাগ। তিনি বলেন, যেদিন ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করার ঘোষণা দেয়; তার পরদিনই পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়। কিন্তু যে পরিমাণ পেঁয়াজ দেশে ছিল; তা দিয়ে ব্যবসায়ীরা আগের দামেই আরো কয়েকদিন বিক্রি করতে পারতেন। যদি তা করতেন; তাহলে বুঝতাম তারা নীতি-নৈতিকতা সাথে ব্যবসা করছেন।
তিনি জানান, মিসর ও তুরস্ক থেকে পেঁয়াজ আনা হচ্ছে বিমানে করে। পাশের দেশ মিয়ানমার থেকেও পেঁয়াজ আনা হচ্ছে। জাহাজে করে আনা পেঁয়াজও অতি শীঘ্র চলে আসবে। পাশাপাশি ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে দেশীয় পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করবে। পেঁয়াজের দাম ইতিমধ্যে কমে গেছে এবং খুব তাড়াতাড়ি পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসবে।
এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, সরকারি-বেসরকারি যৌথভাবে বাংলাদেশের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের চাহিদা এবং উৎপাদন কতো তার সঠিক পরিসংখ্যান বের করে বিদ্যমান সমস্যাসমূহ চিহ্নিত করে তার সঠিক সমাধান বের করতে হবে। ভবিষ্যতে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম যেন এমন অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি না পায়, দ্রব্যমূল্য যেন সহনশীল পর্যায়ে থাকে; এসব বিষয় নিয়ে সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ভবিষ্যতে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস যেমন সয়াবিন তেল ও লবণ নিয়ে কোন কারসাজি করলে তাকে ধরা যাবে। সব ধরনের তথ্য-উপাত্ত আমাদের কাছে আছে।
খাদ্য সচিব, বাণিজ্য সচিব, শিল্প সচিব, প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান, এফবিসিসিআইয়ের বিভিন্ন শ্রেণীর নেতৃবৃন্দ এবং ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।