ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা) : খুলনায় জ্বালানি তেল বিক্রয়ের প্রচলিত কমিশন বৃদ্ধিসহ ১৫ দফার দাবিতে কর্মবিরতি শুরু হয়েছে। জ্বালানি তেল বিক্রির কমিশন এবং ট্রাংকলরি ভাড়া বাড়ানোসহ ১৫ দফা দাবি বাস্তবায়নে ৩০ নভেম্বও পর্যন্ত সময় বেধে দিয়েছিল পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন ও ট্র্যাংকলরি মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। সংগঠনের বেঁধে দেয়া নির্ধারিত সময়ে ১৫ দফার কোন সমাধান পাওয়া যায়নি বলেই পেট্রোল পাম্পে চলছে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট।
রবিবার (১ ডিসেম্বর) ভোর ৬টা থেকে এ কর্মবিরতি শুরু করেন ট্যাঙ্কলরি মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ, জ্বালানি তেল পরিবেশক সমিতি ও পেট্রোল পাম্প মালিক সমিতিসহ জ্বালানি ব্যবসায়ীরা। ধর্মঘটে খুলনার দৌলতপুর ও খালিশপুরে পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা তিনটি তেল ডিপোর তেল উত্তোলন ও বিপণন বন্ধ রেখে এ কর্মসূচি পালন করছেন। ফলে খুলনাসহ ১৫ জেলায় তেল সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। আর এ সুযোগে কিছু অসাধু খুচরা পেট্রোল ও ডিজেল ব্যবসায়ী লিটারে ১০ থেকে ১৪ টাকা বাড়িয়ে পেট্রোল ও ডিজেল বিক্রি করছেন। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন মোটরসাইকেল ও যাত্রীবাহী বাসসহ বিভিন্ন ব্যাক্তিগত যানবাহন মালিক ও চালকরা।
সেনেরবাজারের ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালক আজমল বলেন, মোটরসাইকেলে যাত্রী উঠিয়ে পাম্পে এসে দেখি তেল বিক্রি বন্ধ। বাধ্য হয়ে যাত্রী নামিয়ে ফিরে এসেছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক খুচরা তেল বিক্রেতা জানান, পাম্পগুলোতে তেল বিক্রি বন্ধ থাকার কারণে খুচরা দোকানগুলোতে মোটরসাইকেলে তেল নিতে হুমরি খেয়ে পড়ছে মটরসাইকেল চালকরা, যাত্রীবাহী মাহেন্দ্র ও বাসসহ বিভিন্ন যানবাহনের চালকরা ভিড় করছে। এ সুযোগে খুচরা তেল বিক্রেতা তারা পেট্রোল প্রতি লিটারে ১৪ টাকা ও ডিজেলে ১০ টাকা বেশি দাম নিচ্ছে। এরপরও নগরী ও জেলার অধিকাংশ খুচরা তেলের দোকানগুলোতে তেল পাচ্ছে না চালকরা।
নগরীর বিভিন্ন পেট্রোল পাম্প ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি পাম্পের সামনে মোটা রশি ও তেলের ড্রাম দিয়ে ব্যারিকেড দিয়ে রাখা হয়েছে। সেখানে কোনো যানবাহন ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। পাম্পগুলোতে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা থাকলেও তারা তেল বিক্রি করছে না। এর ফলে বিপাকে পড়েছেন খুলনা মহানগরীসহ এ অঞ্চলের ব্যক্তিগত ও গণপরিবহণ মালিকরা। রাস্তায় কমেছে যান চলাচল। ফিলিং স্টেশন মালিকরা জানান, কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভোর ৬টা থেকে তারা ধর্মঘটে গেছেন। এরপর থেকে ফিলিং স্টেশন থেকে জ্বালানি তেল সরবরাহ বন্ধ করা হয়েছে। ফিলিং স্টেশন মালিকদের সঙ্গে আন্দোলনে আছেন ট্রাংকলরি মালিক ও শ্রমিকরা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ ধর্মঘট চলবে বলে জানান সংশ্লিষ্ট সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা।
বাংলাদেশ পেট্রোল পাম্প ডিলার ডিস্ট্রিবিউটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম-মহাসচিব ও খুলনা বিভাগীয় ট্যাংকলরি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোঃ ফরহাদ হোসেন জানান, আমাদেও ১৫দফা দাবিগুলো যৌক্তিক। দাবি বাস্তবায়নে আমরা সরকারকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিলাম। কিন্তু ওই সময়ের মধ্যে দাবি বাস্তবায়নে কোন পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়নি। ফলে পূর্বঘোষণা অনুযায়ী আজ ১ ডিসেম্বর থেকে খুলনা, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে ধর্মঘট শুরু হয়েছে। ধর্মঘটের ফলে এই অঞ্চলের সবগুলো ডিপো থেকে জ্বালানি তেল উত্তোলন, পরিবহন ও বিপণন কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে।
তিনি আরো জানান,জ্বালানি তেল বিক্রির প্রচলিত কমিশন কমপক্ষে সাড়ে সাত শতাংশ প্রদান, জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীরা কমিশন এজেন্ট নাকি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বিষয়টি সুনির্দিষ্টকরণ, প্রিমিয়াম পরিশোধ সাপেক্ষে ট্যাংকলরি শ্রমিকদের ৫ লাখ টাকা দুর্ঘটনা বীমা প্রথা প্রণয়ন, ট্যাংকলরির ভাড়া বৃদ্ধি, পেট্রোল পাম্পের জন্য কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের লাইসেন্স গ্রহণ বাতিল, পেট্রোল পাম্পের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের লাইসেন্স গ্রহণ বাতিল, পেট্রোল পাম্পে অতিরিক্ত পাবলিক টয়লেট, জেনারেল স্টোর ও ক্লিনার নিয়োগের বিধান বাতিল, সড়ক ও জনপথ বিভাগ পেট্রোল পাম্পের প্রবেশদ্বারের ভূমির জন্য ইজারা গ্রহণের প্রথা বাতিল, ট্রেড লাইসেন্স ও বিস্ফোরক লাইসেন্স ব্যতিত অন্য দপ্তর বা প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স গ্রহণের সিদ্ধান্ত বাতিল, বিএসটিআই আন্ডারগ্রাউন্ড ট্যাংক ৫ বছর অন্তর বাধ্যতামূলক ক্যালিব্রেশনের সিদ্ধান্ত বাতিল, ট্যাংকলরি চলাচলে পুলিশি হয়রানি বন্ধ, সুনির্দিষ্ট দপ্তর ব্যতিত সরকারি অন্য দাপ্তরিক প্রতিষ্ঠান ডিলার বা এজেন্টদের অযথা হয়রানি বন্ধ, নতুন কোনো পেট্রোল পাম্প নির্মাণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় জ্বালানি তেল মালিক সমিতির ছাড়পত্রের বিধান চালু, পেট্রোল পাম্পের পাশে যেকোনো স্থাপনা নির্মাণের আগে জেলা প্রশাসকের অনাপত্তি সনদ গ্রহণ বাধ্যতামূলক ও বিভিন্ন জেলায় ট্যাংকলরি থেকে জোরপূর্বক পৌরসভার চাঁদা নেয়া বন্ধ করাসহ ১৫টি দাবিতে আমরা ধর্মঘট পালন করছি।
আন্দোলনকারী সংগঠনের নেতারা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে জ্বালানি ব্যবসায়ীদের যৌক্তিক অমীমাংসিত সব দাবিসমূহ নিয়ে সংশ্লিষ্টরা টালবাহানা করছে। বার-বার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে। ফিলিং স্টেশন তথা জ্বালানি ব্যবসায়ীদের ওপর অযথা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন দপ্তর থেকে বিভিন্ন ধরনের বিধান। যা মেনে নিয়ে জ্বালানি ব্যবসা করা আদৌ সম্ভব নয়। তাই বাধ্য হয়ে জ্বালানি ব্যবসায়ীরা অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি পালন করছে। কর্মবিরতি চলাকালে খুলনার পদ্মা, মেঘনা, যমুনা তেল ডিপো থেকে তেল উত্তোলন ও বিপণন বন্ধ রয়েছে। খুলনা বিভাগের ১০ জেলাসহ বৃহত্তর ফরিদপুরের ৫ জেলায় চলছে না ট্যাঙ্কলরির চাকা। একই সঙ্গে পেট্রোল পাম্পে তেল বিক্রি বন্ধ রয়েছে।