নিজস্ব সংবাদাদাতা: প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের শিক্ষা, চিকিৎসা, প্রশিক্ষণ, পুনর্বাসন ও আবাসিক সুবিধাপ্রদানের লক্ষ্যে ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই বহুমুখী ‘সুবর্ণ ভবন’ নির্মাণ করা হয়েছে। ২৮তম আন্তর্জাতিক ও ২১তম জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস-২০১৯ উপলক্ষে সমাজকল্যাণমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫ ডিসেম্বর জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন-চত্ত্বরে ১৫তলাবিশিষ্ট জাতীয় প্রতিবন্ধী কমপ্লেক্স ‘সুবর্ণ ভবন’ উদ্বোধন করবেন। এ ভবনে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য রয়েছে ডিজএ্যাবল কেয়ার ইউনিট, ইনপেশেন্ট ডিপার্টমেন্ট, অটিজম রিসোর্স সেন্টার, নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল সমস্যাযুক্ত ব্যক্তির থেরাপিভিত্তিক সেবা ও কাউন্সিলিং, কারিগরি ও সাধারণ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য স্পেশাল স্কুল ফর চিলড্রেন উইথ অটিজম, অন্যান্য প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য ইনক্লুসিভ স্কুল, ডে-কেয়ার সেন্টার, শিশুদের খেলাধুলার ব্যবস্থা, ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাপ্তরিক কক্ষ, লাইব্রেরি, মাল্টিপারপাস হল, কনফারেন্স রুম, ক্যাফেটেরিয়া, নামাজের স্থান, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান কর্তৃক উৎপাদিত বিভিন্ন দ্রব্যসামগ্রীর প্রদর্শন ও বিক্রয়ব্যবস্থা।
আওয়ামী লীগ সরকারই ১৯৯৯ সনে ’জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন’ প্রতিষ্ঠা করে। গঠনের পর থেকে এ ফাউন্ডেশন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউণ্ডেশনের ক্যাম্পাসে ২০১০ সালের ২ এপ্রিল ’অটিজম রিসোর্স সেন্টারে’ এর শুভ উদ্বোধন করেন। এর পাশাপাশি সেখানে একটি করে প্রতিবন্ধী কর্মজীবী পুরুষ ও মহিলাহোস্টেল, প্রতিবন্ধী শিশু নিবাস ও অটিষ্টিক স্কুলও চালু হয়েছে। এছাড়া অটিজম-বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুদের অভিভাবকগণকে শিশুর প্রত্যহিক লালনপালনের প্রশিক্ষণদানসহ নানারকম সেবার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফাউন্ডেশন-ক্যাম্পাসে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকপর্যায়ের শ্র্রবণ, বুদ্ধি ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য বিদ্যালয়ও চালু রয়েছে। বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীর জন্য আবাসিক সুবিধা রয়েছে। এমনকি ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে সারাদেশে ৬৩টি বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ও ১১টি স্পেশাল স্কুল ফর চিলড্রেন উইথ অটিজমও পরিচালিত হচ্ছে, যেখানে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী শিক্ষা লাভ করছে।
সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) তথ্য অধিদফতরের সম্মেলনজক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান। এ সময় সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ এমপিসহ মন্ত্রণালয়য়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
মন্ত্রী বলেন, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এ দিবসটি প্রতিবছরের ন্যায় জেলাপর্যায়ে পালন করলেও এবারই প্রথম এর ব্যাপ্তি উপজেলাপর্যায়েও ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ২ এপ্রিল ২০১৪ তারিখ জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনকে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ভুক্ত একটি অধিদপ্তরে রূপান্তরের জন্য একে ‘প্রতিবন্ধী উন্নয়ন অধিদপ্তর’ হিসেবে ঘোষণার পর এর নামফলকও উন্মোচন করেছেন, উল্লেখ করে তিনি বলেন, ’প্রতিবন্ধী উন্নয়ন অধিদপ্তর’ প্রতিষ্ঠিত হলে প্রতিবন্ধীসংক্রান্ত কার্যক্রমসমূহ প্রতিটি উপজেলাপর্যায়ে বিস্তারলাভ করবে এবং প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর সেবাদানের বিষয়টি প্রাতিষ্ঠানিক রূপলাভ করবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অনুপ্রাণিত করাসহ তাদের দক্ষতাবৃদ্ধি করতে সাভারে আন্তর্জাতিকমানের একটি বহুমূখী ক্রীড়া কমপ্লেক্স নির্মাণে ১২.১ একর জমি বরাদ্দ করা হয়েছে। ক্রীড়া কমপ্লেক্সে ২টি বেসমেন্টসহ ১১তলা একাডেমিক ভবন, জিমনিশিয়াম, সুইমিংপূল, ফুটবল ও ক্রিকেটমাঠ, মসজিদ, ৬তলাবিশিষ্ট ডরমেটরি ভবন, ৬তলাবিশিষ্ট আবাসিক ভবন, অভ্যন্তরিণ রাস্তাসহ বিভিন্ন সুবিধা থাকবে। অতিশিগগির প্রায় ৪৪৯ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ণের কাজ শুরু হবে।
আমরা ইতিমধ্যে ৬৪টি জেলা ও ৩৯টি উপজেলায় ১০৩টি প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্যকেন্দ্র চালু করেছি, যেখানে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ফিজিওথেরাপি ও অন্যান্য চিকিৎসা-সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। সরকার প্রতিটি উপজেলায় একটি করে এমন সেবাকেন্দ্র স্থাপনের জন্য আগ্রহী।
দেশের প্রতিবন্ধী ও অটিজম-বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ব্যক্তিদের ওয়ানস্টপ সার্ভিস প্রদানের জন্য দেশের ৬৪টি জেলা ও ৩৯টি উপজেলায় মোট ১০৩টি প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্যকেন্দ্র চালু করা হয়েছে। প্রত্যন্ত এলাকার প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠির দোরগোড়ায় থেরাপিউটিক সেবা পৌঁছানোর লক্ষ্যে ২০১৫ সাল থেকে ৩২টি ভ্রাম্যমান মোবাইল রিহ্যাবিলিটেশন থেরাপি-ভ্যান এর কার্যক্রম চলমান আছে। এসব কেন্দ্র থেকে এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৭ লক্ষ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে থেরাপিউটিক সেবাসহ অন্যান্য সেবা প্রদান করা হয়েছে। অন্যদিকে ২০১৮-২০১৯ অর্থবছর পর্যন্ত জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন থেকে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মাঝে ৪৫ হাজার ৫৩৪টি সহায়ক উপকরণ সম্পূর্ণ বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রের সাথে একটি করে অটিজম কর্ণার চালু করা হয়েছে। ইতিপূর্বে দেশে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সঠিক পরিসংখ্যান না থাকায় সরকার সমাজসেবা অধিদফতরের মাধ্যমে সরকার ’প্রতিবন্ধিতা সনাক্তকরণ জরিপ প্রকল্প’ চালু করেছে। গত নভেম্বর-২০১৯ পর্যন্ত প্রায় ১৭ লক্ষ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে এই জরিপে সনাক্তকরণ করার ফলে ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রায় শতভাগ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে প্রতিবন্ধী ভাতার আওতায় আনা সম্ভব হবে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৫ লাখ প্রতিবন্ধীকে প্রতিবন্ধীভাতা দেয়া হয়েছে। ফলে ২০০৮-০৯ অর্থবছরের চেয়ে ভাতাভোগী ৫গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিবন্ধীদের জন্য বাজেটও বৃদ্ধি পেয়েছে ১৪ গুণ এবং জনপ্রতি ভাতার পরিমান বেড়েছে ২.৮ গুণ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১ লাখ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর জন্য উপবৃত্তির বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে ৮০ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে বাজেটের পরিমান বেড়েছে ১৩.৩৯ গুণ এবং ভাতাভোগী বৃদ্ধি পেয়েছে ৭.৬৯ গুণ।
জাতীয় উন্নয়নে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তাগণসহ মিডিয়াকর্মীগণকেও এগিয়ে আসার আহবান জানান।