মানুষের মৌলিক চাহিদার মধ্যে খাদ্য একটি অন্যতম ও প্রধান মৌলিক চাহিদা। সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার জন্য দরকার স্বাস্থ্যসম্মত ভেজালমুক্ত খাবার। কিন্তু বিগত ১০০ বছরে খাদ্য উৎপাদনের অপ্রতুলতা খাদ্যে ভেজালের প্রবণতা বাড়িয়ে দিয়েছে। বর্তমানে পৃথিবীতে ২২ টি দেশ খাদ্য ঝুঁকিতে রয়েছে,তারমধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছে ১৯৬টি দেশ যেখানে বাংলাদেশের অবস্থান ২৭তম, পাকিস্তান ২২তম, ভারত ৫১তম এবং চীন ১২৫তম অবস্থানে রয়েছে। দেশে প্রায় ১.৪৭% হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য প্রতি বছর ২ থেকে ২.৫% হারে খাদ্য শস্যের চাহিদা বাড়ছে। তাই দেশের খাদ্য চাহিদা মেটানোর জন্য খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষি ফসল হিসেবে ধানের উৎপাদন বেড়েছে তিনগুন। বর্তমানে বছরে ধান উৎপাদন হচ্ছে ৩ কোটি ৭৬ লক্ষ টন। শাক-সব্জি উৎপাদনও যথার্থ। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের ২০১৮ সালের হিসাব অনুযায়ি বছরে ১৫৯.৫৪৩ লাখ টন শাক-সব্জি উৎপাদন হচ্ছ। খাদ্যের তালিকায় আরও আছে মাছ, যা প্রাণি উৎস থেকে পাওয়া প্রায় ৬০%। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দেশে মাছ উৎপাদনের পরিমান ৪২ লাখ ৭৭ হাজার মেট্রিক টন, যা দেশের মোট জিডিপির ৩ দশমিক ৬১ শতাংশ। আমিষ এর অন্যতম উৎস মুরগির মাংস উৎপাদন করা হয় ১৫০০ মেট্রিক টন। খাদ্যের তালিকায় যে ফল আছে তার মধ্যে সারা বছর আমদানি করা ফল যেমন খাওয়া হয়, তার চেয়ে বেশি হয় মৌসুমে বিশেষ করে আম, আনারস, তরমুজ, কাঠাল, লিচু, কলা, পেয়ারা, পেপে, বড়ুই ইত্যাদি। এসব দিক বিবেচনা করলে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশে প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহের দিক থেকে তেমন সমস্যা নেই।
উৎপাদনে সন্তোষজনক অবস্থা থাকলেও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে যে খাদ্য আমরা খাচ্ছি তার কতটুকু নিরাপদ? এ নিয়ে ভোক্তাদের মধ্যেই উদ্বেগ উৎকন্ঠা বেড়েছে।খাদ্যকে ভোক্তাদের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য এবং ব্যবসায় লাভের আশায় প্রতিনিয়ত খাবারের মধ্যে ভেজাল মেশানো হচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের মুখরোচক খাবার ও ফলমূল আকর্ষণীয় করে ও দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করার জন্য ক্ষতিকর কার্বাইড, ইন্ডাসট্রিয়াল রঙ, ফরমালিন, প্যারাথিয়ন ব্যবহার করা হয়। শুধু ব্যবসায়িক ফায়দা লুটতেই ফরমালিনসহ নানা কেমিক্যাল মিশিয়ে মাছকে বিপজ্জনক বিষে পরিণত করা হচ্ছে। হাট বাজার ঘুরে কেমিক্যালমুক্ত মাছ মেলে না কোথাও। বেকারির কারখানায় উৎপাদিত খাদ্যদ্রব্য সতেজ রাখতে ট্যালো, ফ্যাটি এসিড ও ইমউসল্টিং, টেক্সটাইল রঙসহ নানা কেমিক্যালও ব্যবহার করতে দেখা যায়। আশপাশের কারখানাগুলোতে ব্যবহার করা হচ্ছে ভেজাল আটা, ময়দা, ডালডা, তেল ও পচা ডিম। বেকারিতে পচা ডিম ব্যবহার যেন সাধারণ বিষয়। জুস কারখানাগুলোতে সবকিছুই চালানো হচ্ছে হাতুড়ে পদ্ধতিতে। অধিক মুনাফার আশায় একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী মসলায় কাপড়ে ব্যবহৃত বিষাক্ত রঙ, দুগন্ধযুক্ত পটকা মরিচের গুঁড়া, ধানের তুষ, ইট ও কাঠের গুঁড়া, মটর ডাল ও সুজি ইত্যাদি মেশাচ্ছেন। ভেজাল মসলা উৎপাদনকারী গুঁড়া মরিচের সঙ্গে একশ্রেণীর ব্যবসায়ী মেশাচ্ছেন ইটের গুঁড়া, হলুদে দেয়া হচ্ছে মটর ডাল, ধনিয়ায় কাঠের গুঁড়া ও পোস্তদানায় ব্যবহৃত হচ্ছে সুজি। মসলার রঙ আকর্ষণীয় করতে বিশেষ ধরনের কেমিক্যাল রঙ মেশানো হচ্ছে।
এর কারণে গুঁড়া মরিচের ঝাল বাড়ে এবং হলুদের রং আরো গাঢ় হয়। মসলার ওজন বৃদ্ধির জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে ধানের ভুসি। বাজারের কলা, আম, পেঁপে, পেয়ারা থেকে শুরু করে আপেল, আঙুর, নাশপাতিসহ দেশি-বিদেশি প্রায় সব ফলেই মেশানো হচ্ছে বিষাক্ত কেমিক্যাল। কারখানায় ভাজা মুড়ির সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে আড়তদারদের প্ররোচনায় গ্রামের সহজ সরল বউ-ঝিরাও মুড়িতে মেশাচ্ছেন ইউরিয়া। প্রতিযোগিতার বাজারে মুড়িকে লম্বা, সাদা, ফাঁপানো ও আকর্ষণীয় করতে মুড়ি বেপারি এবং আড়তদাররা শ্রমিকদের সার সরবরাহ করছেন। সবজি,ফলমূল, দুধ, মাছে ফরমালিন-কার্বাইডের বিষ, অন্যান্য খাদ্যপণ্যও ভেজালমুক্ত রাখা যায়নি। এমনকি জীবনধারণের জন্য সবচেয়ে জরুরি ‘পানি’ পর্যন্ত নিরাপদ থাকছে না। যত্রতত্র নকল কারখানা বানিয়ে পুকুর,ডোবা এবং ওয়াসার পানি বিশুদ্ধকরণ ছাড়া বোতলজাত করেই বিশুদ্ধ মিনারেল পানি বলে বাজারে সরবরাহ করা হচ্ছে। শুধু ভেজাল দিয়ে ক্ষান্ত হচ্ছেন না এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী, এবার নকল দুধ উৎপাদন ও বাজারজাত করছেন তারা।
শুধু ভেজাল খাবার খেয়েই কি আমরা ক্ষান্ত হচ্ছি? খাদ্য নিরাপদ না হওয়ার কারণে আমরা বিভিন্ন দীর্ঘ মেয়াদী রোগে আক্রান্ত হচ্ছি, যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে অ-সংক্রামক রোগ বা ইংরেজিতে বলা হয় নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ (এনসিডি, যেমন- ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনী সমস্যা, ক্যান্সার ইত্যাদি। বর্তমান সময়ে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মৃত্যুর ৬১% কারণ এই অ-সংক্রামক রোগ। অথচ এই রোগ প্রতিরোধযোগ্য।
বিভিন্ন দেশ যেমন চীন, শিশুর জন্মের দিন থেকে ১০০০ দিন পর্যন্ত তার খাদ্য তালিকা কেমন হবে তা নিশ্চিত করে দিচ্ছে সেখানে আমরা ভেজাল খাদ্য নিয়ে দিনের পর দিন জীবন অতিবাহিত করছি। এসব ভেজাল আর অসুস্থতা থেকে মুক্তি পেতে আমাদের খাদ্য তালিকায় কিছু দেশীয় খাবার যেমন- আমলকি, সজিনা, তুলসি পাতা, ছোলা, মাশরুম রাখা উচিত। এই খাবারগুলোকে কার্যকারী খাদ্য বলা হয় যা শারীরবৃত্তীয় সুবিধার জন্য এবং মৌলিক পুষ্টির বাইরেও দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি হ্রাস করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । এটি প্রচলিত খাবারের সাথে অথবা নিয়মিত ডায়েটের অংশ হিসাবে সেবন করা যেতে পারে।
আমলকি একটি অসাধারণ পুষ্টিগুণে ভরপুর ভেষজ ফল। এছাড়া এটি ভেষজ চিকিৎসায় একটি বিখ্যাত উদ্ভিদ। আমলকির অনেক ভেষজ গুণ রয়েছে। আমাদের দেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশে প্রায় ৫ হাজার বছরের বেশি সময় ধরে দেহের প্রতিরোধক ক্ষমতা বৃদ্ধিতে এবং দেহের পুনর্যৌবন প্রাপ্তির ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়ে আসছে এই ছোট ফলটি। হলদে সবুজ রঙের এই ফলটির রয়েছে আশ্চর্য ক্ষমতা। প্রতিদিন একটি আমলকি খাওয়ার অভ্যেস করা আমাদের বড় রোগ থেকে মুক্তি দিতে পারে।
সজিনা অতি পরিচিত দামি এবং সুস্বাদু সবজি। দেশি-বিদেশি পুষ্টি বিজ্ঞানীরা সজিনাকে অত্যাশ্চর্য বৃক্ষ বা অলৌকিক বলে অভিহিত করেছেন। কারণ, এর পাতায় আট রকম অত্যাবশ্যকীয় এমাইনো এসিডসহ ৩৮% আমিষ আছে যা বহু উদ্ভিদেই নেই। বিজ্ঞানীরা পুষ্টির দিক দিয়ে সজিনাকে ‘পুষ্টির ডিনামাইট’ আখ্যায়িত করেন। ভারতীয় আয়ুর্বেদিক শাস্ত্র মতে, সজিনা গাছ ৩০০ রকমের রোগ থেকে মানুষকে রক্ষা করে।
সজিনা গাছের পুষ্টিমান, ঔষধিগুণ ও খাদ্য হিসেবে ব্যবহার অনুশীলন করে স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য আরও ব্যাপকভাবে সজিনার ফল, টাটকা ও শুকনা পাতা ব্যবহার বৃদ্ধি করা উচিত। সারা বছর এ সবজি খাওয়ার অভ্যাস বাড়ানো উচিত।
তুলসী একটি মহা ঔষধি গাছ। তুলসীপাতা আমাদের ও ভারতীয়দের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি গাছ হিসেবে পরিচিত। এই পাতার মধ্যে আছে সুগন্ধিযুক্ত, কটু তিক্তরস, রুচিকর গুনাগুন। এটি পূজার কাজে ব্যবহার হয়। এছাড়াও সর্দি, কাশি, কৃমি ও বায়ুনাশক এবং মুত্রকর, হজমকারক ও এন্টিসেপটিক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
তবে বিশেষ করে কফের প্রাধান্যে যে সব রোগ সৃষ্টি হয় সে ক্ষেত্রে তুলসী বেশ ফলদায়ক। গবেষণায় দেখা গেছে তুলসীগাছ একমাত্র উদ্ভিদ যা দিন রাত চব্বিশ ঘণ্টা অক্সিজেন সরবরাহ করে বায়ু বিশুদ্ধ রাখে যেখানে অন্য যেকোন গাছ রাত্রিতে কার্বন ডাই অক্সাইড ত্যাগ করে। তাই রাতের বেলাতে তুলসীতলায় শয়ন করাও ব্যক্তির জন্য উপকারী। এর গন্ধবাহী বায়ু যে দিকেই অর্থাৎ দশদিকে যাক না কেন সবদিকে সে বায়ুকে দুষণমুক্ত করে। এছাড়া তুলসী গাছ লাগালে তা মশা কীটপতঙ্গ ও সাপ থেকে দূরে রাখে। আর এইজন্য তুলসীকে বলা হয় ভেষজের রানী। ক্যান্সার, কিডনি এরকম জটিল রোগের মহা ওষুধ তুলসি।
ছোলার গুণ সম্পর্কে আমরা সবাই কমবেশি জানি। ছোলায় বিভিন্ন প্রকার ভিটামিন, খনিজ লবণ, ম্যাগনেশিয়াম ও ফসফরাস রয়েছে। উচ্চমাত্রার প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার ছোলা। কাঁচা, সেদ্ধ বা তরকারি রান্না করেও খাওয়া যায়। কাঁচা ছোলা ভিজিয়ে, খোসা ছাড়িয়ে, কাঁচা আদার সঙ্গে খেলে শরীরে একই সঙ্গে আমিষ ও অ্যান্টিবায়োটিক গঠন হয়। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণেও ভূমিকা রাখে।
খাদ্যগুণে সমৃদ্ধ মাশরুম অত্যন্ত স্বাস্থ্যপ্রদ একটি খাবার। মাশরুমের পুষ্টিমান তুলনামূলকভাবে অত্যধিক এবং এর প্রোটিন অতি উন্নতমানের এবং মানব দেহের জন্য অতিশয় উপকারী। একটি পরিপূর্ণ প্রোটিনের পূর্বশর্ত হলো মানব দেহের অত্যাবশ্যকীয় ৯টি অ্যাসিডের উপস্থিতি। মাশরুমে অতীব প্রয়োজনীয় এ ৯টি অ্যামাইনো অ্যাসিড বিদ্যমান।
ফুলকপির মতোই দেখতে সবুজ রঙের সবজির নাম ব্রকলি। চাইনিজ জাতীয় খাবারে ব্যবহৃত অন্যতম প্রধান উপকরণ এই সবজি।আমাদের দেশেও চাষ হচ্ছে। এটি কাঁচা কিংবা রান্না করে, ব্রকলি খাওয়া যায় দুইভাবেই। এতে রয়েছে খনিজ এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট। ব্রকলিতে প্রচুর পরিমাণে ফ্ল্যাভোনয়েড, লিউটেনের সঙ্গে ক্যারটিনয়েড, বিটা-ক্যারোটিন এবং জিক্সানথিন- সব শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে যা অনেক গুরুতর রোগ প্রতিরোধ করে।ব্রকলি পটাসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ। সুস্থ স্নায়ুতন্ত্রের জন্য যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতে ক্যালসিয়ামের আধিক্য থাকায় হাড়ের জন্য বেশ উপকারী। এছাড়াও মৌসুমি শাকসবজি ও ফলমূল প্রতিদিনের খাদ্য তালিকাতে থাকতে হবে।
কেবল মানুষের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য উৎপাদন নিশ্চিত করাই খাদ্য নিরাপত্তা নয়।খাদ্য নিরাপত্তার সঙ্গে খাদ্য উৎপাদন ছাড়াও খাদ্য সংগ্রহ, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, খাদ্য সরবরাহ এবং ভোক্তাদের সন্তুষ্টি নিশ্চিতকরণ বিষয়গুলো ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এছাড়া ফসল উৎপাদনের সময়, অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহার এবং অন্যান্য ক্ষতিকর পদার্থ ব্যবহারে সতর্ক থাকতে হবে। কেবল বাজার ব্যবস্থা মনিটর করে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার কথা ভাবা সম্ভব না।
এর জন্য খাদ্য উৎপাদনের উৎস এবং কিসের সহায়তায় এটা সম্পন্ন হচ্ছে, তাদেরও নিরাপদ রাখার কৌশল বের করতে হবে। সেজন্য ফসল সংগ্রহ এবং প্রক্রিয়াজাতকরণের সময়ও বিভিন্ন রাসায়নিক ও অণুজীব দ্বারা অনিরাপদ হওয়া প্রতিহত করতে হবে। শাকসবজি, ফলমূল ও মাছ বাজার থেকে কিনে আনার পর তা কমপক্ষে এক ঘণ্টা লবন (৫গ্রাম/লি) মিশ্রিত কুসুম গরম পানিতে (৩০-৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) ভিজে রেখে পরে খেলে বা রান্না করলে অনেকটাই অণুজীব ও বিষ মুক্ত হবে।
লেখক : ১. ড. সৈয়দ মোহাম্মদ এহসানুর রহমান, প্রফেসর, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং নিরাপদ খাদ্য বিশেষজ্ঞ, কিংডাও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, চীন।
২. শারমিন ইসলাম ইভা, শিক্ষার্থী, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।