নিজস্ব প্রতিবেদক: ১১৭ দেশের মধ্যে ক্ষুধা সুচকে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৮তম। স্কোর ২৫.৮, গতবার স্কোর ছিল ২৬.১। ক্ষুধা স্কোরে কিছুটা উন্নতি ঘটলেও বৈশ্বিক অবস্থানে দুই ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ। কারণ, অন্যদের উন্নতি ঘটছে আরও দ্রুতগতিতে । বাংলাদেশ ছাড়া দক্ষিণ এশীয় অন্যান্য দেশের মধ্যে ভারত ১০২, পাকিস্তান ৯৪, নেপাল ৭৩, মিয়ানমার ৬৯ এবং শ্রীলঙ্কা ৬৬তম অবস্থানে রয়েছে। তবে, ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট বলছে, বাংলাদেশের পরিস্থিতির উন্নতি ঘটছে ধারাবাহিকভাবে।
সোমবার (৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘বিশ্ব ক্ষুধা সুচক ২০১৯’ এর প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব তথ্য উঠে আসে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক এম.পি।
গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স (জিএইচআই) তৈরি হয়েছে চারটি মাপকাঠিতে প্রতিটি দেশের পরিস্থিতি বিচার করে। অপুষ্টি, ৫ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে কম ওজনের শিশু, ৫ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে কম উচ্চতার শিশু, ৫ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যু−এই চারটি মাপকাঠিতে প্রতিটি দেশের স্কোর হিসাব করা হয়েছে ১০০ পয়েন্টের ভিত্তিতে।
চলতি বছরসহ ৫ বছরে অবস্থানে খুব সামান্য তারতম্য হলেও দীর্ঘমেয়াদি চিত্রে ফুটে উঠেছে বাংলাদেশের ক্রমোন্নতির চিত্র। ২০০০ সালে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ১০০’র মধ্যে ৩৬.১, অর্থাৎ ‘ভীতিকর’। এর ৫ বছর পর, ২০০৫ সালের সূচকে সেই স্কোর কমে ৩০.৭-এ দাঁড়ায়। অর্থাৎ বাংলাদেশ ‘ভীতিকর’ থেকে ‘তীব্র’ ক্ষুধাপীড়িত দেশের পর্যায়ে চলে আসে। আরো ৫ বছর পর অর্থাৎ ২০১০ সালে স্কোর সামান্য একটু কমে ৩০.৩ হয়। আর তারপর টানা ৯ বছরের ব্যবধানে এবারের সূচকে বাংলাদেশ পেল ২৫.৮।
এ ব্যাপারে কৃষি মন্ত্রী বলেন, বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে বাংলাদেশে সার্বিকভাবে উন্নতির দিকেই রয়েছে। বাংলাদেশ শিশু মৃত্যু হ্রাসে ভালো করেছে এবং অন্যান্য সুচকে বাংলাদেশ ভালে করবেই। পুষ্টিহীনতা, শিশু খর্বাকার এবং শিশু মৃত্যু হার হ্রাস পেয়েছে বাংলাদেশে। অর্থনৈতিক বিকাশ, পিতামাতার শিক্ষায় এবং স্বাস্থ্য উন্নয়নে সাফল্যে,স্যানিটেশন এবং জনতাত্বিক উন্নয়নের ফলে দেশে খর্বাকার শিশু,শিশু মৃত্যু হার হ্রাস পেয়েছে। নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য একটি চেইন। এখানে কৃষক ভোক্তা সামাজিক ও অর্থনৈতিক ব্যপারগুলো জড়িত। সরকার সামাজিক নিরাপত্তার নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা মানবতার মা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসনিার হাতে দেশ যত দিন আছে এদেশে থেতে ক্ষুধা দারিদ্র দূর হবেই হবে। বাংলাদেশ হবে বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলাদেশ।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হওয়া সত্বেও খাদ্য উৎপাদনে এগিয়ে যাচ্ছে। এখন লক্ষ্য আধুনিক কৃষি, বাণিজ্যিক কৃষি এবং নিরাপদ কৃষি। সবার জন্য নিরাপদ ও পুষ্টিমান সম্পন্ন খাদ্য নিশ্চিত করতে সরকার অঙ্গীকারাবদ্ধ। সরকার যে কোন মূল্যে তা করবে। শহরের সকল সুযোগ সুবিধা গ্রামে নিয়ে যাওয়া হবে। কৃষি যান্ত্রকিকরণের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিত করা হবে।
উল্লেখ্য, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যে কোনটির জনগণ কতটা খাদ্যাভাব অর্থাৎ ক্ষুধায় পীড়িত, তা তুলে ধরা হয় বিশ্ব ক্ষুধা সূচক বা গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্সে। এই সূচকে ০ থেকে ১০০ পয়েন্টের মাপকাঠিতে দেশগুলোকে ফেলে যাচাই করা হয় কোন দেশটি কতটা ক্ষুধাপীড়িত। এই মাপকাঠিতে ০ হচ্ছে সবচেয়ে ভালো স্কোর, যার অর্থ সেই দেশটিতে ক্ষুধা নেই, আর ১০০ হচ্ছে সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা। ১০ এর কম স্কোর পাওয়ার অর্থ হলো সেই দেশে ক্ষুধা সমস্যা কম। ২০ থেকে ৩৪.৯ স্কোরের অর্থ তীব্র ক্ষুধা, ৩৫ থেকে ৪৯.৯ অর্থ ভীতিকর ক্ষুধা আর ৫০ বা তার বেশি স্কোর বলতে বোঝায় চরমভাবে ভীতিকর ক্ষুধায় পীড়িত দেশকে।
অনুষ্ঠানে কি নোট উপস্থাপন করেন জাতীয় পুষ্টি সেবা’র পরিচালক ডা. এসএম মোস্তফিজুর রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ পুষ্টি কাউন্সিল এর মহাপরিচালক ডা. শাহ নেওয়াজ; কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড এর কান্ট্রি ডিরেক্টর একেএম মুসা, হেলভেটাস বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর উম্মে হাবিবা।