রবিবার , ডিসেম্বর ২২ ২০২৪

সুন্দরবন পরিদর্শনে জাতিসংঘের যৌথ মিশন

ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা) : জাতিসংঘের যৌথ মিশনের চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল চার দিনব্যাপী সুন্দরবন পরিদর্শন শুরু করেছেন। এই প্রতিনিধি দলের সঙ্গে রয়েছেন বন বিভাগের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। বুধবার (১১ ডিসেম্বর) দুপুরে বাগেরহাটের মোংলার ফুয়েল জেটি থেকে প্রতিনিধি দলটি সুন্দরবন বিভাগের অত্যাধুনিক নৌযান (বন বিলাসে) চড়ে সুন্দরবনে পরিদর্শন শুরু করেন। আগামী ১৪ ডিসেম্বর তাদের সুন্দরবন থেকে ফেরার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছেন পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ।

জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা (ইউনেস্কো) এবং প্রকৃতি রক্ষার বৈশ্বিক সংগঠনের (আইইউসিএন) একটি যৌথ মিশনের চার পরিবেশবিদ চার দিন ধরে সুন্দরবনে অবস্থান করবেন। এ সময় পরিবেশগতভাবে হুমকির মুখে থাকা সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যের বর্তমান অবস্থান এবং সম্প্রতি ঘূর্নিঝর বুলবুলের আজ্ঞাতে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন ও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করবেন।

জাতিসংঘের যৌথ মিশনের প্রতিনিধি দলটি বুধবার দুপুরে মোংলায় সুন্দরবন বিভাগের রেস্ট হাইজে এসে পৌঁছালে বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. মাহমুদুল হাসান তাদের ফুল দিয়ে স্বাগত জানান। প্রতিনিধি দলে রয়েছেন ইউনেস্কোর নয়াদিল্লি অফিসের প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট ফর ন্যাচারাল সায়েন্স বিভাগের মিস্টার গাই ব্রুক, ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সেন্টারের অ্যাকান নাকামুরা, আইইউসিএনের এলিনা অসিপভা ও এন্ড্রো ওয়াইট।

জাতিসংঘের এই যৌথ মিশনটি সুন্দরবন পরিদর্শনের পাশাপাশি বনের আশপাশে অবস্থিত শিল্প কলকারখানা বিশেষ করে বাগেরহাটের রামপাল, বরগুনার তালতলী ও পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় নির্মিতব্য কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রভাবে ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সুন্দরবনের উপর পরিবেশগত ক্ষতির পরিমান খতিয়ে দেখবেন। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক সমুদ্র বন্দর মোংলার পশুর চ্যানেলসহ অন্যান্য নদী খননের ফলে সুন্দরবনের প্রাণ-প্রকৃতির ওপর প্রতিবেশগত যে বিরূপ প্রভাব পড়ছে সুন্দরবনে সেই বিষয়ে পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন করবেন যৌথ মিশন দল।

এই যৌথ মিশনের দেওয়া তথ্য-উপাত্তের ওপর ভিত্তি করেই জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ কমিটি সুন্দরবনের  প্রান-প্রকৃতির    ওপর প্রতিবেশগত হুমকির বিষয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট প্রকাশ করবে।

এ দিকে জাতিসংঘের প্রতিনিধি দলের সুন্দরবন পরিদর্শনকে কেন্দ্র করে সুন্দরবন বিভাগের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিলসহ সুন্দরবন এলাকায় অবাঞ্ছিত লোকজনের প্রবেশ ও সব ধরনের বনজ-জলজ সম্পদ আহরণ বন্ধ রেখেছে বন বিভাগ।

উল্লেখ, রামপাল কয়লা ভিক্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে বিতর্কের মধ্যে ২০১৬ সালের মার্চে ইউনেস্কোর তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল রামপাল কয়লা ভিক্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মুল প্রকল্প এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করেন। তাদের পরিদর্শনের প্রতিবেদনে ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রকে সুন্দরবনের জন্য ‘মারাত্মক হুমকি’হিসেবে বর্ণনা করে প্রকল্পটি অন্য স্থানে সরিয়ে নিতে বলা হয়। তা না হলে সুন্দরবনের বিশ্ব ঐতিহ্যের মর্যাদা বাতিল করে একে ‘বিপন্ন’তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়। ২০১৭ সালের জুলাইয়ে পোল্যান্ডে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির অধিবেশনে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়।

এরপর ঐ বছরের মে মাসে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীর নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল প্যারিসে ইউনেসকো সদর দপ্তরে গিয়ে বাংলাদেশ সরকারের যুক্তিগুলো তুলে ধরেন এবং প্রকল্পটি এগিয়ে নিতে ইউনেস্কোর সমর্থন প্রত্যাশা করেন।

This post has already been read 4853 times!

Check Also

পরিবেশ সুরক্ষা ও পানি সাশ্রয়ে এডব্লিউডি সেচ পদ্ধতি

ড. এম আব্দুল মোমিন: ধান বাংলাদেশের প্রধান খাদ্যশস্য। আউশ, আমন  বোরো মৌসুমে আমাদের দেশে ধান …