বৃহস্পতিবার , নভেম্বর ২১ ২০২৪

গাঁদা ফুলের ভেষজ গুণ

মৃত্যুঞ্জয় রায় : আমরা গাঁদা ফুলের সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হই। কিন্তু আমরা কি জানি যে এ গাছের রয়েছে বিভিন্ন রোগ সারানোর আশ্চর্যজনক ক্ষমতা? হাজার বছর ধরে গাঁদা ফুলগাছ চিকিৎসার্থে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। গাঁদাফুল গাছের বিভিন্ন অংশ চিকিৎসার্থে ব্যবহার করা হয়। এর পাতা রক্তার্শ, কিডনিজনিত রোগ, পেশীর ব্যাথা, কানের ব্যাথা, চোখের বিভিন্ন রোগ, ফোড়া, কাটা, ক্ষত ইত্যাদি সারানোয় ব্যবহৃত হয়। গাঁদাফুল চোখের বিভিন্ন অসুখ, দুষ্টক্ষত, রক্তদোষনাশক। সমস্ত গাছ বাত, পুরনো সর্দিকাশ, কৃমি প্রভৃতি সারাতে ব্যবহার করা হয়। চিকিৎসার জন্য ফুলের পাঁপড়ি ব্যবহার করা হয়। নিচে গাঁদা ফুলগাছের বিভিন্ন ভেষজ গুণ ও ব্যবহার সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো।

১. কাটা স্থানের রক্ত পড়া বন্ধ করে
করীরের কোথাও কেটে গেলে সেখানে গাঁদা ফুলগাছের পাতা ডলে তার রস লাগিয়ে দিলে দ্রুত রক্তপড়া বন্ধ হয়। অল্প কাটা হলে কাটা স্থান এতে দ্রুত জোড়া লেগে যায়। পাতাবাটা কাটা স্থানে পট্টির মতো লাগিয়ে ব্যান্ডেজ বা কাপড় দিয়ে বেঁধে রাখলে কিছুক্ষণের মধ্যে কাটা স্থানের রক্তপড়া বন্ধ, জোড়া লাগা এমনকি ব্যাথাও কমে যায়।

২. রক্তপিত্ত কমায়
বমির সাথে রক্ত পড়া রক্ত পিত্তের লক্ষণ। এছাড়া দেহের যে কোন ছিদ্রপথে যেমন মলদ্বার, প্র¯্রাবের পথ, লোমকূপ ইত্যাদি থেকে রক্ত পড়াও রক্তপিত্ত। এরুফ রক্তপড়া বন্ধ করতে ১ চা চামচ গাঁদা পাতার রস ২ ঘন্টা পর পর খেতে হবে। রসটা একটু গরম করে আবার ঠা-া করে খেতে হবে। রক্ত পড়া দেখলে এভাবে দু-তিনবার খেলে রক্তপড়া কমে আসবে। এভাবে দুদিন খেলে রক্ত পড়া বন্ধ হবে।

৩. অর্শরোগ সারায়
অর্শরোগ হলে মলদ্বারে বুটি হয়, রক্ত পড়ে, যন্ত্রণা হয়। কোষ্ঠকাঠিন্য হলে এই যন্ত্রণা আরও বেড়ে যায়। এ ক্ষেত্রে গাঁদা ফুলের পাঁপড়ির রস ১ চা পামচ একটু মাখনের সাথে মিশিয়ে দিনে দুবার খেলে যন্ত্রণা কমে, আরও দুবার খেলে রক্তপড়া বন্ধ হয়। সেই সাথে কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে তাও সেরে যায়।

৪. রক্ত আমাশায় দূর করে
আমাশার সাথে রক্ত পড়লে তাকে বলা হয় রক্ত আমাশায়। এ অবস্থায় পেট কামড়ায়, মলের সাথে শ্লেষ্মার মতো আম পড়ে, সেইসাথে রক্ত। কয়েকবার এরূপ হলে শরীর দূর্বল হয়ে পড়ে। সাধারণত গুরুপাক খাবার খাওয়ার পর এরূপ অবস্থা বেশি হয়। সারাদিন উপোসের পর তেলজাতীয় খাবার বেশি খেলেও এরূপ হয়। এ ক্ষেত্রে গাঁদা ফুল গাছের পাতার রস দেড় থেকে দুই চা-চামচ একটু চিনি মিশিয়ে খেলে বিশেষ উপকার হয়। দিনে এভাবে দুই থেকে তিনবার খেতে হবে। এতে একদিনের মধ্যেই রক্ত আমাশায় সেরে যাবে।

৫. যক্ষা রোগ কমায়
যক্ষ্মারোগ একটা খারাপ অসুখ, সহজে সারতে চায় না। সবসময় ঘুমঘুসে জ্বর, পেটের দোষ আর পাতলা ছিটযুক্ত রক্তের বমি এ রোগের লক্ষণ। এ অবস্থায় গাঁদা ফুলগাছের পাতা ছায়ায় শুকিয়ে গুঁড়ো করতে হবে। এই গুঁড়ো ২৫০ মিলিগ্রাম পরিমাণ একটু দুধের সাথে মিশিয়ে সকালে ও বিকালে খেতে হবে। ছাগলের দুধ হলে বেশি ভালো হয়। কয়েকদিন এভাবে খেলে যক্ষ্মারোগের উপকার হবে।

৬. কানের ব্যাথা সারায়
কান টাটালে গাঁদা ফুলগাছের পাতার রস হালকা গরম করে কয়েক ফোঁটা কানে দিলে তা কমে। দিনে দুবার করে দুদিন দিলে এ সমস্যা চলে যায়।

৭. পাঁচড়া সারায়
নতুন বা পুরনো পাঁচড়া সারাতে হলে সেখানে গাঁদা ফুলগাছের পাতার রস লাগাতে হবে। পাশপাশি এই রস আধা চা-চামচ করে সকালে ও বিকালে খেতে হবে। এভাবে দু চার দিন করলে পাঁচড়া সেরে যাবে।

৮. ফোড়া ফাটায়
ফোড়া দরকাচা হয়ে আছে, শক্ত, ফাটছে না। এরূপ অবস্থায় গাঁদাপাতা বেটে কাইয়ের মতো করে অল্প গরম করে ফোড়ার উপরে প্রলেপ দিয়ে বেঁধে রাখলে দ্রুত তা ফেটে যায়। এতে ব্যাথাও কমে।

৯. চোখ লাল হলে
যে কোন কারণে চোখ লাল হলে সে চোখে গাঁদা ফুলের রস এক ফোঁটা করে দিলে চোখের লাল ভাব কেটে যায়।

This post has already been read 8678 times!

Check Also

বারি ও সুপ্রিম সীড কোম্পানি লি: এর মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর

গাজীপুর সংবাদদাতা: বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) এবং সুপ্রিম সীড কোম্পানি লিমিটেড এর মধ্যে এক …