ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা) : অপার সৌন্দর্যের বেলাভূমি আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ। এদেশের প্রতিটি কোণায় কোণায় রয়েছে সৌন্দর্যের হাতছানি। বাংলাদেশের তিনটি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলোর মধ্যে দুটির স্থান হলো দক্ষিণাঞ্চলে। এর একটি বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ বনানীর টানে দেশী বিদেশি পর্যটক ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবন ভ্রমণ করে থাকেন। তেমনি দেশের দ্বিতীয় বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান ১৫শ শতকের তুর্কি সেনাপতি খান-ই-জাহান নির্মিত ঐতিহ্যবাহী ষাট গম্বুজ মসজিদ ও হযরত খাঁন জাহান আলী (রঃ) মাজার শরীফ অন্যতম মর্যাদায় পরিচিত।
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবনে ভ্রমণে আসা দেশি বিদেশী পর্যটকদের একটু বিনোদনের জন্য সুন্দরবন সংলগ্ন খুলানা জেলার বটিয়াঘাটা উপজেলার বরণপাড়ায় ৯ দশমিক ২৫ একর জায়গা নিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে আকর্ষণীয় রানা রিসোর্ট এন্ড এমিউজমেন্ট পার্কটি। নাগরিক জীবনের ব্যস্ততা থেকে একটু হাফ ছেড়ে বাঁচতে অনেকেই প্রকৃতির সান্নিধ্যে সময় কাটাতে চায়।
দক্ষিণাঞ্চলের সম্ভাবনাময় পর্যটন শিল্পকে আরো আকর্ষণীয় ভাবে তুলে ধরতে বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন এর উদ্যোগে গড়ে তোলা হয়েছে রানা রিসোর্ট প্রকল্পটি। আধুনিক স্থাপত্যশৈলী দ্বারা নির্মিত রানা রিসোর্ট এন্ড এমিউজমেন্ট পার্কটি আগামী ২০ ডিসেন্বর শুক্রবার তার দুয়ার খুলতে চলেছে। রানা রিসোর্ট এন্ড এমিউজমেন্ট পার্কটির দ্বার উন্মোচন হলে সৃষ্টি হবে খুলনা অঞ্চলে পর্যটন শিল্পভিক্তিক নতুন কর্মসংস্থানের ।
জানা গেছে, নাগরিক জীবনের ব্যস্ততা থেকে একটু হাফ ছেড়ে বাঁচতে অনেকেই প্রকৃতির সান্নিধ্যে সময় কাটাতে ব্যকুল হয়ে উঠেন। ভ্রমণপিয়াসী সেইসব মানুষের সময় এবং চাহিদার কথা মাথায় রেখেই খুলনার পশুর নদের পাড়ে তৈরি করা হয়েছে রানা রিসোর্ট অ্যান্ড এমিউজমেন্ট পার্ক। এখানে নির্মাণ করা হচ্ছে ফাইভ স্টার মানের হোটেল।
বিদেশী পর্যটকরা আকৃষ্টি হওয়ার সাথে সাথে শহরের যান্ত্রিক কোলাহল থেকে স্থানীয় ভ্রমণকারীরা এখানে এসে খুঁজে পাবেন এক অনাবিল আনন্দ সুখ। বিশেষ করে শিশুদের আনন্দের জন্য এটাকে বলা যেতে পারে শিশু স্বর্গ। তাহলে চলে আসুন নান্দনিক এ বিনোদন মূলক এ পার্কে।
আগমীকাল শুক্রবার উদ্বোধন হবে খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার বরণপাড়ায় অবস্থিত রানা রিসোর্ট এন্ড এমিউজমেন্ট পার্কটি। ব্যস্ততাপূর্ন জীবন থেকে একটু স্বস্তি এবং পরিবারের সবাইকে নিয়ে একটি দিন আনন্দঘনভাবে কাটাতে ছুটে যেতে পারেন এই সুন্দর রিসোর্টটিতে। খুলনার যে কেউ একদিনে ঘুরে ফিরে আসতে পারবেন কিংবা চাইলে রাতে থেকেও উপভোগ করতে পারবেন।
৯ দশমিক ২৫ একর জায়গা নিয়ে গড়ে ওঠা এই অসাধারণ পার্কটির মধ্যে তৈরি হয়েছে পাঁচতারকা মানের হোটেল। জাঁকজমকপূর্ণ এই পার্কটি পরিবেশবান্ধব উপায়ে তৈরি করা হয়েছে। তবে পার্কে রয়েছে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন অত্যাধুনিক সব ব্যবস্থা। এতে আপনি ও আপনার পরিবার নিয়ে নিশ্চিন্তে বিশ্রাম ও রাত্রীযাপন করতে পারবেন। তাছাড়া পিকনিক স্পটে আপনি আপনার পরিবার পরিজন বা আপনার প্রতিষ্ঠানের সবাইকে নিয়ে পিকনিক করতে পারবেন।
বিশ্বখ্যাত রোমাঞ্চকর রাইড নিয়ে এই পার্কটিতে রয়েছে ক্যারোসেল, অক্টোপাস রাইড, নাগরদোলা, বাম্পার কার, সেল্ফ কন্ট্রোল্ড প্লেন, ট্রেন, ফ্লাইং কার, জাম্পিং ফ্রগ, লেডি বাগ, মটর রাইড, কেবল কার, সুনামি পুল, ওয়াটার স্লাইড রাইন্ড।
ওয়েস্টার্ন চেয়ারম্যান এ এস এম আলাউদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, আমার একমাত্র ছেলে রানার স্মৃতিকে স্মরণীয় করে রাখতে পার্কটি নির্মাণ করা হয়েছে। এটি নির্মাণের উদ্দেশ্য হলো আমার ছেলের স্মৃতিকে জড়িয়ে এ অঞ্চলের কর্মসংস্থান ও বিনোদনের ব্যবস্থা করা। এ প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত ব্যক্তিদের ৯৫ ভাগই স্থানীয়। এটি খুলনার বটিয়াঘাটার পশুর নদের অববাহিকায় অবস্থিত। এখানে রয়েছে অত্যাধুনিক কটেজ, আধুনিক রাইড সম্বলিত অ্যামিউজমেন্ট পার্ক ও ওয়াটার কিংডম, পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন ভ্রমণ (রিভারক্রুজ) সুবিধা। এই পার্কে বিশেষ আকর্ষণ সুনামিপুল যা বাংলাদেশে প্রথম, যেখানে কৃত্রিমভাবে সৃষ্ট সাগরের উত্তাল ঢেউ এবং ওয়াটার স্লাইড ও ডিজে মিউজিক এবং বিভিন্ন আকর্ষণীয় রাইড ও বিনোদনের ব্যবস্থা থাকছে। এর ঢেউ হবে সাড়ে ৪-৫ ফুট।
তিনি আরো বলেন, আমি দেখতে পেয়েছি এ অঞ্চলের মানুষের পিকনিক স্পটের বড় অভাব। সেটি মাথায় রেখে আমি এ পার্কের মধ্যে ৪টি পিকনিক স্পটের ব্যবস্থা রেখেছি। পার্কটির স্থাপত্য শৈলীর নকশা সব আমার নিজের তৈরি। শিশুরা এখানে অনেক বিনোদন পাবে বলে আমি আশা করি।
খুলনা মহানগর স্বেচ্ছা সেবক লীগের খালিশপুর থানার যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক বলেন, খুলনাঞ্চলের মানুষের কথা চিন্তা করে এমন বিনিয়োগ করায় ওয়েস্টার্ন গ্রুপকে অনেক ধন্যবাদ। রানা রিসোর্টটির মাধ্যমে খুলনা সহ সুন্দরবনে পর্যটকদের যেমন আনাগোনা বাড়বে তেমনি এ অঞ্চলের মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এ ধরনের বড় বড় রিসোর্ট হলে বিদেশি পর্যটকদের প্রতি সহজেই সুন্দরবণ ভ্রমণে আকৃষ্ট করা এবং পর্যটন শিল্পের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এক বিরাট অবদান রাখা সম্ভব।
যেভাবে যাবেন : খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার বরণপাড়ায় ‘রানা রিসোর্ট অ্যান্ড এমিউজমেন্ট পার্ক’টি অবস্থিত। খুলনার জিরোপয়েন্ট থেকে বাস, মাইক্রোবাস, ইজিবাইকসহ যেকোনো যানবাহনে সড়ক পথে এখানে আসা যায়। শহর থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার অদূরে প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে পরিবার পরিজন কিংবা বন্ধুবান্ধব নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন বিনোদন মুলক রানা রিসোর্ট থেকে।