রবিবার , ডিসেম্বর ২২ ২০২৪

শীত-কুয়াশার দাপটে আম-লিচু বাগানের পরিচর্যা

এগ্রিনিউজ২৪.কম ডেস্ক: জানুয়ারির মাঝামাঝি থেকেই বেশিরভাগ আম গাছে মুকুল চলে আসে। উদ্যানপালন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন থেকেই আমবাগানের বিশেষ পরিচর্যা জরুরি। তা না হলে ফলনে প্রভাব পড়তে পারে। বর্তমানে যে আবহাওয়া চলছে, তাতে আম ও লিচুবাগানে জাবপোকার পাশাপাশি ছত্রাকের আক্রমণ হতে পারে। সেইসঙ্গে দেখা দিতে পারে কালো ক্ষত বা অ্যানথ্রাকনোস রোগ। প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় কোল্ড ইনজুরিতেও আক্রান্ত হতে পারে আমগাছ।

দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে সবচেয়ে বেশি আমের ফলন হয় কিন্তু সেখানে বর্তমানে কুয়াশা ও শৈত্য প্রবাহের দাপট চলছে। সেকারণে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিয়ে ছত্রাক ও জাবপোকা ঠেকাতে হবে বলে জানাচ্ছেন উদ্যানপালনবিদরা। কুয়াশার কারণে সকালের দিকে পরিবেশে যে ভিজেভাব থাকে, তাতে ছত্রাক জন্ম নেয়। এই ছত্রাককে দমন করতে না পারলে পরবর্তীতে আমের ফলনের ক্ষতি হতে পারে। তবে অনেক কৃষক জাবপোকা ও ছত্রাক দমন করতে গিয়ে মাত্রাতিরিক্ত হারে রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার করে থাকেন, যাতে গাছের ক্ষতি হয়। পরবর্তী সময়ে রোগপোকা দমনে সুনির্দিষ্ট কীটনাশক আর সেভাবে কাজ করে না।

কোল্ড ইনজুরি থেকে আমগাছকে বাঁচাতে পানি স্প্রে করা যেতে পারে। কুয়াশার কারণে ছত্রাকের আক্রমণ রুখতে কিংবা আমগাছে কালোক্ষত বা অ্যানথ্রাকনোস রোগ প্রতিরোধে কার্বেন্ডাজিম ২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে গুলে স্প্রে করতে হবে। মুকুল আসার মুখে যদি আম ও লিচুগাছে শোষক পোকার আক্রমণ দেখা যায়, তা হলে ইমিডাক্লোরোপ্রিড ১ মিলি প্রতি তিন লিটার পানিতে গুলে আঠা সহযোগে স্প্রে করতে হবে।

পৌষ-মাঘ মাসে আম ও লিচু বাগানে পানিসেচ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সময় মাটিতে রসের অভাব ঘটলে ঠিকমতো ফুল ফোটে না। ফলের বৃদ্ধি ভালো হয় না। মাটিতে রসের পরিমাণের উপর নির্ভর করে শীতকালে ১৫ দিন অন্তর পানি সেচ দেওয়া দরকার। পৌষ মাসে পুরনো আম বাগানের রোগপোকা আক্রান্ত এবং শুকনো ডালপালা কেটে সেই অংশে ছত্রাকনাশক দিতে হবে। মিলি বাগ বা দয়ে পোকা নিয়ন্ত্রণে গাছের গোড়ার মাটি হাল্কা করে কুপিয়ে নিমখোল প্রয়োগ করা দরকার। বোরনের ঘাটতি থাকলে প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম সোহাগা মিশিয়ে গাছের প্রয়োজন অনুযায়ী স্প্রে করতে হবে।

নতুন লাগানো গাছে যদি কুঁড়ি চলে আসে তা হলে তা ভেঙে দিতে হবে। শুলিপোকা আক্রান্ত গাছের ডগা ভেঙে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। পাউডারি মিলডিউ রোগ দমনে গন্ধক গুঁড়ো ২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে গুলে স্প্রে করলে সুফল পাওয়া যায়। উদ্যানপালন আধিকারিকরা বলছেন, জাবপোকা দমনে বুপ্রোফেজিন ও অ্যাসিফেট দুই মিলিলিটার প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা যেতে পারে।

অনেক কৃষক আগে জাবপোকা দমনে শুধুমাত্র ইমিডাক্লোপ্রিড ব্যবহার করতেন। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে তাতে খুব ভালো ফল পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে এখন ইমিডাক্লোপিড ও অ্যাসিফেট একসঙ্গে মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। স্প্রে সবসময় বিকেলের দিকে আঠা সহযোগে করতে পারলে ভালো। জাবপোকা রোধে চটপানিদি ফল পেতে অনেক কৃষক প্রচুর পরিমাণে সিন্থেটিক পাইরিথ্রয়েড প্রয়োগ করেন। এতে বিপত্তি ঘটে।

This post has already been read 5064 times!

Check Also

আমন ধানে ব্রাউন প্ল্যান্ট হপার আক্রমণ: ফলনের ক্ষতি ও করণীয়

ড. মো. মাহফুজ আলম: বাংলাদেশে ধান প্রধান ফসল হিসেবে পরিচিত এবং এর উৎপাদন গ্রামীণ অর্থনীতির …