ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা) : তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশা অব্যাহত থাকায় খুলনায় ইরি-বোরো ধানের বীজতলা নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের কৃষকরা। এমন শীত ও ঘন কুয়াশা আরো ২/১ সপ্তাহ অব্যাহত থাকলে এই বোরো ধানের বীজতলার বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বলছে, এখন পর্যন্ত ঘন কুয়াশায় ও শৈত্যপ্রবাহে খুলাণাঞ্চলে কৃষির কোনো ক্ষতি হয়নি। তবে এ অবস্থা চলতে থাকলে বীজতলার ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিবে।
গতকাল (শনিবার) সরেজমিন দেখা গেছে, জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার সর্বত্রই বোরো ধান চাষের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। প্রায় স্থানেই বোরো ধানের বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। কোথাও জমি চাষ দিয়ে বীজতলা তৈরির প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। কৃষি বিভাগের ধারণা কুয়াশাছন্ন আবহাওয়ার কারণে বীজতলা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা কম। তবে বীজতলা ঢেকে দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ।
উপজেলার থুকরা গ্রামের কৃষক আ. জলিল জানান, শৈত্য প্রবাহ ও ঘন কুয়াশার কারণে বোরো ধানের বীজতলার চারাগাছ হলুদ হয়ে গেছে। ছত্রাকনাশক পাউডার স্প্রেসহ ঢেকে রাখা হয়েছে। এর পরও যদি চারা নষ্ট হয় তাহলে পুনরায় বীজ বপন করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।
খুলনা জেলার অধিকাংশ স্থানে কৃষকরা এই মৌসুমি ধানের বীজতলা রক্ষার জন্য পলিথিন কাগজ টাঙ্গানোসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। ডুমুরিয়ায় বোরো আবাদ ও বীজতলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে এ অঞ্চলের কৃষকরা।তীব্র শীতে কোল্ড ইনজুরি ও বৃষ্টির পানিতে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে অনেক বীজতলা।একে তো ধানের দাম কম,তার উপর নানা প্রতিকুলতায় ঝুঁকির মধ্যদিয়ে চাষাবাদ শুরু করেছে বোরো চাষীরা।অনেক চাষীরা আবার মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে চাষাবাদ থেকে।তবে উপজেলা কৃষি অফিস বলছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও এ বছর বেশী বোরো আবাদ হবে।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি বোরো মৌসুমে ডুমুরিয়া উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে ৪০টি ব্লকে ২১ হাজার ৩’শ ১৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে ২’শ হেক্টর জমি বেশি। এজন্য ৮’শ ১৫ হেক্টর জমি বীজতলার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।চলতি বছরের ১৫ নভেম্বর থেকে নানা প্রতিকুলতা অতিক্রম করে বীজতলার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে চাষিরা।
এ নিয়ে কথা হয় বোরো চাষী রুপরামপুর এলাকার শিবুপদ জোর্দ্দারের সাথে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গত বছর ৮বিঘা জমিতে বোরো চাষ করেছিলাম।এ বছর মাত্র ৩বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করছি। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ধানের দাম কম তাই, তাছাড়া বর্গাচাষী মিলছে না যে কারণে ৫বিঘা জমি ফেলে রাখতে হচ্ছে।
অপর এক বোরো চাষী মাগুরখালী ইউনিয়নের শেখেরট্যাক এলাকার মুনছুর আলী সরদার জানান, এ বছর আমন চাষে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। তাই বাধ্য হয়ে ৩৫ বিঘার পরিবর্তে এ বছর ৫০বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করছি। ধানের দাম কম থাকলেও উপায় নাই, জমি মালিকের হারির টাকা তো পরিশোধ করতে হবে।
বীজতলা নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্থ চাষী খলশি এলাকার মাজিদা বেগম জানান, স্বামী-স্ত্রী মিলে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বোরো আবাদ করছি কিন্তু কঠিন শীত ও বৃষ্টির পানিতে আমাদের আশপাশ এলাকায় বীজতলা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একদিকে বৃষ্টির পানি নিস্কাশন অন্যদিকে ঘন কুয়াশার হাত থেকে রেহাই পেতে হিমশিম খাচ্ছি আমরা। তিনি আরো বলেন, ঝুঁকির মধ্যদিয়ে চাষাবাদ শুরু করেছি। ধানের দাম ভালো পেলে ভালো, অন্যথায় জমি মালিকের হারির টাকা পরিশোধ করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।
বোরো আবাদ ও বীজতলা নিয়ে কথা হয় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছাদ্দেক হোসেনের সাথে। তিনি জানান, এ বছর আমন আবাদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অন্য বছরের চেয়ে চাষিরা বোরো আবাদে ঝুঁকে পড়েছে এমনটি উল্লেখ করে তিনি বলেন, বোরো আবাদ ও বীজতলা নিয়ে আমাদের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে পড়েই আছে। ঘন কুয়াশার হাত থেকে বীজতলা রক্ষা করতে বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখা, ভোরে পানি ছিটানোসহ নানা পরামর্শ দেয়া হচ্ছে কৃষকদের। ধানের মহামারি ব্লাস্টের হাত থেকে রক্ষা পেতে ব্রি-৫৮,৬৭,৮১,উফশি এসএল-৮এইচ,হীরা-৪,১৯ ও মিতালী-৪ জাতের বোরো চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া ধান রোপন ও কর্তনের জন্য এবছর কৃষকদের মাঝে ৪টি কম্বাইন্ড হারভেস্ট ও ২৪টি রিপার মেশিন ভূর্তুকীর মাধ্যমে বিতরন করা হয়েছে।এতে কিছুটা হলেও কৃষকের উৎপাদন খরচ কমবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।