নিজস্ব প্রতিবেদক: শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) বাংলাদেশ ফিস ফারমার্স এসোসিয়েশন(BFFA) এর আয়োজনে ময়মনসিংহের ASPADA ট্রেনিং একাডেমিতে দেশের বিভিন্ন জেলার মৎস্য খামারিদের নিয়ে ‘মৎস্য চাষি সম্মেলন, ট্রেইনিং ও পিকনিক’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিএফএফএ সভাপতি হামিদুল হক এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সারাদেশের ৪০টি জেলা থেকে প্রায় ৩৫০ জন খামারী অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আহসানুল আলম জন। সম্মেলনে তেলাপিয়া মাছের YY প্রযুক্তি নিয়ে আলোচনা করেন নেদারল্যান্ডের বিখ্যাত ইকোলজিস্ট Eric Binc. এছাড়াও অন্যদের মধ্যে বক্তব্য প্রদান করেন মৎস্য অধিদপ্তরের সাবেক উপ-পরিচালক ম. কবির, ফিসটেক হ্যাচারি লিমিটেড -এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারেক সরকার, এমকে হ্যাচারির পরিচালক উইং কমান্ডার (অবঃ) মাইনউদ্দিন আহমেদ ও বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শাহ ইমরান। অনুষ্ঠানে বায়োফ্লক প্রযুক্তি বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন ছদর আমিন, হালদা ফিসারিজ।
দিনব্যাপী অসংখ্য খামারিদের পদচালনা মুখরিত ASPARADA ট্রেনিং সেন্টারে এক আনন্দঘন পরিবেশের অবতারণা হয়। বক্তারা মৎস্য সেক্টরে বর্তমান সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের প্রশংসা করেন। এছাড়া বিএফএ’র উদ্যোগে খামারিদের বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিতকরণ এবং এর সমাধান কল্পে সরকারের সহযোগী অঙ্গ সংগঠন হয়ে কাজ করার ব্যাপারে সবাই একমত হন। তবে উপস্থিত খামারিরা অভিযোগ করেছেন সম্মেলনের পূর্ব থেকে ময়মনসিংহ অঞ্চলের কিছু হ্যাচারি মালিক উক্ত সম্মেলনে অংশগ্রহণ না করার জন্য বিভিন্ন হুমকি প্রদান করেছেন। এত বড় মৎস্য খামারি সম্মেলনে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা উপস্থিত না থাকাতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন আগত মাছ চাষিরা।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত মৎস্য অধিদপ্তরের সাবেক উপ-পরিচালক ম. কবির মৎস্য খাদ্য আমদানিতে সাম্প্রতিক পোর্ট জটিলতা ও সমস্যা সম্পের্কে বলেন, চাষ করা মাছ হারাম-নাকি হালাল খেল সেটি নিয়ে উনাদের মাথা ব্যাথা, তাহলে প্রাকৃতিক মাছেরা হারাম-হালাল খায় কিনা সেটার গ্যারান্টি কীভাবে দিবেন। ভালো খাদ্য ব্যবহারকে গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, মাছ চাষে ভালো খাদ্য না হলে ভালো বৃদ্ধি হবেনা। এ সময় তিনি স্রিম্প চাষিদের এসোসিয়েশন থাকার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেন।
ফিসটেক হ্যাচারি লিমিটেড -এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারেক সরকার বলেন, মাছ চাষে আমরা হয়তো অনেকদূর এগিয়েছি কিন্তু আমাদের ভিত্তিটা ওতটা মজবুত নয়। যেকোন ভালো ও উৎপাদনমুখী কাজ করতে হলে এসোসিয়েশন থাকার দরকার আছে। সাম্প্রতিক ফিড আমদানি নিয়ে জটিলতার কারণে আমাদের চেয়েও চাষিরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
তিনি বলেন, সারা বিশ্বের মানুষ নিরাপদ খাদ্য নিয়ে এখন সচেতন। শুধু উৎপাদনমুখী চিন্তা করলেই হবেনা, আমাদের নিরাপদ মাছ উৎপাদনের দিকে সর্বোচ্চ নজর দিতে হবে। মাছের ন্যায্য মূল্য পেতে হলে রপ্তানিমুখী বাজার গড়ে তুলতে হবে। অন্যথায় এদেশের মৎস্য শিল্প কখনোই টেকসই অবস্থানে পৌঁছাতে পারবেনা। রপ্তানি বাজারের অন্যতম পূর্বশর্ত নিরাপদ খাদ্য তথা মাছ উৎপাদন। এ সময় তিনি নিরাপদ মৎস্য খাদ্য উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক ল্যাব ও নিরাপদ খাদ্য তৈরির উপকরণ পাওয়ার সহজলভ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন। এছাড়া মৎস্য ফিড আমদানি বন্ধ হওয়াতে স্থানীয় কোম্পানিরা মাছের ফিডের দাম হঠাৎ করেই বৃদ্ধি করাতে এর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন।
বিএফএফএ সভাপতি হামিদুল হক বলেন, কিছু লোক দাবী করেন আমরা মাছ চাষিদের এসোসিয়েশন করেছি। কিন্তু আমার প্রশ্ন মাছ চাষিদের জন্য তাহলে এতদিন তারা কি করেছেন? মাছ চাষ কৃষির অন্তর্ভুক্ত হলেও বিদ্যুৎ বিলের সমস্যার সুরাহা হয়নি। মাছ চাষিদের উন্নয়নে সরকার বিভিন্ন প্রকল্প নিলেও সেগুলোর সুবিধাভোগী অমৎস্যজীবীরা।
বিএফএফএ সাধারণ সম্পাদক আহসানুল আলম জন বলেন, জাতিসংঘ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০ অর্জনে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের সহযোগিতার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে সর্বতোভাবে সহায়তা করা হবে। ১৯৭২ সালে জাতির জনকের ঘোষিত মৎস্য শিল্পে দ্বিতীয় প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের এই স্বপ্ন পূরণের বিএফ এফ এ কাজ করে যাবে। এ সময় তিনি সংগঠনকে শক্তিশালীকরণের মাধ্যমে মৎস্য চাষিদের জীবনমান উন্নয়নে সকলকে ঐক্যবদ্ধ করার ব্যাপারে সহযোগিতা চান।
অনুষ্ঠানে আগত চাষিরা তাদের বিভিন্ন সমস্যা ও টেকনিক্যাল বিষয়ে প্রশ্ন করেন এবং আগত অতিথিরা সেগুলোর উত্তর দেন। এছাড়াও শিং, মাগুর, পাবদা ও গুলশা মাছ চাষ সম্পর্কে চাষিদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন ময়মনসিংহের ফুলপুরে অবস্থিত দৌলৎ হ্যাচারি’র স্বত্তাধিকারী রিফাত আহমেদ। চিংড়ি ও সাদা মাছ সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন চিংড়ি চাষী পলাশ রহমান।
দেশের মৎস্য রাজধানী হিসেবে খ্যাত ময়মনসিংহ বিএফআরআই এবং ডিও -এর কিছু অসাধু কর্মকর্তার কারণে প্রকৃত খামারিরা কাঙ্ক্ষিত সেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে এ সময় আগত চাষিরা অভিযোগ করেন। এই ব্যাপারে তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। এ সময় সংগঠনের নেতারা বিএফএফএ -এর উদ্যোগে সারা বাংলাদেশে সাংগঠনিক সফরের মাধ্যমে খামারিদের প্রশিক্ষণ এবং তাদের অধিকার আদায়ে সংঘবদ্ধভাবে কাজ করার ব্যাপারে বদ্ধপরিকর বলে উল্লেখ করেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত মৎস্য চাষিদের জন্য র্যাফেল ড্র’র আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএফএফএ সাংগঠনিক সম্পাদক ইব্রাহিম খলিল, কোষাধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমান, দপ্তর সম্পাদক মাজহারুল নাজিম (মাযহার), ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক নাঈম মাজহার, সহ সাধারণ সম্পাদক রিফাত আহমেদ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক নাসের চৌধুরী।