ফকির শহিদুল ইসলাম(খুলনা) : শীত আসে। সেই সঙ্গে হাজির হয় পিঠা উৎসব। এ সময় টাটকা চালে তৈরি করা হয় বাহারি পিঠা পুলি। পিঠার সেই মৌ মৌ গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে মূলত ঋতুর প্রথম ভাগ থেকে। এই হলো দেশ ও প্রাণের কথা। শহরে কিংবা প্রবাসেও নরনারীরাও এই আয়োজন থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে চান না। তারা ছেলেমেয়ে বা প্রিয়জনদের সামনে আনেন মুখরোচক হরেক রকম সব পিঠা। শীত মৌসুমে ধানে ভরে যায় বাড়ির গোলা। আর এই শীতের সময়ে প্রকৃতির আরেক দান খেজুরের রস। ছেলে মেয়েদের স্কুল ছুটি হয়ে যায়। সবাই গ্রামের বাড়ি ছুটে এই শীতের হরেক রকমের গ্রামীন ঐতিহ্য পিঠা উৎসবে মেতে উঠে আত্মীয় স্বজনদের ঘরে ঘরে পিঠার ধুম পড়ে যায়। এটা শাশ্বত বাংলার ছবি। শহরে এই আনন্দ পাওয়া দুষ্কর। সেই নদী, সেই প্রকৃতি, কোথায় মিলবে! তারপরও এর প্রভাব থেকে কোন বাঙ্গালীর মুক্ত থাকা যায় না। এটা রক্ত মাংসে জড়ানো যে। আমাদের বাঙালিরা চিরকালই অতিথি পরায়ণ।এ সামাজিক বন্ধনটিও শক্ত তাদের। কাউকে না বলে তারা খায় না। সবাই মিলে এক জায়গায় হবে। খাবে, আনন্দ করবে-সে আনন্দের ভাগ সবাই পাবে। এ জন্যই শীতকালীন পিঠা উৎসবের আয়োজন।
খুলনা মহানগীর যান্ত্রীক জীবনে একটু গ্রামীন ঐতিহ্যের ছোয়া দিতে আবহমান বাংলার কৃষ্টি ও কালচারের শীতের পিঠা উৎসব যেন বাড়তি আয়োজন। খুলনা সরকারি মহিলা কলেজের উদ্দোগে শুরু হয়েছে দিনব্যাপী পিঠা খাওয়ার উৎসব। আর আনন্দ উপভোগ করতে হাজার হাজার ছাত্রী-শিক্ষক যোগ দিয়েছেন পিঠা খাওয়ার উৎসবে।
যান্ত্রিক নগর জীবনে পিঠাপুলির স্বাদ নিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে শনিবার (১১ জানুয়ারি) কলেজ ক্যাম্পাসে দিনব্যাপী এ উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান। বিশেষ অতিথি ছিলেন খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র আলহাজ্ব তালুকদার আব্দুল খালেক, খুলনা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হারুনুর রশিদ, খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি ড. খ. মহিদ উদ্দিন, খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার সরদার রাকিবুল ইসলাম, খুলনা জেলা পুলিশ সুপার এসএম শফিউল্লাহ।
পিঠা উৎসবে সভাপতিত্ব করেন খুলনা সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর টি এম জাকির হোসেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর সমীর রঞ্জন সরকার, উৎসবের প্রধান সমন্বয়কারী প্রফেসার মোঃ শাহজালাল, কলেজের শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক খান আহমেদুল কবীর চায়নীজসহ অন্য শিক্ষকরা। উৎসবে পিঠার স্টলগুলো পরিদর্শন করেছেন আমন্ত্রিত অতিথিরা। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নাচ-গান পরিবেশন করেছেন খুলনার আঞ্চলিক গানের সম্রাট গুরুপদ গুপ্তসহ কলেজের ছাত্রীরা। এদিন কেউ পিঠা খাওয়ায়, কেউ দেখায়, আবার কেউ ব্যস্ত ছিলেন সেলফি তোলায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, হরেক রকম পিঠার পসরা সাজিয়ে স্টল দিয়ে বসেছেন কলেজের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। উৎসবের শুরু থেকেই ভিড় করেছেন তরুণীরা। কত বাহারি নামের পিঠাপুলি যে সাজানো! বাড়িতে এত সব পিঠা একসঙ্গে তৈরি করা সম্ভব হয় না, কিংবা ব্যস্ততার কারণেও হয়ে ওঠে না। এ কারণে উৎসব থেকে পিঠা বাসায় নিয়ে যেতে দেখা যায় অনেককেই।
খুলনা সরকারি মহিলা কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক বিকাশ রায় বলেন, বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসের সঙ্গে মিশে আছে নিজস্ব খাদ্যাভ্যাস, যার একটি স্বতন্ত্র অনুষঙ্গ পিঠাপুলি। শীতের দিনে দেশের নানা অঞ্চলে পিঠা তৈরি করা আমাদের দেশের ঐতিহ্য। কিন্তু যান্ত্রিক জীবনের কারণে এখন অনেকেই তা আর করতে পারেন না। একারণে পিঠা উৎসবে এসে তারা পিঠার স্বাদও নিতে পারছেন, আবার বিভিন্ন পিঠার সঙ্গে পরিচিতও হতে পারছেন।
কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর টি এম জাকির বলেন, কালের বিবর্তনে পিঠার ঐতিহ্য স্লান হয়ে আসছে। একসময় শুধু গ্রামের মানুষই পিঠা খেতো। শহুরে ব্যস্ততার কারণে পিঠার স্বাদ নিতে নগরজীবীদের কেউ গ্রামে গিয়ে পিঠা খেয়ে আসতো অথবা গ্রাম থেকে শহরে বসবাসকারী প্রিয়জনদের জন্য পিঠা তৈরি করে পাঠাতো স্বজনেরা। গ্রামবাংলার মানুষের চিরায়ত ঐতিহ্য পিঠাপুলিকে শহরবাসীর কাছে পরিচিত করতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে এ পিঠা উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। পিঠা উৎসবে সাবেক শিক্ষার্থীদের একটি ও মায়েদের একটিসহ বিভিন্ন বিভাগের ছাত্রীদের মোট ২১টি স্টল রয়েছে।