মো. খোরশেদ আলম (জুয়েল): নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রতিটি সেক্টরে যেমন কিছু সম্ভাবনা থাকে সেই সাথে থাকে কিছু চ্যালেঞ্জ। সেক্টর যত বড় হবে সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ তত সামনে আসবে এবং দূরদৃষ্টিসম্পন্ন বিনিয়োগকারীরা সেটিকে মাথায় রেখেই পথ চলে। অপরিপক্ব বিনিয়োগকারীর সামনে যেটি হয়তো সমস্যা, পরিপক্ব বিনিয়োগকারীদের কাছে সেটিই আবার সম্ভাবনা। দেশের মানুষের প্রোটিন যোগানের অন্যতম উৎস পোলট্রি শিল্প এর বাইরে নয়। সেক্টরটি বিগত এক দশকে যেমন দারুন গ্রোথ হয়েছে বর্তমানে তেমন নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ সামনে আসছে।
পোলট্রি শিল্পে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অন্যতম। একটা সময় ছিল যখন পোলট্রি শিল্প বিকাশ শুরু হয় তখন হয়তো এতসব ভাবার সময় ছিলনা। সে সময় জায়গাও ছিল, সরকারি নীতি কাঠামোও অনেক দূর্বল ছিল। তবে দিন যাচ্ছে জমি কমছে, সেই সাথে সরকারি নীতি কাঠামো কঠিনতর হচ্ছে। এখন যেভাবেই চলছে সামনের দিনগুলোতে যত্রতত্র পোলট্রি বর্জ্য আবর্জনা যত্রতত্র ফেলার সুযোগ একেবারেই কমে যাবে। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে দেশের বড় বড় পোলট্রি জায়ান্ট কোম্পানিগুলো ভাবছে এবং সে অনুযায়ী পদক্ষেপও নিচ্ছে। পোলট্রি বর্জ্যকে তারা এখন আর সমস্যা ভাবছেনা বরং সম্ভাবনা হিসেবে দেখছে। কারণ, এই বর্জ্য দিয়ে যেমন উৎপাদন করা যায় বিদ্যুৎ তেমনি জৈব সার। এর দুটোই নিজেদের চাহিদামতো যেমন ব্যবহার করা যায়, তেমনি বিক্রিও করা যায়। প্রতিকেজি জৈব সারের বর্তমান বাজার মূল্য কম-বেশি ১৫টাকা। তারমানে দাড়াচ্ছে একের ভেতর দুই- এক. সমস্যা গেল, এবং দুই. সমস্যাকে সম্ভাবনা বানিয়ে বাণিজ্যও হলো।

বর্তমানে দেশে পোলট্রি শিল্পে ৩০ হাজার কোটি টাকার ওপরে বিনিয়োগ রয়েছে এবং ২০৫০ সনে সেটির পরিমাণ দ্বিগুণ হবে বলে আশাবাদ ব্যাক্ত করছে সংশ্লিষ্টগণ। পোলট্রি তাই কেবল ব্রয়লার মুরগির মাংস ও ডিম খাওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। মাংস ও ডিম দিয়ে প্রক্রিয়াজাত খাবার ভোক্তাদের টেবিলে পৌঁছে দেয়ার জন্য গড়ে উঠছে বিভিন্ন প্রসেসিং প্লাণ্ট। ইতোমধ্যে তারা দেশের বাজারে বিপণনের পাশাপাশি বিদেশের বাজারে প্রবেশের চেষ্টাও করছেন। তারমানে, পোলট্রি বর্জ্য কেবল এখন আর পোলট্রি লিটারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, বরং এর সাথে যোগ হচ্ছে হ্যাচারি, প্রসেসিং প্লাণ্ট এবং ফার্মের অন্যান্য বর্জ্য। তবে সুখবর হলো এসব কারখানা থেকে উৎপাদিত বর্জ্য কাজে লাগানো হচ্ছে কিংবা কাজে লাগানোর সুযোগ আছে। তবে সেগুলো কীভাবে?
এ সম্পর্কে পোল্ট্রি বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য প্রয়োজনীয় টেকনোলজি ও মেশিনারি সরবরাহকারী স্বনামধন্য কোম্পানি এক্সোন লিমিটেড (AXON LIMITED) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহিদুল ইসলাম বলেন, যে কোন কৃষিজাত শিল্প বিশেষ করে পোল্ট্রি শিল্প দীর্ঘমেয়াদী এবং স্থায়িত্বশীল করতে হলে ভার্টিক্যাল পদ্ধতিতে সম্প্রসারণ এর কথা চিন্তা করতে হবে | শুধুমাত্র সাধারণ উৎপাদন দিয়ে চিন্তা করলে এসব ব্যবসায় মুনাফা বের করা কঠিন বরং ভ্যালু এডেড/ বাই প্রোডাক্ট তৈরি এবং শিল্পে উৎপাদিত বর্জ্য আবর্জনাকে সম্ভাবনাময় সম্পদে পরিণত করতে হবে|
জাহিদুল ইসলাম বলেন, সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও পোল্ট্রি ফার্ম, হ্যাচারি এবং প্রসেসিং প্লান্ট থেকে উৎপাদিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা একটি সাম্প্রতিক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে | বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটা খুবই স্পর্শকাতর পর্যায়ে আছে | আমাদের ভূমি স্বল্পতা, ঘনবসতি, অপরিকল্পিত শিল্পায়ন এবং গ্রীষ্ম প্রধান জলবায়ু এর জন্য দায়ী | এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য আমাদেরকে, বায়োসিকিউরিটি উন্নতির মাধ্যমে পরিবেশ সংরক্ষণ করে বর্জ্য এবং আবর্জনাকে সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সম্পদে রূপান্তরিত করা সময়ের চাহিদা|
বর্তমান বিশ্বে পোল্ট্রি বর্জ্য কে এখন আর কোন সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয় না বরং সম্ভাবনাময় প্রকল্প হিসেবে দেখা হচ্ছে কারণ এ জাতীয় বর্জ্য দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি গুণগত মানসম্পন্ন জৈব সার উৎপাদন করা হচ্ছে.|
তিনি বলেন, ভূমির স্বল্পতা, বিনিয়োগের আকার এবং পণ্যের গুণগতমান এর ওপর ভিত্তি করে সার্বিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কয়েকটি ভালো সমাধান রয়েছে। আমাদের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে মুরগির বিষ্ঠা ও অন্যান্য বর্জ্যকে কম্পোজিট প্লান্ট এর মাধ্যমে টানেল ভেন্টিলেশন এবং ড্রাইং পদ্ধতিতে প্রক্রিয়াজাত করে গুণগত মানসম্পন্ন গুড়া অথবা দানাদার জাতীয় অর্গানিক/জৈব সারে রূপান্তরিত করা। এছাড়া পোল্ট্রি ফার্ম এর অন্যান্য বর্জ্য, মুরগির প্রক্রিয়াজাত খামারের বর্জ্য থেকেও আমাদের রেন্ডারিং টেকনোলজি ব্যবহারের মাধ্যমে উচ্চমাত্রার আমিষ জাতীয় পোল্ট্রি মিল উৎপাদন করা যায় থাকে যা আমরা মাছ ও গবাদিপশুর খাবার তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।
জাহিদুল ইসলাম আরো বলেন, আমরা ইউরোপের অন্যতম প্রযুক্তি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এবং এশিয়ার অন্যতম কোম্পানির প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে মুরগির বিষ্ঠা,হ্যাচারি বর্জ্য ও ফার্মের অন্যান্য আবর্জনা দিয়ে অর্গানিক সার বা জৈব সার এবং প্রোটিন মিল তৈরি করে থাকি, যা বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা পালন করে আসছে |
আমরা দীর্ঘদিন যাবত বাংলাদেশের মার্কেটে এ ধরনের কাজ করে আসছি। সুতরাং এ ধরনের পরিসেবা গ্রহণের জন্য আমাদের সাথে নির্দ্বিধায় যোগাযোগ করার অনুরোধ করা হলো।