ফারুক আলম (লালমনিরহাট প্রতিনিধি): তামাকজাত দ্রব্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিগত কয়েক দশক থেকে লালমনিরহাট জেলা, বিশেষ করে আদিতমারী উপজেলাটি তামাক চাষের স্বর্গরাজ্যে রুপান্তরিত হয়েছে। অবাক করার মত বিষয় হচ্ছে, জেলা এবং জেলার বাহিরের গণমাধ্যম এবং সমাজকর্মীরা দশকের পর দশক এই তামাক চাষের বিরোধীতা করে আসলেও বন্ধ হয়নি এই বিষ বৃক্ষের চাষ!
অনুসন্ধান করতে গিয়ে বিভিন্ন সুত্র থেকে জানা যায়, দেশে অবস্থিত তামাকজাত কোম্পানিগুলো চাষিদের উদ্ভুদ্ধ করার জন্য বেছে নিয়েছে ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির মতো নীলচাষের পদ্ধতির দাদন ব্যবসা। যদিও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মতো চাক্ষুষ কোন অত্যাচার চক্ষুগোচর হয়না। দেশের তামাকজাত দ্রব্যের কোম্পানিগুলো চাষিদের হাতে তুলে দিচ্ছে বীজ, সার সহ নগদ অর্থের মত সুযোগ সুবিধা এবং উৎপাদিত তামাক ক্রয়ের জন্য হাতে ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে ‘কার্ড‘। এই কার্ড দেখিয়েই নির্দিষ্ট কোম্পানির কাছে বিক্রি করতে হচ্ছে উৎপাদিত তামাক। আবার উৎপাদিত সেই তামাক, কাচা থেকে নির্দিষ্ট তাপে শুকিয়ে তারপর বিক্রয়ের উপযোগি করতে হয়।
জানা যায়, তামাকের গাছ থেকে পাতা ছিড়ে, কয়েক দফায় তা চাষিকেই প্রক্রিয়াজাত করতে হয়। একটু তাপ বা আবহাওয়ার গড়মিলে শুকনো তামাক পাতার রং পছন্দসই না হলে, তামাক কেনেনা কোম্পানিগুলো। এরকম বেশ কিছু হয়রানির পরেও,তামাক চাষিরা অন্য ফসলের চেয়ে একটু বেশি লাভের আশায় এই তৃণবৃষের চাষ করতে বাধ্য হচ্ছে।
তামাক চাষীদের কাছে তামাক চাষের তথ্য জানতে চাইলে উঠে আসে ভয়ঙ্কর রকম খাটুনির কথা। জমি চাষের পর, গোবর সারের সাথে রাসায়ানিকর সার একত্রিত করে কম্পোষ্ট করে দীর্ঘদিন রাখা, সারি থেকে সারির দূরত্ব ২৭ ইঞ্চি, চারা থেকে চারার দূরত্ব ২৩ ইঞ্চি। তারপর সেচ দিয়ে চারা বড় হলে, প্রতিদিনই একবার করে ক্ষেতে যেতে হয়। দেড় মাস পরে তামাকের গোড়ার পাতা, নতুন কুড়ি, অবাঞ্ছিত পাতা ভেঙে দিতে হয়। কীটনাশক ও সার সার প্রয়োগ করতে হয় নিয়মিত। তারপর তামাক পাতা ভেঙে বিক্রয় উপযোগিতার দিকে নজর দিতে হয়।
আদিতমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোহাম্মদ আলী নুর রহমানের কাছে তামাকের তথ্য নিতে গেলে তিনি জানান, আদিতমারী উপজেলায় অফিসের হিসেবে এবার ২৮ হেক্টর জমিতে চামাক চাষ হয়েছে। তামাক চাষের ভয়াবহতার কথা উল্লেখ করে তিনি জানান, তামাক চাষ মানে বিষ চাষ, তামাক গাছ ভূমির মূল উপাদানগুলো শোষন করে। আশেপাশের পরিবেশ দুষন করে। একজন কৃষিবিদ হিসাবে তিনি তামাক চাষ কাম্য করেন না।