র ই রনি (পাবনা) : আমাদের দেশের বিশ্ববরেণ্য উদ্ভিদ বিজ্ঞানী স্যার জগদীশচন্দ্র বসু উদ্ভিদের অনুভূতি আছে আবিষ্কার করে প্রমাণ করেছেন যে, উদ্ভিদেরও আবেগ অনুভূতিম আছে। অন্যান্য প্রাণিদের মতো উদ্ভিদও আঘাত পেলে কষ্ট পায়। পেরেক ঠুকে গাছের জীবন হরণকারী ব্যবসায়ীরা তা বুঝতে না পেরে নির্মম ও নিষ্ঠুর কাজটি নির্দ্বিধায় করেই চলছে বহু বছর ধরে।
পাবনার সাধুপাড়ার ঐতিহ্যবাহী তিনটি বটগাছে পেরেক ঠুকে বিভিন্ন ক্লিনিকের ডাক্তার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কোচিং সেন্টার, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, হাজাম, বাড়ি ভাড়া, রাজনৈতিক ব্যানার বিজ্ঞাপন লাগানো হয়েছে। পেরেক ঠুকে গাছে বিজ্ঞাপন লাগানো আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।
মানুষের মতো গাছেরও অনুভূতি রয়েছে। শরীরে কাঁটা বিধলে আমরা যে রকম ছটফট করি, কষ্ট পাই, গাছে লোহা বা অন্য কিছু ঢুকালে তারও সে রকম কষ্ট হয়। গাছ আমাদের অক্সিজেন দেয়, ফুল-ফল সবই দেয়, অথচ আমরা সেই গাছকে বিজ্ঞাপনের বুথের মতো ব্যবহার করি। হাতুরি আর পেরেক দিয়ে গাছে যে কোনো বিজ্ঞাপন সহজে লাগানো যায়। তাই গাছে বিজ্ঞাপন লাগানো হচ্ছে নির্দ্বিধায়।
এ সম্পর্কে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষক ড. মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, যেকোনো ধরনের উদ্ভিদে কেউ যদি ধাতব শলাকা গাঁথে তাহলে শেঁকর থেকে জায়লেম ও ফ্লোয়েম তন্তুর মাধ্যমে খাবার পরিবহনে বাঁধাপ্রাপ্ত হয় এবং প্রস্বেদন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গাছ মাটি থেকে সংগৃহীত পানি পাতার মাধ্যমে বের করে দেয়। সেই পরিবহন নালি বাঁধাপ্রাপ্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ফলে উদ্ভিদ কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। উদ্ভিদ কোষের বৃদ্ধি ব্যাহত হয় ও ক্ষত তৈরি হয়।
তিনি বলেন, গাছ প্রাকৃতিক সম্পদ। সেই গাছে ব্যানার ফেস্টুন লাগানোর ফলে তার স্বাভাবিক সৌন্দর্য নষ্ট হয় এবং বাতাসের নাইট্রোজেন ও কার্বন চক্র বাধাগ্রস্ত করে।
পাবনা শহরের সাধু পাড়ায় বসবাসকারি বাংলাদেশ কৃষিজ লোক-সাংস্কৃতিক পরিষদের আহ্বায়ক তমাল তরু বলেন, আঘাত পেলে আমাদের যেমন রক্ত বের হয়, তেমনি গাছকে আঘাত করলে এক ধরনের রস বের হয়। পেরেক ঠোকার কারণে ইনফেকশনজনিত কারণে অনেক গাছ মারা যায়।
তিনি বলেন, জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বটগাছ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে অনেক পাখি এই বটগাছের বুকে আশ্রয় নেয় মাঝে মাঝে আমরা কিছু হনুমান দেখি এই গাছগুলোতে চরে বসে থাকে। বটগাছে এভাবে পেরেক মারতে থাকলে অচিরেই গাছগুলো মারা যেতে পারে। বিশ্বের প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় বটগাছ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তাই এদের রক্ষা করতে কঠোর আইন হওয়া দরকার।