ফকির শহিদুল ইসলাম : রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকদের বিশেষ করে পাটকল শ্রমিকদের ২০১৫ সালের ঘোষিত জাতীয় মজুরী কমিশন স্কেলে সাপ্তাহিক মজুরী প্রদানে উচ্ছ্বসিত পাটকল শ্রমিকরা। আর এই মজুরী কমিশন বাস্তবায়নে শ্রমিকদের পাড়ি দিতে হয়েছে দির্ঘপথ। অবশেষে নতুন মজুরি কমিশন অনুযায়ী সাপ্তাহিক মজুরীর অর্থ হাতে পেয়েছেন খুলনার পাটকল শ্রমিকরা। খুলনাঞ্চলে বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) রাষ্ট্রায়ত্ত ৮টি পাটকলের নতুন মজুরি কমিশন অনুযায়ী সাপ্তাহিক হিসেবে দুটি সপ্তাহের মজুরির অর্থ স্ব স্ব ব্যাংক এ্যাকাউন্ট থেকে উত্তোলন করছেন। পাটকল কর্মরত টাইম রেট শ্রমিকদের আগে সপ্তাহিক মজুরি ছিলো গ্রেড ভিক্তিক ২ হাজার ১০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা। এখন তা বৃদ্ধি পেয়ে সাড়ে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা হয়েছে। দ্বিগুণ হারে মজুরি পেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন খুলনাঞ্চলের পাটকল শ্রমিকরা।
সারাদেশের রাষ্টায়ত্ব পাটকল শ্রমিকরা মজুরী কমিশন বাস্তবায়নসহ ১১দফা দাবীতে দির্ঘ সময় সভা,সেমিনার,গেটসভা,রাজপথ রেলপথ অবরোধ,দাফনের কাপর পরিধান করে মিছিল,রমজান মাসে রাজপথে ইফতার,আমরন অনশনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে । শ্রমিকদের আন্দোলনের ফলে সরকার বাধ্য হয়ে তাদের ন্যায্যদাবী মেনে নেয় । তবে কর্মরত শ্রমিকদের নতুন স্কেলে মজুরী দেয়ায় তারা যেমন উচ্ছাসিত তেমনি হতাশার ছাপ পড়েছে অবসর প্রাপ্ত শ্রমিকদের মাঝে । তারা দির্ঘ সময় অবসর গ্রহন করেও তাদের জমাকৃত প্রভিডেন্ট ফান্ড ও সরকার প্রদত্ব গ্রাইছুটির অর্থ না পেয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে রয়েছেন বিপাকে । কেননা যাদের চাকরী আছে তারা প্রতি সপ্তাহে মজুরী পান কিন্তু যে সকল শ্রমিকরা মৃত্যু বরন ও অবসরে গেছেন তারাতো কোন অর্থই পান না । সংগত কারনে তাদের পরিবারের অবস্থা বেশ নাজুক ।
অপরদিকে খুলনা অঞ্চলের ৯টি পাটকলের মধ্যে ৮টিতে শ্রমিকরা মজুরি পেয়েছেন। শুধু খুলনার আলিম জুট মিলের শ্রমিকরা এখনও মজুরি পাননি। এর প্রতিবাদে মিল এলাকায় বিক্ষোভ করেছে পাটকলটির শ্রমিকরা। বিজেএমসির খুলনা আঞ্চলিক সমন্বয়কারী মোঃ বনিজ উদ্দিন মিঞা বলেন, বৃহস্পতিবার সকালেই পাটকলগুলোতে মজুরির টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়। দুপুর ১২টা থেকে ৮টি মিলের গেটে স্থাপিত বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম বুথে শ্রমিকরা সাপ্তাহিক মজুরি উত্তোলন করার দির্ঘ লাইন। বৃহস্পতিবার গভীর রাত থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত শ্রমিকরা বুথে লাইন দিয়ে মজুরী উত্তোলন করছেন । ইতোপূর্বে এই ৮টি মিলের শ্রমিকদের সাপ্তাহিক মজুরি ছিলো প্রায় ৩ কোটি টাকা। নতুন মজুরি কমিশনের বর্ধিত হিসাব অনুযায়ী তাদের প্রায় বৃহস্পতিবার ৭ কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার খুলনার খালিশপুর শিল্পাঞ্চল এলাকা ঘুরে শ্রমিকদের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা গেছে। খুলনার প্লাটিনাম জুট মিলে দুপুর ১২টা থেকে মজুরি প্রদান শুরু হয়। সাপ্তাহিক মজুরির দ্বিগুণ টাকা হাতে পাওয়ায় খুশিতে উদ্বেলিত হয়ে পড়েন শ্রমিকরা। মজুরি পেয়ে একে অন্যকে জড়িয়ে ধরেন।
প্লাটিনাম জুট মিলের স্থায়ী শ্রমিক ফিরোজ মিয়া বলেন, আগে সারা সপ্তাহ কাজ করে দুই হাজার ৩০০ টাকা পেতাম। এতে সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে যেত। অনেকে এর চেয়েও কম টাকা পেতো। আজ সাড়ে ৪ হাজার টাকা পেয়েছি। দেরি করে হলেও আমাদের ন্যায্য পাওনা পেয়ে আমরা খুশী।অপরএক শ্রমিক মিজানুর রহমান বলেন, ২ সপ্তাহের মজুরি পেতাম ৩ হাজার ৬শ’ টাকা। নতুন স্কেলে ২ সপ্তাহের মজুরি পেয়েছি ৬ হাজার ৪শ’ টাকা।
প্লাটিনাম জুট মিলের সিবিএ সাধারন সম্পাদক হুমায়ন কবির বলেন, টাইম রেট শ্রমিকদের আগে সপ্তাহিক মজুরি ছিলো গ্রেড অনুযায়ী ২ হাজার ১০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা। এখন তা বৃদ্ধি পেয়ে সাড়ে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা হয়েছে। দ্বিগুণ মজুরি পেয়ে শ্রমিকরা খুশী। এখন দ্রুত বকেয়া অন্যান্য সপ্তাহের মজুরি পরিশোধ এবং অন্যান্ন দাবী বাস্তবায়নে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানাই।
পাটকল শ্রমিক ও নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৫ সালে পে-কমিশনের সঙ্গে মজুরি কমিশন ঘোষণা করা হয়। কিন্তু চার বছরেও রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলে কর্মরত শ্রমিকদের ঘোষিত মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন হয়নি। দীর্ঘ সাড়ে ৪ বছর আন্দোলনের পর শ্রমিকরা ডিসেম্বর মাস থেকে আমরণ অনশন শুরু করে। চলতি বছরের ২ জানুয়ারি সরকার মজুরি কমিশন বাস্তবায়নের ঘোষণা দেয়। সে অনুযায়ী চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি মিলগুলোতে পে-স্লিপ প্রদান করা হয়।
সূত্রটি জানায়, বৃহস্পতিবার মাত্র দু’টি সপ্তাহের মজুরি প্রদান করা হয়েছে। পাটকলগুলোর শ্রমিকদের ৬ থেকে ৯ সপ্তাহের মজুরি বকেয়া রয়েছে।