রবিবার , ডিসেম্বর ২২ ২০২৪

কালো বিন্নী চালের বৈশিষ্ট্য ও যত উপকারিতা

কালো বিন্নী চাল

মৃত্যুঞ্জয় রায় : কুচকুচে কালো রঙের চাল ফুটিয়ে যে ভাত হয় তার রঙও কালো। তবে খুব ভালভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে, ভাতের রঙ আসলে কালো নয়, বরং তা ঘন বেগুনি বা জাম রঙ। এজন্য এ চালকে কেউ কেউ বেগুনি চাল বা পার্পল রাইচও বলছেন। তবে কালো চাল বা ব্লাক রাইচ নামেই এ চাল পরিচিত। এ চালের বেশ মিষ্টি একটা ঘ্রাণ আছে, সাথে পাওয়া যায় বাদামের গন্ধ। এজন্য এ চালের স্বাদও সাদা চালের চেয়ে বেশি। এ ধানের ফলন তুলনামূলকভাবে কম। মণিপুরে প্রতি হেক্টরে এই ধানের ফলন পাওয়া গেছে ২৫০০ কেজি।

বিশ্বকবির ভাষায় ‘কালো সে যে যতই কালো হোক, দেখেছি তার কালো হরিণ চোখ।’ কালো হরিণ চোখ দেখে যেমন কালো মেয়ের রূপে মোহিত হয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, তেমনি কালো চালের উপকারিতা দেখে মোহিত পুষ্টি বিজ্ঞানীরা। পুষ্টি বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন যে, কালো চালের ভাত সাদা ভাতের চেয়ে অনেক বেশি পুষ্টি সমৃদ্ধ, স্বাস্থ্যকর এবং কালো চালের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা অনেক বেশি। বিশেষ করে ক্যানসার রোগ প্রতিরোধে কালো চাল অনন্য। এ চাল সাদা চালের মত নানা প্রক্রিয়ায় তৈরি করা হয় না বলে এর উপকারিতা অনেক পাওয়া যায়। একদিকে এ চালে শর্করার পরিমাণ সাদা চালের চেয়ে কম, অন্যদিকে আঁশ ও ভিটামিন বি-এর পরিমাণ বেশি।

কালো চালের ব্যবহার এখন পর্যন্ত প্রধানত: এশিয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। মূলত: খাবারকে বৈচিত্র্যময় ও আকর্ষনীয়ভাবে সাজাতে এ চালকে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এর অভাবনীয় উপকারিতার দিকে এর আগে তেমনভাবে কারো দৃষ্টি পড়েনি। জনৈক চীনা ডাক্তার ঝিমিন ঝু লিখেছেন, ‘এক চামচ কালো চালের কুড়ায় যে পরিমাণ অ্যান্থোসায়ানিন আছে তা এক চামচ ব্লু বেরি ফলের রসের চেয়ে বেশি, বরং ব্লু বেরি ফলের চেয়ে এতে কম চিনি আছে এবং আঁশ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে অনেক বেশি।’

কালো চাল ক্যানসাররোধী অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে পরিপূর্ণ। অ্যান্টিঅক্রিডেন্ট ফ্লাভিনয়েড যা অ্যানথোসায়ানিন নামে পরিচিত তা এই কালো চালে খুব বেশি পরিমাণে থাকাতেই চালের রঙ কালো হয়েছে। আর কালো চালে এ উপাদানটি থাকার কারণেই ক্যানসার, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, স্নায়ূরোগ এমনকি ব্যবকটেরিয়া সংক্রমণ প্রতিহত করতে পারে বলে জানা গেছে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, ধমনীতে রক্ত চলাচল যেসব কারণে বাধগ্রস্ত হয়, কালো চালের উপাদান তা হতে দেয় না। ফলে হাই প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপ হয় না। ফলে হৃদরোগ তথা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমে যায়।

এই চালে আয়রণ বেশি কিন্তু শর্করা কম। কালো চালে যেসব পুষ্টি উপাদান রয়েছে তা হল- ক্যালরি ১৭০, ফ্যাট ১.৫ গ্রাম (৩%), কার্বোহাইড্রেট ১১%, আঁশ ৫%, ভিটামিন এ ২%, আয়রণ ৬%।

This post has already been read 6579 times!

Check Also

আমন ধানে ব্রাউন প্ল্যান্ট হপার আক্রমণ: ফলনের ক্ষতি ও করণীয়

ড. মো. মাহফুজ আলম: বাংলাদেশে ধান প্রধান ফসল হিসেবে পরিচিত এবং এর উৎপাদন গ্রামীণ অর্থনীতির …