মো. খোরশেদ আলম জুয়েল : ভারত থেকে ডিম আমদানির অনুমতি দিলে দেশের পোলট্রি শিল্প ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হবে বলে জানিয়েছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে দেশের পোলট্রি শিল্প ও খামারিদের কথা চিন্তা করে ডিম আমদানির অনুমতি না দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পক্ষে ডা. শেখ আজিজুর রহমান, পরিচালক (প্রশাসন) স্বাক্ষরিত এক চিঠির (নং-৩৩.০০.০০০০.১১৮.১৫.৫৬৩.১৯-১০৭ সংখ্যক পত্র) মাধ্যমে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। অধিদপ্তর জানায়, বিগত বছরে কখনও কখনও চাহিদার বিপরীতে ডিমের উৎপাদন বেশি থাকায় বাজারে বিরুপ প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হয় এবং ডিমের খুচরা বাজার মূল্যের ধ্বস নামে। এতে করে বিপুল খামারী ক্ষতির সন্মুখীন হয়।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সুস্থ্য, সবল ও মেধাবী জাতি গঠনে মাংস, ডিম ও দুধ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণে মুরগির ডিম (Table Egg) পুষ্টিগুন সম্পন্ন অন্যতম খাদ্য উপাদান । জনপ্রতি সপ্তাহে ২টি ডিম হিসেবে ২০১৮-২০১৯ অথবছরে ১৭৩২ কোটি ডিমের চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন ছিল ১৭১১ কোটি। বছরে জনপ্রতি ১০৪টি ডিমের চাহিদার প্রেক্ষিতে বর্তমানে প্রপ্যতা ১০৩.৮৯ টি ডিম। এই সাফল্যের পিছনে ২৭টি সরকারী মুরগীর খামার ও ২৩টি সরকারী হাঁস খামারের পাশাপাশি বেসরকারী পযায়ে নিবন্ধিত ১৯,০৮১ টি ডিম পাড়া মুরগীর খামার এবং ৭৮৬২টি নিবন্ধিত হাঁসের খামার এর অবদান অনস্বীকার্য।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর চিঠিতে জানায়, বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাষ্ট্রিজ কেন্দীয় কাউন্সিলের (বিপিআইসিসি) হিসেব মতে দেশে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ১৫-২০ লক্ষ লোকের কমসংস্থান এ সেক্টর থেকে সৃষ্টি হচ্ছে। পোল্ট্রি খাত দেশে আজ এক উদিয়মান শিল্প হিসেবে সর্বাধিক সমাদৃত। এ শিল্পে বর্তমানে আনুমানিক ৪০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ আছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর মারফত সেখানে আরো উল্লেখ করা হয়, বর্তমানে ঢাকার বাজারে লাল ও সাদা মুরগির ডিমের মূল্য যথাক্রমে ৭.৫০ টাকা এবং ৭.৩০ টাকা। ঢাকার আশেপাশে এবং বিভাগীয় শহরে লাল ও সাদা ডিমের মূল্য ৬.৫০ এবং ৫.৮০ টাকা। পার্শ্ববর্তী দেশসহ এশিয়ার অন্যান্য দেশ যেমন- ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভিয়েতনাম এবং থাইল্যান্ডে প্রতিটি ডিমের মূল্য যথাক্রমে ৬.৩০, ৫.২৪, ৯.৮৪, ৯.৫৬ এবং ১১.২৬ টাকা। সুতরাং বাংলাদেশের ডিমের বাজার মূল্য সহনীয় পর্যায়ে আছে বলে ধারণা করা যায়।
অধিদপ্তর থেকে মতামতের উপসংহারে জানানো হয়, ভারত থেকে মুরগির ডিম আমদানি হলে এই শিল্প ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হবে এবং জড়িত খামারীরা নিরুৎসাহিত হয়ে পড়বেন ও ডিমের উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। সর্বোপরি দেশের জনগণ প্রাণিপুষ্টি থেকে বঞ্চিত হবে।
এ ব্যাপারে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আবদুল জব্বার শিকদার এগ্রিনিউজ২৪.কম কে বলেন, দেশের পোলট্রি শিল্পের সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে আমরা মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়ে মতামত দিয়েছি, এখন সিদ্ধান্ত নিবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।
বিপিআইসিসি (বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল) সভাপতি মসিউর রহমান বলেন, আমরা নিজেরা যখন ডিম উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ তখন ডিম আমদানির ব্যাপারটি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। আমরা বিপিআইসিসি’র পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে প্রতিবাদ জানিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এব মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে পৃথক চিঠি দিয়েছি। আমরা আশা করবো, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় দেশের পোলট্রি শিল্প ও খামারিদের কথা চিন্তা করে ডিম আমদানির অনুমতি দিবেননা।
উল্লেখ্য, ভারত থেকে ১০ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি চেয়ে গোপালগঞ্জ ভিত্তিক ট্রেডিং হাউস, মুন্সী এন্টারপ্রাইজ আমদানি নীতিমালায় আমদানির অনুমতি চেয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠায়। বাণিজ্য মন্ত্রনালয় চিঠিটি মতামতের জন্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে। এরপর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে মতামত জানানোর জন্য প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরকে চিঠি দেয়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর তাদের মতামত চিঠির মাধ্যমে তুলে ধরেন সংশ্লিস্ট মন্ত্রণালয়ের কাছে।