ফারুক আলম (জেলা প্রতিনিধি, লালমনিরহাট) : বছর কতক আগেও লালমনিরহাট জেলা জুড়ে ছোট ছোট পোল্ট্রি খামার ছিল দেখার মতো। গড়ে উঠেছিল নতুন নতুন খামার। এসব খামারে নিজেদের ভাগ্য বদলের সুযোগে চরম আশাবাদী ছিলেন জেলার গৃহিণী এবং যুবক-যুবতীরাই বেশি।এমন সব খামারে ছিল ২০০ থেকে ৫০০ কিংবা হাজার খানেক ডিমপাড়া মুরগী। জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা হাই সেক্স ব্রাউন লেয়ার নামক মুরগির পাশাপাশি অন্যান্য জাতও ছিল চোখে দেখার মত। তবে, এখন আর চোখে পড়েনা সেই চিত্র। সব পাল্টে এখন শুণ্য কোঠায় সেসব ছোট ছোট খামার। অবেলাতেই ফুরিয়ে গেছে স্বপ্ন, হারিয়ে গেছে খামার,নিঃস্ব হয়েছেন তারা। অপরদিকে যারাই টিকে আছেন ৫ হাজার থেকে ২০ হাজার মুরগী নিয়ে, মূলত তারা আছেন নেহায়েৎ বাধ্য হয়ে কিংবা মায়ার টানে।
জেলায় পোল্ট্রির বিকাশ সব থেকে বেশি ঘটেছিল লালমনিরহাট সদর এবং কালিগঞ্জ উপজেলায়। তারপরই ঘটেছিল আদিতমারী উপজেলায়।
লালমনিরহাট সদরের পূর্বসাপ্টানার বানিয়ার ডিঘির আর্শিনা চন্দ্র বর্মণের সূচনা পোল্ট্রির খামারের বয়স ১৫ বছর। খামারের সাড়ে ৬ হাজার মুরগী থেকে বর্তমানে ৫ থেকে সাড়ে ৫হাজার ডিম পাওয়া যাচ্ছে। বর্মণ এগ্রিনিউজ২৪.কম কে জানান, ২০১৫ সালে তাদের খামারে এভিয়ান ফ্লু’র (H9N2) ভয়াবহতা এবং এখন পর্যন্ত তাদের খামার ভালো চললেও, লাভের মুখ দেখছেন না মোটেও। তাদের ডিম বিক্রির সমস্ত অর্থ চলে যাচ্ছে লালন-পালন খরচে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রাণিসম্পদ অফিসের দায়িত্বশীল সূত্র এ প্রতিবেদককে জানায়, জেলায় এভিয়ান ফ্লু আক্রমনের পরে ঋণের দায়ে অনেকেই এখন এলাকা ছাড়া। তাদের খামার অবকাঠামো ধসে গেছে। দাঁড়িয়ে আছে শুধু টিনের চাল।
লালমনির হাট জেলায় লোকসানের মুখে খামার থেকে সরে এসেছেন দীনেশ চন্দ্র(৫০০), টুটুল (২০০০মুরগী), আদিতমারীর ফাতেমা বেগম, জিয়া, ওয়াদুদ মিয়া, কালিগঞ্জের নবাব মিয়া (৫০০ মুরগী) সহ অসংখ্য ক্ষুদ্র খামারি।
জেলার নামকরা পোল্ট্রি ফিড,বাচ্চা-ঔষধ ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বললে তারা জানান,এখন আর ছোট খামারি নেই। হঠাৎ কেউ আসছে ১০, ২০, ৩০ হাজার বাচ্চা তুলে খামার করছে। কিন্তু লাভ-লোকসানের হিসেব করছেন না তেমন কেউই।
এখানকার খামারিরা দুই রকম খাবার ব্যবহার করেন। একটি হলো বিভিন্ন কোম্পানির রেডি ফিড; অন্যটি লুজ ফিড। প্রতি কেজি রেডি ফিড যেখানে ৩৯ টাকা কেজি সেখানে প্রতি কেজি ৩৫ টাকার লুজ ফিড খাইয়েও কোন লাভের মুখ দেখছেন না খামারিরা।
লালমনির হাট জেলায় ‘এ’ (৫০ হাজার +), ‘বি’ (২০-৫০ হাজার), ‘সি’ (২-২০ হাজার) এ তিন ক্যাটাগরিতে খামারির খামারির সংখ্যা মাত্র ৩৩৮ টি। যদিও এই হিসেব ২০১০ থেকে ২০২০ সন পর্যন্ত। এ জেলায় প্রথম নিবন্ধিত খামারি লালমনিরহাট সদরের হাসান পোল্ট্রি এবং ২০২০ এ সর্বশেষ আদিতমারী উপজেলার নিবন্ধিত মা পোল্ট্রি। যদিও বাস্তবে ছিল হাজার হাজার খামারি।
এরকম বেহাল চিত্রের কারণ তালাশে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ডিএলও)কৃষিবিদ সাইদুর রহমানের সাথে কথা এগ্রিনিউজ২৪.কম এর এ প্রতিনিধির সাথে। তিনি জানান, যখন বড় ব্যবসায়ী আসে, তখন ছোট ব্যবসায়িরা টিকে থাকতে পারেনা। ছোট খামারি, পুঁজি কম তারা টিকে থাকতে পারছেনা। খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। বিদেশ থেকে প্রোটিন আমদানি করতে হয়। ভুট্টার বাজার দর বেশি হওয়ায় টিকে থাকতে পারছে না অনেকেই।
একটি সময় ছিল যখন ২০০ মুরগী পালন করলেই ৩ সদস্যের একটি পরিবার চলতো, এখন কেন পারছেনা -এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি ফিডের দাম বৃদ্ধিকে দায়ী করে ছোট খামারিদের জন্য পরামর্শ দিয়ে বলেন, যদি কেউ ৫০০ মুরগীর পাশাপাশি অন্যান্য প্রাণির সমন্বিত খামার করতে পারলে ভালো হয়।