সোমবার , ডিসেম্বর ২৩ ২০২৪

পটল চাষে পোকা ও রোগ ব্যবস্থাপনা

মো. এমদাদুল হক : পটলের বেশ কিছু পোকা ও রোগ অর্থনৈতিকভাবে মারাত্মক ক্ষতি করে। তাই এখানে পটলের পোকা ও রোগ এবং তার ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনা করা হলো-

পটল ফলের মাছি পোকা : পটলের মারাত্মক ক্ষতি করে থাকে। স্ত্রী পোকা কচি ফল ছিদ্র করে ভেতরে ঢুকে ডিম পাড়ে। ডিম ফুটে কীড়া বের হয়ে ফলের নরম অংশ খায়। এতে ফল খাওয়ার অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে, ফল পচে যায়, এবং অনেক সময় গাছ থেকে ফল ঝরে পড়ে যায়। এ পোকা দমনের জন্যে পটলের জমি সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। আক্রান্ত ফল সংগ্রহ করে মাটির নীচে পুঁতে ফেলতে হবে। এছাড়াও বিষটোপ ফাঁদ ব্যবহার করে মাছি পোকা দমন করা যায়। এসব ব্যবস্থায় পোকা দমন সম্ভব না হলে। আক্রমণ বেশি হলে সাইপারমেথ্রিন জাতীয় কীটনাশক (যেমন ওস্তাদ ২০ মিলিলিটার অথবা ম্যাজিক অথবা কট ১০ মিলিলিটার) ১০লিটার পানিতে ১০ মিলি মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে জমিতে ১০-১২ দিন পরপর স্প্রে করলে পোকা নিয়ন্ত্রণে আসে।

কাঁঠাল পোকা : এটি কীড়া ও পূর্ণাঙ্গ অবস্থায় গাছের ক্ষতি করে থাকে। এ পোকা পাতার সবুজ অংশ খেয়ে জালের মত ঝাঁঝরা করে ফেলে, পাতা শুকিয়ে ঝরে পড়ে। গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি কমে যায়। আক্রমণ বেশি হলে সম্পূর্ণ গাছটিই মারা যায়। পটলের মাঠ সম্পূর্ণ পরিষ্কার ও আগাছামুক্ত রাখতে হবে। ৩০ থেকে ৪০ গ্রাম নিমবীজের মিহিগুঁড়া এক লিটার পানিতে ১২ থেকে ১৪ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রেখে পানি ছেঁকে নিয়ে ওই পানি আক্রান্ত পাতাসহ সব গাছে স্প্রে করতে হবে। ডাইক্লোরভস ১০০ ইসি এর ১ থেকে ২ মিলি বা কারবারিল ৮৫ ডব্লিউপি ২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে বা ফেনিট্রিথিয়ন ৫০ ইসি ২ মিলি প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করে গাছের পাতা ভালোভাবে ভিজিয়ে দিতে হবে।

মিলিবাগ : পটলের কচি ফল, পাতা ও কচি ডগা থেকে রস চুষে খায়। ফলে গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলের স্বাভাবিক বৃদ্ধি হতে পারেনা এবং ফল আকারে ছোট হয়। এপোকা দমনের জন্য আক্রান্ত পাতা, ডগা ও ফল সংগ্রহ করে মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে। ডায়াযিনন ৬০ ইসি বা মার্শাল ২০ ইসি ১ মিলি প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০-১২ দিন পর পর ২-৩ বার ভালভাবে স্প্রে করতে হবে।

পটলের শিকড়ের গিট রোগ: পটলের গিঁট রোগ মারাত্মক ক্ষতিকর। নেমাটোড বা কৃমির আক্রমনে এ রোগ হয়ে থাকে। এ রোগে আক্রান্ত গাছের শিকড়ে ছোট বড় অসংখ্য গিঁটের সৃষ্টি হয় এবং গাছের মূল নষ্ট হয়ে যায়। গাছ মাটি থেকে খাদ্য  নিতে পারে না। গাছের বৃদ্ধি কমে যায়। ফলন মারাত্মকভাবে কমে যায়। এরোগ দমনের জন্যে পরিচ্ছন্ন চাষাবাদ করতে হবে। রোগমুক্ত গাছ থেকে লতা সংগ্রহ করতে হবে। পটল চাষের আগে জমি ভালভাবে চাষ মই দিয়ে রোদে শুকানোর জন্যে খোলা রাখতে হবে।

বিভিন্ন ধরনের ফাঁদ ফসলের মধ্যে গাদা, চন্দ্র মল্লিকা, শতমূলী, শনপাট, সরিষা চাষ করে এরোগ দমন করা যায়। পটল লাগানোর ২০-২৫ দিন আগে বিঘা প্রতি ৪০০-৫০০ কেজি মুরগীর বিষ্ঠা অথবা ৫০-৬০ কেজি খৈল প্রয়োগ করে মাটির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে ফুরাডান ৫ জি ৩ থেকে ৪ কেজি/প্রতি বিঘায় লতা লাগানোর সময় এবং পরবর্তী ৪ মাস পর পুনরায় প্রয়োগ করতে হয়। হেসালফ (০.২%) বা হেকোনাজল (০.১%) বা ওপাল (০.১%) রোগ দেখা মাত্র ৭-১০ দিন অন্তর অন্তর স্প্রে করতে হবে।

লেখক : এআইসিও,কৃষি তথ্য সার্ভিস,রাজশাহী।

This post has already been read 11442 times!

Check Also

আমন ধানে ব্রাউন প্ল্যান্ট হপার আক্রমণ: ফলনের ক্ষতি ও করণীয়

ড. মো. মাহফুজ আলম: বাংলাদেশে ধান প্রধান ফসল হিসেবে পরিচিত এবং এর উৎপাদন গ্রামীণ অর্থনীতির …