করোনা প্রতিরোধে সরকারি সতকর্তা মেনে চলার এবং ডিম দুধ মাছ মাংস সহ পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণের পরামর্শ
ঢাকা (১৯ মার্চ): নিরাপদ পোল্ট্রি উৎপাদনের মাধ্যমে উন্নতমানের প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্য- ডিম ও মুরগির মাংস উৎপাদনে বদ্ধপরিকর বাংলাদেশের পোল্ট্রি শিল্প। দেশের চাহিদা মিটিয়ে ২০২৫ সালের মধ্যেই রপ্তানি সক্ষমতা তৈরি করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বৃহস্পতিবার (১৯ মার্চ) দেশে প্রথমবারের মত “আন্তর্জাতিক পোল্ট্রি দিবস” উদযাপনের অংশ হিসেবে আয়োজিত এক সভায় একথাগুলো বলেন ওয়ার্ল্ড’স পোল্ট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন-বাংলাদেশ শাখার (ওয়াপসা-বিবি) সভাপতি আবু লুৎফে ফজলে রহিম খান (শাহরিয়ার)।
সাম্প্রতিক সময়ে দেশে ছড়িয়ে পড়া কেভিড-১৯ ভাইরাস প্রতিরোধে সরকার কর্তৃক ঘোষিত সতর্কতামূলক নির্দেশনা যথাযথভাবে মেনে চলার পরামর্শ দেন শাহরিয়ার। সেই সাথে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ডিম, দুধ, মাছ, মাংসের মত পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণের পরিমান আরও বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।
রাজধানীর নিকেতনে অবস্থিত সংগঠনের নিজস্ব কার্যালয়ে আয়োজিত আন্তর্জাতিক পোল্ট্রি দিবসের আলোচনায় শাহরিয়ার বলেন, মুরগির ডিম ও মাংস এ দু’টো খাবারই অত্যন্ত উপকারি- যা দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে। ডিমে আছে প্রায় সব ধরনের অত্যাবশ্যকীয় অ্যামিনো এসিড, খনিজ এবং ভিটামিন ‘সি’ ছাড়া প্রায় সব ক’টি ভিটামিন। প্রাকৃতিকভাবে খুব কম খাবারেই ভিটামিন ‘ডি’ আছে, এর মধ্যে ডিম একটি। তিনি আরও বলেন- বৈজ্ঞানিক তথ্য মতে মুরগির মাংসে আছে ভিটামিন ‘এ’ – যা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা সক্রিয় রাখতে অত্যন্ত সহায়ক। তাছাড়া এটি সংক্রমণ প্রতিরোধী হিসেবেও কাজ করে।
তিনি আরো বলেন, মুরগির মাংসে থাকা ভিটামিন বি১, বি৬, বি১২ দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে। এর প্রোটিন উপাদান- দেহ সুস্থ্য, সবল ও কর্মক্ষম রাখতে অত্যন্ত কার্যকর। তাই উদ্ভুত পরিস্থিতিতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ডিম, মাংস, দুধ এ ধরনের পুষ্টিকর খাদ্য খাওয়া অত্যন্ত জরুরি।
ওয়াপসা-বাংলাদেশ শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. এম. আলী ইমাম বলেন, বাংলাদেশের পোল্ট্রি শিল্প এখন নিরাপদ ডিম ও মাংস উৎপাদনে অধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। “বিগত কয়েক বছরের পথ পরিক্রমায় আমরা বেশ খানিকটা এগিয়েছি এবং রপ্তানী বাজারে প্রবেশের লক্ষ্যে সরকারের প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সহযোগিতা নিয়ে কাজ করছি। ২০২৫ সালকে সামনে রেখে অনেকগুলো কাজ আমাদের সম্পন্ন করতে হবে সেজন্য সরকারের তরফ থেকে অধিকতর সহযোগিতা প্রয়োজন।”
তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বেশ আগে থেকেই পোল্ট্রি দিবস পালিত হয়ে আসলেও এবারই প্রথম আমরা বাংলাদেশে এ দিবসটি উদযাপন করছি ‘মুজিব বর্ষ’কে সামনে রেখে। তবে করোনা ভাইরাসের সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে জনস্বার্থে ‘পোল্ট্রি ফেস্ট’ এবং ‘সিম্পোজিয়াম’ আপাতত: স্থগিত করা হয়েছে; যা সুবিধাজনক সময়ে আয়োজন করা হবে।
তিনি আরো বলেন, দেশকে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে নিতে হলে অভ্যন্তরীন চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি রপ্তানী খাতে গুরুত্ব দিতে হবে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো যেহেতু শুধুমাত্র গার্মেন্টস শিল্পের ওপর নির্ভরশীল না থাকার এবং সেই সাথে কৃষিভিত্তিক শিল্পের উপর গুরুত্ব দেয়ার পরামর্শ দিচ্ছে; তাই আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাকে নতুনভাবে ঢেলে সাজাতে হবে এবং পোল্ট্রি’র উপর সবিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে কারণ এটিই একমাত্র কৃষিভিত্তিক শিল্প যা ভার্টিক্যালি বাড়ানো সম্ভব। তিনি বলেন, আমরা দোয়া করছি দেশ অচিরেই কোভিড-১৯ ভাইরাস মুক্ত হবে এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনে স্বস্তি নেমে আসবে।
উল্লেখ্য, ওয়ার্ল্ড’স পোল্ট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন (WPSA) একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন। পোল্ট্রি বিজ্ঞান সম্পর্কিত গবেষণা, জ্ঞান, শিক্ষা ও দক্ষতা এবং সেই সাথে পোল্ট্রি শিল্পের উন্নয়নে ১৯১২ সাল থেকে কাজ করছে স্বেচ্ছাসেবী এ সংগঠনটি। বিশ্বের মোট ৮০টি দেশে এর শাখা রয়েছে। সদরদপ্তর নেদারল্যান্ডে। বাংলাদেশ শাখাটির জন্ম হয় ১৯৯৭ সালে। বাংলাদেশের পোল্ট্রি শিল্পের উন্নয়নে, প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা সাধনে, গবেষণা, জ্ঞান ও শিক্ষার বিস্তারে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলেছে ওয়ার্ল্ড’স পোল্ট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন-বাংলাদেশ শাখা।