নিজস্ব প্রতিবেদক: দীর্ঘ এক বছরের অধিক সময় ধরে ব্রয়লার মুরগির দামের পতন, ফিডের দাম বৃদ্ধি, একদিন বয়সী মুরগির বাচ্চার দাম না পাওয়াতে হ্যচারিগুলোতে হাহাকার, হাজারো খামারির দীর্ঘশ্বাস যখন চলছিল তখনই মরার উপর খরার ঘা হিসেবে দেখা দিয়েছে করোনা আতংক। সারাবিশ্বের মতো মহামারি এ রোগটি বাংলাদেশেও দেখা দিয়েছে, ফলে ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দামে লাগাতার পতন, দুধের দাম এখন পানির দামের চেয়েও সস্তা।
চারদিকে যখন এতই দুঃসংবাদ তখন দেশের পোলট্রি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতের জন্য কিছুটা স্বস্তির খবর দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। দেশের মানুষের প্রাণিজ আমিষ উৎপাদনের সাথে জড়িত বিভিন্ন উদ্যোক্তা, খামারি, আমদানিকারকদের দীর্ঘদিনের দাবী মাছ, মুরগি ও পশুখাদ্য তৈরিতে ব্যবহৃত কাঁচামাল আমদানি এবং একদিন বয়সী মুরগির বাচ্চার ওপর আরোপিত আগাম কর (AT) প্রত্যাহার করা হয়েছে। বুধবার (২৫ মার্চ) এ ব্যাপারে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে অর্থ মন্ত্রণালয়ের (অভ্যন্তরীন সম্পদ বিভাগ) সিনিয়র সচিব আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপন জারি হয়। এর ফলে ফলে মাছ, মুরগি ও পশুখাদ্য তৈরিতে ব্যবহৃত কাঁচামাল আমদানি এবং একদিন বয়সী মুরগির বাচ্চার ওপর আরোপিত ৫% অগ্রিম কর রহিত হলো।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) এর সভাপতি মসিউর রহমান বলেন, গত বছর বাজেটের পর থেকেই আমরা দীর্ঘদিন ধরে অগ্রিম কর প্রত্যাহারের ব্যাপারে সরকারের কাছে দাবী উত্থাপন করে আসছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবরও আমরা চিঠি দিয়েছি। বিষয়টি অনেক আগেই সুরাহা হওয়ার কথা ছিল। গত ১৩ অক্টোবর ২০১৯ তারিখে অগ্রিম কর প্রত্যাহারের ব্যাপারে এনবিআর থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয় কিন্তু সেখানে এইচএস কোড সংক্রান্ত কিছু ভুলের কারণে নতুন করে জটিলতা তৈরি হয়েছিল।
তিনি বলেন, পোলট্রি, মৎস্য ও প্রাণিজ খাতের চলমান দুঃসময়ে আগাম কর প্রত্যাহারের বিষয়টি নিঃসন্দেহে কিছুটা স্বস্তি এনে দিয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে এজন্য আমাদের পক্ষ থেকে জানাই কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ।
উল্লেখ্য, বিগত কয়েক বছর থেকেই পোল্ট্রি খামারি, উদ্যোক্তা এবং বিভিন্ন এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ পোল্ট্রি শিল্প সংশ্লিষ্ট সবগুলো খাতের ওপর থেকে সব ধরনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর তুলে নেয়ার আরজি জানিয়ে আসছেন। গত ১৭ অক্টোবর ২০১৯ তারিখে ফিআব এর পক্ষ থেকে এনবিআর -এর কাছে একটি আবেদন জমা দেয়া হয়। তাছাড়া আগাম কর প্রত্যাহারের জন্য বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) -এর পক্ষ থেকে গত ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে একটি চিঠি জমা দেয়া হয়। ব্রিডার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, এনিমেল হেলথ কোম্পানিজ এসোসিয়েশ অব বাংলাদেশ (আহ্কাব) এর পক্ষ থেকেও আগাম কর প্রত্যাহারের বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে সরকারের কাছে আর্জি জানানো হয়। এছাড়াও সংশ্লিষ্ট খাতের অন্যান্য সংগঠন ও খামারিগণ আগাম কর প্রত্যাহারের ব্যাপারে বিভিন্ন সময়ে দাবী উত্থাপন করেন।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে আগাম কর প্রত্যাহারের বিষয়টি চরম এ দুঃসময়ে কিছুটা হলেও স্বস্তি দিয়েছে বলে জানিয়েছেন এ পোলট্রি, মৎস্য ও প্রাণিজ খাতের সাথে সংশ্লিষ্টগণ।
উল্লেখ্য, অর্থ বিল ২০১৯ এর ৭১ নম্বর অনুচ্ছেদে ২০১২ সনের ৪৭ নং আইনের ধারা ৩১ এর সংশোধন করে সকল আমদানিকৃত পণ্য সরবরাহের ওপর ৫% হারে আগাম কর (AT) ধার্য্য করা হয়। এসআরও নং ১৭২-আইন/২০১৯/২৯-মূসক তারিখ ১৩ জুন ২০১৯ মূলে এই আগাম কর (AT) ধার্য্য করা হয়েছিল।