গুজব-১: ব্রয়লার খেলে ক্যানসার হয়
ব্রয়লার মুরগি খেলে ক্যানসার হয় -এমন একটি গুজব বিভিন্ন প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক ও সোস্যাল মিডিয়াতে দীর্ঘদিন ধরেই চাউর। আবার অনেকে সেটি বিশ্বাসও করছেন যার বিরুপ পড়ছে সেক্টরটিতে। গুজব রটনাকারিদের অভিযোগ, ব্রয়লার মুরগিকে ট্যানারি বর্জ্য মিশ্রিত ফিড খাওয়ানো হয় যেখানে ক্রোমিয়াম থাকে এবং সেই ক্রোমিয়াম ক্যান্সারের জন্য দায়ী। প্রকৃত পক্ষে বাংলাদেশে যে পরিমাণ ফিড উৎপাদন হয় এবং তারজন্য যে পরিমাণ প্রোটিণ সোর্স প্রয়োজন তার ১% পরিমাণও ট্যানারি বর্জ্য দিয়ে মেটানো সম্ভব না। হ্যা, একটা সময় খুব সামান্য কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কাজটি করতো এবং সেটি প্রায় ৮-১০ বছর আগে। কিন্তু বাংলাদেশ পোলট্রি শিল্প সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর শক্ত অবস্থানের কারণে প্রশাসন সেসব অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় এবং সেটি এখন বন্ধ রয়েছে। নিরাপদ পোল্ট্রি খাদ্য সরবরাকৃত পোল্ট্রির মাংস অন্যান্য খাদ্যের মতই নিরাপদ।
গুজব-২: পোল্ট্রি মাংসে ব্যাকটেরিয়া
প্রকৃত পক্ষে আমরা অনুজীব দিয়ে ঘেরা। প্রতিটি খাবারে অনুজীবের ছড়াছড়ি। শুধু মুরগীর মাংস নয়, মাছ, দুধ, ডিম অন্যান্য প্রানীর মাংস থেকে শুরু করে ফলমুল এবং কৃষিজ ফল ফসলের অনুজীবীয় পরীক্ষায় জীবাণু পাওয়া যায়। আর যা দূর হয় উত্তম রূপে ধোয়া এবং রান্নার মাধ্যমে। আমরাতো আর কাচা মাংস খাই না। তাই ভালোভাবে রান্না করে নিশ্চিন্তে খেতে পারেন ব্রয়লার মুরগীর মাংস ও তার বিভিন্ন রেসিপি।
গুজব-৩: হরমোনের ব্যবহার
এটি সম্পূর্ণরূপে একটি গুঁজব। যিনি আপনাকে বলবেন, তাকে যদি জিজ্ঞেস করেন তিনি হয়তো যুক্তি দেখাবেন উনি শুনেছেন অথবা পাল্টা প্রশ্ন করে আপনাকে থামাতে চাইবেন, তা না হলে ২৮ দিনে বড় হয় কি করে? যার উত্তর এখন আপনার জানা। জিনগত বৈশিষ্ঠের উন্নয়নের মাধমে তা সম্ভব হয়েছে। যেভাবে সম্ভব হয়েছে দুধ উৎপাদন বৃদ্ধিতে, ডিম উৎপাদন বৃদ্ধিতে, মাছের বৃদ্ধিতে এবং ফসলের উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবনের।
গুজব-৪: ব্রয়লারের মাংস খেলে মানুষ ও ব্রয়লারের মত অলস হয়
বিষয় টি হাস্যকর। ব্রয়লার মুরগীর মাংস খাওয়ার কারণে অলস হয়েছেন এটা ভিত্তিহীন। কারণ দ্রুত বৃদ্ধির জন্য দায়ী জিনতো দূরের কথা, অন্যকোন জিন মানুষের শরীরে খাবারের মাধ্যমে প্রবেশ করেনা।
গুজব-৫: অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার
অ্যান্টিবায়োটিকের এমন কোন গুণ নেই যা ব্রয়লারের বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। তবে এক সময় খাবারের সাথে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হতো। যা পরবর্তিতে নিষিদ্ধ করা হলেও আমাদের দেশ সহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশ গুলিতে ব্যবহার হয়ে আসছিল। তবে বর্তমানে এর ব্যবহার অনেকখানি কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে, যাতে পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব হয় এ লক্ষে আমাদের দেশের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, এফএও(FAO) বাংলাদেশ ও ভেটেরিনারি ডাক্তারগণ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
খামারিদের করণীয়
- বিনা প্রয়োজনে এবং রেজিঃ ভেটেরিনারি ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাবহার না করা।
- অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের পর এর প্রত্যাহার কাল মেনে চলা।
খামারি ভাই এবং যারা পোল্ট্রি শিল্পের সাথে জড়িত আছেন তাদের প্রতি আহ্বান, আসুন নিরপদ খাদ্য উৎপাদনে সোচ্চার হয় সুস্থ মেধাবী জাতি গঠন অবদান রাখি।
ক্রেতা ও ভোক্তা ভাইদের প্রতি আহ্বান গুঁজবে কান না দিয়ে সঠিক তথ্য জানি, নিজে সচেতন হয় অপরকে সচেতন করি। আর সকল প্রকার ভীতি এড়িয়ে নিঃসন্দেহে ব্রয়লার খেতে পারেন। প্রয়জনে সুযোগ থাকলে আপনিয় পালন করে দেখতে পারেন।
লেখক পরিচিতি : জেনারেল প্র্যাক্টিশনার, ভেটস কেয়ার এন্ড পোল্ট্রি সোলিওশন, দিনাজপুর-৫২০০।