ফকির শহিদুল ইসলাম : বিশ্বজুড়ে চলছে করোনা ভাইরাসের মহামারী সংক্রমণ । আর এই করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বাংলাদেশ সরকার গত ২৬ মার্চ থেকে সারাদেশে সামাজিক দুরত্ব বজায় কর্মসূচি ঘোষনা করে । এর ফলে সারাদেশব্যাপী স্কুল,কলেজমসরকারী প্রতিষ্ঠানসহ সাধারন ছুটি ঘোষনা করে । ইতিমধ্যে ৫ম দফায় সাধারন ছুটি আগামী ৫মে পর্যন্ত বাড়িয়েছে । দেশব্যাপী এই ছুটি ও শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়ছে নিন্ম আয়ের মানুষ । ইতিমধ্যে ছুটি ঘোষনার পর থেকে সরকারী বে-সরকারী পর্যায় থেকে সাধারন খেটে খাওয়া ও নিন্ম আয়ের মানুষদের ত্রান সামগ্রী বিতরন কার্যক্রম এবং খাদ্য অধিদপ্তর ও বিএডিসির চাহিদা অনুযায়ী বস্তা মজুদ নেই । সরকার করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় ত্রান বিতরন কার্যক্রমে চটের ব্যাগ বা বস্তার ব্যাবহার বৃদ্ধি পেয়েছে । পাটজাত বস্তার সংকট কাটাতে সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে রাস্ট্রায়ত্ব পাটকল সীমিত পরিসরে চালুর সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছে সরকার। যেহেতু সারাদেশকে আগামী ৫মে পর্যন্ত সাধারন ছুটি রয়েছে আর ছুটির কারনে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকলে । ত্রান কার্যক্রম অব্যাহত রাখা, খাদ্য অধিদপ্তর ও বিএডিসির চাহিদার প্রেক্ষিতে দীর্ঘ এক মাস পর খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল রোববার থেকে ১টি পাটকল বাদে ৮টি পাটকল সীমিত পরিসরে মিলগুলোর উৎপাদন চালু করা হয়েছে। সরকারের খাদ্য বিভাগের বস্তা সরবরাহের জন্য খুলনাঞ্চলের ১টি পাটকল বাদে ৮টি পাটকল আংশিকভাবে চালু হয়েছে। রোববার সকালে খুলনার পাটকলগুলোর গেট দিয়ে শ্রমিকরা মিলে প্রবেশ করে ভোর ৬টা থেকেই উৎপাদন শুরু করেন। উৎপাদন শুরু হওয়া পাটকলগুলো হচ্ছে- ক্রিসেন্ট জুট মিল, খালিশপুর জুট মিল, দৌলতপুর জুট মিল, প্লাটিনাম জুবিলি জুট মিল, স্টার জুট মিল, আলিম জুট মিল, ইস্টার্ন জুট মিল ও জেজেআই জুট মিল।
করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধ ও সামাজিক দুরত্ব বজায় কর্মসূচি সফলে পাটকলগুলোতে গত ২৬ মার্চ থেকে উৎপাদন সর্ম্পুন্ন বন্ধ ছিল। বিজেএমসি ৩০ শে এপ্রিলের মধ্যে শ্রমিকদের বকেয়া সাপ্তাহিক মজুরী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীর দুই মাসের বেতন পরিশোধের আশ^াসে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে মিলগুলোর কলোনীতে বসবাসরত শ্রমিকদের মাধ্যমে বস্তা উৎপাদ শুরু হয়েছে বলে মিল সংশ্লিষ্ঠরা জানান। তবে মিলগুলোতে সতর্কভাবে দূরত্ব বজায় রেখে কাজ করছে শ্রমিকরা বলে জানান মিলের প্রকল্প প্রধানরা। বিজেএমসির তথ্য অনুযায়ী, খুলনা অঞ্চলের ৯টি পাটকলে প্রায় ১০ হাজার স্থায়ী শ্রমিক রয়েছেন।
বিজেএমসির খুলনা আঞ্চলিক সমন্বয়কারী মো. বনিজ উদ্দিন মিঞা বলেন, ‘খাদ্যবিভাগ ও বিএডিসির জরুরি বস্তা সরবরাহের জন্য খুলনার কার্পেটিং জুটমিল ছাড়া অন্য সবক’টি মিল আংশিকভাবে চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজেএমসি। এ কারণে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে গত ২৬ মার্চ থেকে মিল বন্ধ থাকার পর আজ আবার চালু হলো।
বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হলে গত ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটির আওতায় দেশের সকল সরকারী বে-সরকারী পাটকল বন্ধ রাখা হয়। তবে চাল ও বীজের মোড়কে পাটজাত বস্তার সংকট তৈরি হলে সীমিত আকারে পাটকলগুলো চালুর উদ্যোগ নেয় বিজেএমসি। গত ২৩ এপ্রিল প্লাটিনাম জুট মিলের বোর্ড রুমে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের প্রকল্প প্রধানদের সঙ্গে শ্রমিক নেতাদের বৈঠকে পাটকল চালু বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।
তবে শনিবার (২৫ এপ্রিল) বিকেলে বৈঠক করে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় শুধু স্ব স্ব মিল কলোনিতে অবস্থানরত শ্রমিকরাই কাজে যোগ দিতে পারবেন এ মর্মে সিদ্ধান্ত হয়। পাটকল চালু হলেও করোনার কারণে বিদেশে এখনই পাটপণ্য বিক্রির সুযোগ নেই। তবে খাদ্য অধিদপ্তর ও বিএডিসির চাহিদা অনুযায়ী বস্তা তৈরি হলে দেশের অভ্যন্তরে এগুলো বিক্রি করা যাবে। এর ফলে পাটকল শ্রমিকদের বকেয়া মজুরী পরিশোধ করা সহজ হবে।