পুষ্টিবিদ আয়শা সিদ্দিকা : খেজুর মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলোতে উৎপাদিত একটি ফল হলেও মুসলমানদের কাছে খেজুর তাৎপর্যপূর্ণ একটি ফল। ইসলামের ইতিহাসে অনেক নবী-রাসূলগণ খেজুর দিয়ে সেহেরি ও ইফতার করতেন। সেই ধারাবাহিকতায় মরুর এই ফলটি ইফতারিতে থাকাটা যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শুধু নিয়মের জন্যই নয়, রোজায় প্রতিদিন খেজুর খেলে পাওয়া যাবে প্রয়োজনীয় অনেক পুষ্টি উপাদান এবং স্বাস্থ্য উপকারিতা। চারটি বা ৩০ গ্রাম পরিমাণ খেজুরে আছে ৯০ ক্যালোরি খাদ্যশক্তি, এক গ্রাম প্রোটিন, ১৩ মি.লি. গ্রাম ক্যালসিয়াম, ২.৮ গ্রাম ফাইবার, পানি, আয়রণ, ভিটামিন ‘বি-১’, ভিটামিন ‘বি-২’ ও সামান্য পরিমাণ ভিটামিন ‘সি, ফলিক অ্যাসিড, ম্যাগনেশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, সালফার।
রোজায় দীর্ঘ সময় খালি পেটে থাকার কারণে দেহে গ্লুকোজের ঘাটতি দেখা দেয়। শরীরের এই প্রয়োজনীয় গ্লুকোজের ঘাটতি পূরণ করে ইনস্ট্যান্ট শক্তি যোগায় খেজুর। তাই প্রতিদিন ইফতার শুরু করা উচিত খেজুর দিয়ে।
এছাড়া খেজুরের রয়েছে আরও অনেক উপকারী গুণ। সেগুলো হলো-
- যকৃৎ ও পাকস্থলীর শক্তিবর্ধক,যকৃতের সংক্রমণ প্রতিরোধে খেজুর উপকারী।
- খেজুরে থাকা গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজ স্নায়ুবিক শক্তি বৃদ্ধি করে, দুর্বলতা দূর করে, ইন্সট্যান্ট কর্মশক্তি প্রদান করে
- খেজুর শরীরে রক্ত উৎপাদন করে, যা নিয়মিত খেলে আয়রনের ঘাটতি পূরণের পাশাপাশি রক্তাল্পতা দূর করে।
- প্রচুর পরিমাণে আঁশ থাকার কারণে নিয়মিত খেজুর হজমে সহায়তা করে, কোষ্ঠকাঠিন্য কমানোর পাশাপাশি এতে বদ-হজম, কোলাইটিস এবং হেমোরয়েডের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়।
- খেজুরে প্রচুর পরিমানে এন্টি-অক্সিডেন্ট থাকে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়, ক্যানসার প্রতিরোধ করে।
- রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, এছাড়া গলাব্যথা এবং বিভিন্ন ধরনের জ্বর, সর্দি ও ঠাণ্ডায় বেশ কাজ দেয়।
- খেজুর বুকের দুধ খাওয়ানো মায়েদের জন্য সমৃদ্ধ এক খাবার। যা মায়ের দুধের পুষ্টিগুণ আরও বাড়িয়ে দেয় এবং শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
- খেজুর দৃষ্টিশক্তি বাড়িয়ে রাতকানা প্রতিরোধেও সহায়ক।খেজুরের মধ্যে রয়েছে জিক্সাথিন ও লিউটেইন। এই উপাদানগুলো চোখের ম্যাকুলার ও রেটিনার ভালো রাখে।
- ফুসফুসের সুরক্ষার পাশাপাশি মুখগহ্বরের ক্যান্সার রোধ করে
- খেজুরে থাকা ভিটামিন সি ও ডি ত্বক ভালো রাখে।
- খেজুরে থাকা সালফার অ্যালার্জির মতো রোগ থেকে দূরে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
- অন্ত্রের কৃমি ও ক্ষতিকারক পরজীবী প্রতিরোধে খেজুর বেশ সহায়ক। অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়া তৈরি করে।
কাজেই প্রতিদিন ইফতারে ও সেহেরিতে খেজুর হতে পারে একটি আদর্শ ফল।