মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত জনসংখ্যা বেড়েছে প্রায় ২.৫ গুন। সেই সাথে নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর চাহিদাও বেড়েছে আনুপাতিক হারে। এক সময় মৌলিক চাহিদার প্রথম উপাদান খাদ্য হিসাবে গুরুত্ব দেয়া হতো ভাতকে। এর পর সেখান থেকে মানুষের লক্ষ্য চলে আসে, খাদ্য হলো পুষ্টিকর খাদ্য। সর্বশেষ বর্তমান সময়ে মানুষ মনে করে খাদ্য হলো নিরাপদ পুষ্টিকর খাবার। আর এই নিরাপদ পুষ্টিকর খাদ্যের অন্যতম অংশ হলো দুধ, ডিম, মাংস।
বাংলাদেশের নিরাপদ প্রাণিজ আমিষ যোগান দেয়, গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষ। তাদের লক্ষ্য থাকে, যাতে দুটো পয়সা আয় হয়। কিন্তু বাস্তবে অনেক ক্ষেত্রেই চিত্রটা ভিন্ন। খামারি যদি তার খামারের ঘর ভাড়া, বিদ্যুৎ, এবং নিজের শ্রম এর মূল্য হিসাব করেন, তাহলে লোকসান গুনতে হয়। কারন খামারে বর্তমান সময়ে আউটপুট এর তুলনায় ইনপুট খরচ বেশি।
নিচে কিছু প্রতিবন্ধকতা এবং সম্ভাব্য সমাধান তুলে ধরা হলো
প্রতিবন্ধকতা
- খামারিদের যথাযথ প্রশিক্ষণের অভাব। যার জন্য ব্যাবস্থাপনার মান নিম্ন মানের হয় এবং রোগাক্রমণ বাড়ে।
- নিম্ন মানের প্রশিক্ষণ। প্রাণিসম্পদ এর সরকারি প্রশিক্ষণ ক্লাস এর মান নিয়ে জবাবদিহিতার ঘাটতি থাকায় শুধু টাকার অপচয় হচ্ছে।
- সময়মত বা সব সময় গ্রাম পর্যায়ে ভেটেরিনারি ডাক্তার না পাওয়া। যার ফলশ্রুতিতে খামারিরা দোকানদার/ ডিলার/ কোয়াক এর স্মরণাপন্ন হয়ে অপচিকিতসা গ্রহণ করতে বাধ্য হয়। অনেক সময়ই অপচিকিতসায় অপ্রয়োজনীয় এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়। যা নিরাপদ প্রাণিজ আমিষ প্রাপ্যতার পথকে রুদ্ধ করে তোলে।
- উপজেলা পর্যায়ে ল্যাব না থাকা। অনেক সময় ল্যবরেটরি সুবিধা না পাওয়ার জন্য সঠিক চিকিতসা করা সম্ভব হয় না। প্রাণি / পাল মৃত্ত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। জিডিপি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
- নিম্ন মানের মেডিসিনের ব্যবহার। বাজারে প্রচলিত সকল মেডিসিন এর তালিকা ডিজিডিএ / ডিএলএস এর ওয়েবপোর্টালে নেই।
- প্রাণিসম্পদ এ স্পেসিফিক বিশেষজ্ঞ এবং আলাদা ইউনিট এর ঘাটতি। যেমনঃ বার্ড ইউনিট, ডেইরি ইউনিট, বীফ ইউনিট।
- সংরক্ষণ এবং ভ্যালু এড এর সল্পতা। দুধ, ডিম, মাংস এর সংরক্ষণ এবং ভ্যালু এড বড় ধরনের অর্থনৈতিক ব্যাপার জড়িত। বাংলাদেশের ক্ষুদ্র খামারির পক্ষে একক ভাবে এটা সম্ভব নয়।
- পণ্যের মূল্যের উপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ না থাকা। যার ফলে ফড়িয়া শ্রেনী সকল সময় লাভবান হচ্ছে এবং খামারি এবং ভোক্তা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
- গাভীর প্রজনন নীতিমালা না থাকা। এর কারণে সরকারি- বেসরকারিভাবে কোন রকম পরিকল্পনা ছাড়াই বেপরোয়া ভাবে কৃত্তিম প্রজনন করা হচ্ছে। কোন ব্রিডিং রেকর্ড সংরক্ষণ করা হচ্ছে না।
- প্রাণিসম্পদে বিশেষায়িত হাসপাতাল কার্যকর নেই।
- একমাত্র CVH ছাড়া কোন হাসপাতালে হাসপাতালের সেবা নেই।
- বঙ্গবন্ধুর উপহার পীর শাহজামান প্রাণি হাসপাতাল এর সেবা প্রতিনিয়ত বাধাগ্রস্ত। একজন ভেটেরিনারি সার্জন ছাড়া স্থায়ী কোন জনবল নেই।
সম্ভাব্য সমাধান
- আইন ও বিধির মাধ্যমে খামারে প্রশিক্ষিত জনবল নিশ্চিত করতে হবে।
- প্রাণিসম্পদ এর আলাদা ট্রেনিং পুল থাকবে। সেখান থেকে দক্ষ লোককে প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করতে হবে।
- ভেটেরিনারি সার্ভিসকে ইমারজেন্সি ঘোষনা ।
- প্রতিটি উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর এ আধুনিক ল্যাব স্থাপন।
- এনিমেল এম্বুলেন্স/মোবাইল ভেটেরিনারি সার্ভিস চালু রাখা।
- QC ল্যাব এ মান যাচাইপূর্বক অনুমোদন।
- ICT উইং তৈরি।
- উৎপাদক এবং ভোক্তার মাঝে দূরত্ব কমানোর জন্য প্রতিটি জেলায় প্রাণিসম্পদ পণ্য সংরক্ষণ এবং বিক্রয় কেন্দ্র স্থাপন।
- PGT এর ব্যবস্থাকরণ এবং মূল্যায়ন।
- PPP এর মাধ্যমে প্রতিটি জেলায় দুধ, ডিম, মাংস এর প্রক্রিয়াকরণ প্রতিষ্ঠান স্থাপন।
- সকল খামারের বিদ্যুৎ কৃষির আওতাভূক্ত না করা। পল্লী বিদ্যুৎ বা পিডিবি খামারের বিদ্যুৎ সংযোগ বাণিজ্যিক শ্রেনীভূক্ত করে থাকে। ফলে বিদ্যুৎ বিল বেশি দিতে হয়।
- খামারে সকল ধরনের ইনপুট এর উপর ভর্তুকি প্রদান।
- প্রাণিসম্পদ এর সকল প্রকার খামারে ভর্তুকিমূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ।
- ডেইরী উন্নয়ন বোর্ড স্থাপন।
- গাভীর প্রজনন নীতিমালা তৈরী এবং তার বাস্তবায়ন।
- প্রাণিসম্পদে বিশেষায়িত হাসপাতাল তৈরি। যেমনঃ পেট হাসপাতাল, এভিয়ারি হাসপাতাল।
- সকল জেলা প্রাণি হাসপাতাল গুলোতে হাসপাতালের মত সেবা চালুকরণ।
- জরুরিভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর উপহার দেয়া পীর শাহজামান প্রাণি হাসপাতাল এ একটি আধুনিক প্রাণি হাসপাতালের জনবল কাঠামোর অনুমোদন এবং বাস্তবায়ন।
লেখক: নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক