নিজস্ব প্রতিবেদক: বিগত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে পোলট্রি শিল্পে দাপটের সাথে অবস্থান করা ঠাণ্ডা মাথার (নীরব) শত্রু হিসেবে পরিচিত লো প্যাথোজনিক এভিয়ান ইনফ্লুয়েনঞ্জা রোগ বা H9N2 ভাইরাসের ভ্যাকসিন ব্যবহারের অনুমতি পাওয়া গেছে। রোগটির কারণে মুরগি ডিম উৎপাদন হার ব্যাপকহারে হ্রাস পেয়ে আসছিলো। ফলে পোলট্রি সংশ্লিষ্ট মহল থেকে দাবী উঠতে থাকে H9N2 ভ্যাকসিন ব্যবহারের। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ভ্যাকসিনটি বাজারজাতকরণের অনুমোদন পেয়েছে দেশের প্রাণিস্বাস্থ্য সেবা খাতে সুপ্রতিষ্ঠিত এসিআই এনিমেল হেলথ্। কোম্পানিটি বহু আকাঙিক্ষত H9N2 (CEVAC NEW FLU H9K,) ভ্যাকসিন সরকারি অনুমোদন সাপেক্ষে ইতোমধ্যে আমদানি করেছে এবং বিপনন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ রোগটি নিয়ন্ত্রণের জন্য টিকা প্রদান কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এর ফলে সেক্টর সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তা ও খামারিদের দীর্ঘদিনের চাহিদা পূরণ হলো বলে মনে করছেন পোলট্রি শিল্পের সাথে জড়িত সংশ্লিষ্টগণ।
এ সম্পর্কে এসিআই এগ্রিবিজনেস এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এফএইচ আনসারি এগ্রিনিউজ২৪.কম কে বলেন, বাংলাদেশ সবচেয়ে সস্তা প্রাণিজ উৎসের নাম পোলট্রি এবং শিল্পটি প্রায় ১ কোটি লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে দেশে। কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে লো প্যাথজনিজ এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা (H9N2) রোগের আক্রমণের ফলে ডিমের কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন হার কমে গিয়েছিল। এর ফলে খামারিদের উৎপাদন খরচ বেড়ে গিয়ে লোকসানের লোকসানের কবলে পড়ে এবং ৩০% লেয়ার খামারি সেক্টর থেকে ঝড়ে পড়ে।
ড. আনসারি বলেন, খামারি ও পোলট্রি শিল্প সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে রোগটির টীকা প্রতিষেধক ব্যবহারের অনুমতির দাবী উঠায়, আমরা এসিআই -এর পক্ষ থেকে সরকারের কাছে ভ্যাকসিন আমদানির অনুমতি চাই । সরকার আমাদের প্রাথমিকভাবে আমদানির অনুমতি দেয় এবং ভ্যাকসিনটি এতদিন ট্রায়ালে ছিল। দীর্ঘদিন ট্রায়ালে থাকার পর অবশেষে এটি আমরা বাজারজাত করার অনুমতি পেয়েছি। ইতিমধ্যে সারাদেশে আমরা H9N2 (CEVAC NEW FLU H9K,) ভ্যাকসিন বাজারজাত শুরু করে দিয়েছি। আমরা আশা করি ভ্যাকসিনটি প্রয়োগের ফলে লাখ লাখ লেয়ার খামারি লোকসানের হাত থেকে মুক্তি পাবেন এবং পোলট্রি শিল্প আবার ঘুরে দাড়াবে।
ভ্যাকসিন আমদানি ও বাজারজাতকরনের অনুমতি দেয়ায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ জানিয়ে ড. আনসারি বলেন, আমরা মনে করি এটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিয়ে সুদূরপ্রসারি যে পরিকল্পনা আছে, সেটিকে আরো এক ধাপ এগিয়ে নেয়ার পথের সাথী হবে।
উল্লেখ্য, পোল্ট্রি শিল্প বাংলাদেশে দ্রুত বর্ধনশীল শিল্প হিসেবে পরিগণিত হলেও বিভিন্ন রোগ-ব্যাধির সংক্রমণ এ শিল্পের একটি প্রধান অন্তরায়। তন্মধ্যে, এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা অন্যতম। উক্ত এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগ সংক্রমণের মধ্যে H9N2 যা লো-প্যাথজেনিক এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা নামে পরিচিত। বাংলাদেশে রোগটি নিয়ন্ত্রণের জন্য জরুরি ভিত্তিতে ভ্যাকসিনটি আমদানি অপরিহার্য হয়ে পড়ে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে H9N2 ভ্যাকসিনটি আমদানি, মাঠপর্যায়ে ও মূল্যায়ন কার্যক্রম তদারকির জন্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় একটি কারিগরি কমিটি গঠন করে। উক্ত কারিগরি কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এডভান্স কেমিকেল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড (ACI) কে বিদেশ হতে H9N2 ভ্যাকসিন আমদানির সুপারিশ করে। সেপ্রেক্ষিতে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর এসিআই লিমিটেডকে H9N2 ভ্যাকসিন আমদানির অনুমতি প্রদান করে।
ভ্যাকসিনটি সাভারে অবস্থিত বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইন্সিটিউট -এর পরিচালনায় এবং ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও সিডিআইএল, ডিএলএস এর সার্বিক সহযোগিতায় ভ্যাকসিনটির ট্রায়াল কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে। উক্ত ট্রায়াল প্রতিবেদন হতে জানা যায় যে, এসিআই কর্তৃক আমদানীকৃত CEVAC NEW FLU H9 K, vaccine যা মুরগিতে এ রোগের বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত এন্টিবডি তৈরি করেছে। উক্ত প্রতিবেদনে আরও প্রতীয়মান হয় যে, আমদানিকৃত H9N2 ভ্যাকসিনটি বর্তমানে বাংলাদেশে Circulating H9N2 ভাইরাসের সহিত যথেষ্ট মিল রয়েছে। উল্লেখ্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণলয় এবং ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর ইতোমধ্যে ভ্যাকসিনটির আমদানির এবং মাঠ পর্যায়ে ব্যবহার অনুমতি প্রদান করেছে।