শনিবার , নভেম্বর ১৬ ২০২৪

নিজের খামারের মাছ, দুধ ও ডিম নিয়ে অসহায়-দরিদ্রদের পাশে আকরাম

অসহায় দরিদ্রদের মাঝে নিজের খামারের মাছ, দুধ ও ডিম বিতরণ করছেন গাজীপুরের আকরাম হোসেন।

নিজস্ব প্রতিবেদক: করোনভাইরাস সংকট ও ম্যারাথন লকডাউনের কারণে সারাদেশের সাধারণ মানুষ যখন অসহায়, নিম্ন আয়ের দারিদ্র, কর্মহীন দিনমজুর, রিকশা-ভ্যানচালক, নিম্নবিত্ত মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো খেয়ে না খেয়ে কোনমত দিন পাড় করছেন। রমজান মাসে ডাল ভাত কিংবা ভর্তা দিয়ে দুমুঠো খাবার খেয়ে রোজা রাখছেন। করোনা থেকে প্রতিরোধে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার কথা থাকলেও এইসব দরিদ্রপরিবারগুলো কর্মহীন হয়ে পড়ায় সেটাও খেতে পারেন না। ঠিক এই সময় প্রচার মাধ্যমগুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে! কিন্তু যাদের তেল আনতে নুনতা ফুড়ায় সেসব সাধারণ মানুষ এসব খাবার পাবেন কোথা থেকে সে প্রশ্ন আড়ালেই রয়ে গেছে। কিন্তু বরাবরের মতোই সৃষ্টিকর্তা অসহায় মানুষ যেমন দিয়েছেন, ঠিক তেমনি তাদের পাশে দাড়ানোর মতো মানুষ সৃষ্টি করেছেন। গাজীপুরের আকরাম হোসেন। পেশায় একজন মৎস্য ও গরুর খামারি হলে হলেও গাজীপুরের দরিদ্র মানুষের কাছে সাক্ষাৎ ফেরেশতা। যে কোন বিপদ আপদে আকরামকে তারা কাছে পান।

তাইতো এবার এলাকার অসহায় দরিদ্র মানুষের মাঝে নিজের খামারের দুধ, ডিম ও মাছ নিয়ে হাজির। রবিবার বেলা ১১টায় নিজের স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী নিয়ে গাজীপুর সদর উপজেলার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভবানীপুর মেম্বারবাড়ি বাসষ্ট্যান্ডে হাজির। রাস্তার রিকশা-ভ্যান চালক ও কর্মহীন মানুষের মাঝে বিতরণ করলেন নিজের খামারের মাছ, দুধ ও ডিম।

এ ব্যাপারে আকরাম হোসেন বলেন, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার বিষয়টি যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা করোনাভাইরাস আমাদের চোখে যেনো আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। এই ইমিউন সিস্টেম আমাদের জন্য আল্লাহতা’আলার পক্ষ থেকে একটি বিশেষ নিয়ামত।

তবে আমরা অনেকে শিক্ষিত হয়েও গাফিলতি করে সঠিক খাদ্যাভাসের অনুপস্থিতি বশত ইমিউনিটি বৃদ্ধি করার বদলে হ্রাস করে ফেলি, সেখানে নিম্নআয়ের অধিকাংশ মানুষ এ ব্যাপারে একদমই ওয়াকিবহাল নয়। তাদের আসলে দু-মুঠো ডালভাত খেয়ে বেচেঁ থাকার উপরে অন্যকিছু ভাবার সুযোগ থাকেনা। তাই তাদের স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে এবার একটু ব্যতিক্রমী কাজ করার চেষ্টা করলাম।

তিনি বলেন, আজ গাজীপুর সদর উপজেলার ঢাক-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভবানীপুর মেম্বারবাড়ি বাসস্ট্যান্ডে প্রায় ৩০০ রিক্সা-ভ্যানচালক ও কর্মহীন প্রত্যেককে নিজ খামারের ৩ কেজি মাছ, ১ কেজি দুধ ও ১২ টি করে ডিম বিতরণ করলাম। সক্ষমতা খুব বেশি না হলেও সাধ্যমত চেষ্টা করেছি নিজের খামারের নির্ভেজাল ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার দিয়ে তাদের স্বাস্থ্য কিছুটা ভালো রাখতে। কারণ আমার কাছে কোয়ান্টিটি নয়, কোয়ালিটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

আকরাম হোসেন আরো বলেন, আসলে প্রচলিত ধারণার কারণে অনেকেরই হয়ত মনে হয় যে ত্রাণ মানেই অনেক টাকা খরচ করে একসাথে অনেক মানুষকে সাহায্য করা। বিষয় টা মোটেই সেরকম নয়, মূল উদ্দেশ্য হলো নিজ সাধ্যমত মানুষকে সাহায্য করা। উদাহরণ হিসেবে যদি আপনি রিক্সায় যাতায়াত করেন তাহলে সেক্ষেত্রে রিক্সা ভাড়াটা একটু বাড়িয়ে দিলেন বা এক হালি ডিম তাকে কিনে দিলেন, এতে আপনার আর্থিক খুব একটা সমস্যা হবেনা – কিন্তু তার হয়ত অনেক বড় উপকার হবে।

বস্তুত অঢেল সম্পদ নয়, মানুষের পাশে থাকার জন্য প্রয়োজন আপনার নেক নিয়ত ও মানসিকতা, যোগ করেন আকরাম হোসেন।

This post has already been read 3932 times!

Check Also

বসবাসযোগ্য পৃথিবীর গড়তে ভুয়া প্রযুক্তি ছেড়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের প্রতি আহবান

চট্টগ্রাম সংবাদদাতা: নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং ক্লিন এনার্জি”র নামে ভুয়া প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবীতে …