নিজস্ব প্রতিবেদক: কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, এমপি বলেছেন, সারাদেশে এ বছর ৪৭ লাখ ৫৪ হাজার ৪৪৭ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। ইতোমধ্যে হাওরের শতভাগ এবং সারা দেশের শতকরা ৪৮ ভাগ ধান কর্তন শেষ হয়েছে। তিনি বলেন, কৃষকেরা সফলভাবে ধান ঘরে তোলার পাশাপাশি ধান বিক্রিতে ভাল দাম পাচ্ছেন। মন্ত্রী আজ (বৃহস্পতিবার, ১৪ মে) মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষ থেকে বোরো ধানের দাম এবং ধান কর্তন অগ্রগতি বিষয়ে সাংবাদিকদের সাথে অনলাইনে মতবিনিময় কালে এ কথা বলেন। মন্ত্রী আরও বলেন, অঞ্চলভেদে ধানের বাজার দরের কম-বেশি রয়েছে। তাছাড়া ভেজা ও শুকনা ধান এবং মোটা- চিকন ধানের দামেও পার্থক্য রয়েছে।
ব্রিফিংকালে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নাসিরুজ্জামান, অতিরিক্ত সচিব ড. মো. আবদুর রৌফ এবং কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ব্রিফিংয়ে কৃষি বিভাগের ১৪টি অঞ্চল ও জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালকদের পাঠানো তথ্যানুসারে সারাদেশের বোরো ধানের দাম এবং ধান কর্তন অগ্রগতি তুলে ধরেন কৃষিমন্ত্রী। কৃষিমন্ত্রী বলেন, এবার ধানের যা দাম আছে এটি মোটামুটি যুক্তিসঙ্গত। ধান-চালের দাম বাড়লে চাষি ও কৃষকেরা খুশি হয়, কিন্তু সীমিত আয়ের মানুষেরা কষ্ট করে। তাঁরা তাঁদের স্বল্প আয় দিয়ে প্রয়োজনীয় খাবার কিনতে পারে না। সেজন্য এ উভয় সংকট এড়াতে আমরা চাই একটা ব্যালেনস্ বা মাঝামাঝি অবস্থা যাতে ধান-চাল বিক্রি করে চাষি ও কৃষকেরা খুশি হয়, অন্যদিকে সীমিত আয়ের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়।
তিনি জানান, হাওড় অঞ্চলের সিলেট জেলায় বর্তমানে ভেজা ধান ৭০০-৭৫০ টাকা, শুকনা ধান ৮০০-৮৫০ টাকা, মৌলভীবাজার জেলায় ভেজা ধান ৬৫০-৭৫০ টাকা, শুকনা ধান ৭৫০-৮০০ টাকা, হবিগঞ্জ জেলায় ভেজা ধান ৬৫০-৭০০ টাকা, শুকনা ধান ৭৫০-৮০০ টাকা, সুনামগঞ্জ জেলায় ভেজা ধান ৬৫০-৭৫০ টাকা, শুকনা ধান ৭৫০-৮০০ টাকা এবং নেত্রকোনা জেলায় ভেজা মোটা ধান ৬৫০-৬৮০ টাকা ও চিকন ধান ৮০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, কুমিল্লা অঞ্চলে ৭৭ ভাগ ধান কর্তন শেষ হয়েছে। কুমিল্লা জেলায় মোটা ধান ৮০০-৮৫০ টাকা, চিকন ধান ৯০০ টাকা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় ভেজা ধান ৬০০-৭০০ টাকা, শুকনা ধান ৮০০ টাকা এবং চাঁদপুর জেলায় মোটা ধান ৮০০-৮৫০ টাকা ও চিকন ধান ৯০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, খুলনা অঞ্চলে শতকরা ৭৩ ভাগ ধান কর্তন শেষ হয়েছে। খুলনা জেলায় মোটা ধান ৭৬০-৭৭০ টাকা, চিকন ধান ৮৮০- ৯০০ টাকা, বাগেরহাট জেলায় মোটা ধান ৭০০-৭৫০ টাকা, চিকন ধান ৮৫০- ৯০০ টাকা এবং সাতক্ষীরা জেলায় মোটা ধান ৮০০-৮২০ টাকা ও চিকন ধান ৯০০- ৯২০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে।
ময়মনসিংহ অঞ্চলেও কৃষকেরা ধানের ভাল দাম পাচ্ছেন জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, শেরপুর জেলায় মোটা ধান ৬৫০-৭০০ টাকা, চিকন ধান ৭০০- ৭৫০ টাকা, ময়মনসিংহ জেলায় মোটা ধান ৭৫০-৮০০ টাকা, চিকন ধান ৮৫০- ৯০০ টাকা এবং জামালপুর জেলায় মোটা ধান ৬৫০-৭৫০ টাকা ও চিকন ধান ৮৫০- ৯০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে।
কৃষিমন্ত্রী জানান, যশোর অঞ্চলে শতকরা ৬২ ভাগ ধান কর্তন করা হয়েছে। যশোর, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা ও মাগুরা জেলায় মোটা ধান ৮৫০-৯০০ টাকা, চিকন ধান ৯০০- ১০৫০ টাকা এবং কুষ্টিয়া ও মেহেরপুর জেলায় মোটা ধান ৬৫০-৭৫০ টাকা ও চিকন ধান ৮৫০- ৯০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে।
মন্ত্রী বলেন, বরিশাল অঞ্চলের পটুয়াখালী,ঝালকাঠি ও বরগুনা জেলায় ৮২০-৮৫০ টাকা এবং দিনাজপুর জেলায় ভেজা ধান ৬৭৫-৭০০ টাকা ও শুকনা ধান ৭৭৫- ৮০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে।অন্যদিকে, রাজশাহী জেলায় ভেজা ধান ৮০০-৮৫০ টাকা, নওগাঁ জেলায় মোটা ধান ৬০০-৬৫০ টাকা এবং চিকন ধান ৮৫০-৯০০ টাকা, রংপুর জেলায় ভেজা ধান ৬৮০-৭০০ টাকা এবং শুকনা ধান ৮১০-৮২০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে।
কৃষিমন্ত্রী জানান, কৃষকের ধানের ন্যায্য মূল্যপ্রাপ্তি এবং করোনা সময়কালে দেশের নিম্ন আয়ের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ৮ লাখ মেট্টিক টন ধান, ১.৫ লাখ টন আতপ চাল, ১০ লাখ মেট্টিক টন সিদ্ধ চাল, এবং ৭৫ হাজার মেট্টিকটন গমসহ ২০ লাখ ২৫ হাজার মেট্টিক টন খাদ্যশস্য কিনবে সরকার। এ কার্যক্রমকে সুচারুরূপে সম্পাদনের জন্য উপজেলা কৃষি অফিসারের তত্ত্বাবধানে সারাদেশে ধান বিক্রয়কারী কৃষকের তালিকা তৈরি করে তা খাদ্য বিভাগের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। কৃষকের ধান বিক্রয়ে যাতে সুবিধা হয় এজন্য ইউনিয়নে পর্যায়ে ২৬৭৩ টি আর্দ্রতামাপক যন্ত্র সরবরাহ করা হয়েছে।
মন্ত্রী জানান, কৃষকদের স্বার্থে সারসহ সেচ কাজে বিদ্যুত বিলের রিবেট বাবদ কৃষিখাতে ৯,০০০ কোটি টাকার ভর্তুকি কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে সার্বিক কৃষিখাতের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে মাত্র ৪% সুদে কৃষকদের ১৯,৫০০ কোটি টাকার বিশেষ ঋণ প্রণোদনা প্রদান করা হচ্ছে।
মন্ত্রী বলেন,‘এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে’- মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনা মোতাবেক খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে যাতে কোন জমি পতিত না থাকে এবং আবাদযোগ্য জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব হয় সেজন্য কৃষি মন্ত্রণালয় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এসময় তিনি করোনার দুর্যোগ মোকাবিলা করে দেশের খাদ্য উৎপাদনের বর্তমান ধারা শুধু অব্যাহত রাখা নয়, তা আরও বৃদ্ধি করে ২০৩০ সালের ‘টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট’ (এসডিজি) অর্জন করার দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।