নিজস্ব প্রতিবেদক: মহামারি করোনাতেও থেমে নেই মানুষের নিষ্ঠুরতা। সেই নিষ্ঠুরতা কখনো মানুষ থেকে যেয়ে ঠেকেছে কখনো ফসলে, কখনো গাছে আবার কখনো মাছে। এমনিই এক নিষ্ঠুরতম ঘটনা ঘটেছে ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল থানার চন্ডীপাশা ইউনিয়নের নিজবানাইল গ্রামে। অভিযোগ উঠেছে জমিজমা সংক্রান্ত পূর্ব শত্রুতার জেরে উক্ত গ্রামের মাছচাষি মো. আব্দুল হাই আকন্দ’র পুকুরের প্রায় ১২-১৩ লাখ টাকার মাছ বিষ প্রয়োগে নিধন করা হয়েছে। ৩৪ শতাংশ পুকুরে চাষকৃত গুলশা, শিং, টাকি ও কার্প জাতীয় মাছ মরে পানিতে ভেসে গেছে আব্দুল হাই আকন্দ এর স্বপ্ন। বিচারের আশায় তিনি এখন দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
এ ব্যাপারে চাষী আব্দুল হাই আকন্দ জানান, বৃহস্পতিবার (১৪ মে) ভোর রাতে সেহরী খাওয়ার সময় পুকুরের মাছ পাহাড়া দিতে গেলে একই গ্রামের মৃত- আব্দুল মমিনের পুত্র কাইয়ুম ও হারুন তার উপস্থিতি টের পেয়ে পুকুর পাড় থেকে দৌড়ে পালিয়ে যেতে দেখেন তিনি। পরে সকালে দেখেন, মরে একে একে ভেসে উঠছে পুকুরের সব মাছ। প্রায় ১২-১৩ লাখ টাকার মাছ চোখের সামনে এভাবে ভেসে উঠতে দেখে ভেঙ্গে পড়েছেন চাষি আব্দুল হাই। ভু্ক্তভোগীর দাবী, থানায় মামলা করতে গেলে সেখান থেকে এসআই রফিক আসেন পুকুর পরিদর্শনে, কিন্তু বিষ প্রয়োগেই মাছ নিধন হয়েছে মৎস্য অধিদপ্তরের এমন রিপোর্ট হাতে পাওয়া ছাড়া মামলা নেয়া যাবেনা, বলে জানিয়ে দেন।
এ ব্যাপারে নান্দাইল থানার এসআই রফিক এগ্রিনিউজ২৪.কম কে বলেন, আমি ঘটনাস্থাল পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী মৎস্য অধিদপ্তরের রিপোর্ট ছাড়া আমরা মামলা নিতে পারিনা। পুকুরে বিষ প্রয়োগেই মাছ নিধন হয়েছে এমন প্রমাণ পেলে আমরা অবশ্যই মামলা নিয়ে অভিযুক্ত আসামীকে গ্রেফতার করবো।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে ব্যাপারে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আরিফ হোসেন এগ্রিনিউজ২৪.কম কে বলেন, কোন পুকুরে বিষয় প্রয়োগে মাছ নিধন করা হয়েছে কি না সেটি পরীক্ষা করার মতো সক্ষমতা আমাদের নেই। গতকাল আমাদের অধিদপ্তরের দুজন কর্মকর্তা সেখানে গিয়েছিলেন, তারা পুকুরের পানির অক্সিজেন, পিএইচ এবং অ্যামোনিয়া পরিমাপ করে পরীক্ষা প্রতিবেদন দিয়ে আসছেন। আপনাদের যদি সক্ষমতা নাই-ই থাকে তবে মাছ কীভাবে নিধন হয়েছে সেটির রিপোর্ট দিবেন কীভাবে এমন প্রশ্ন করা হলে উক্ত মৎস্য কর্মকর্তা জানান, এমন কোন রিপোর্ট দেয়ার প্র্যাকটিস আমাদের নেই। আমাদের কাজ মাছ চাষে সহায়তা করা।
ভুক্তভোগী মাছ চাষির ছেলে তুহিন জানান, গ্রামের কাইয়ুম ও হারুন দীর্ঘদিন ধরেই তাদের সাথে শত্রুতা করে আসছে। এর আগে তাদের নামে মারপিটের ঘনটনায় বিগত ২০১৯ সনের ডিসেম্বর মাসে থানায় মামলা (নং ২৭৫১১) করা আছে। আমার পিতা নিজের চোখে তাদের (কাইয়ুম ও হারুন) পালিয়ে যেতে দেখেছেন। তারপরও থানা মামলা নিচ্ছেনা। তাহলে আমরা কার কাছে বিচার চাইবো?
তুহিন অভিযোগ করে বলেন, কোন এক অজানা কারণে মৎস্য কর্মকর্তা আমাদের সহযোগিতা করছেননা। মৎস্য কর্মকর্তা তাদের জানিয়েছেন, মাছ কি কারণে মারা গিয়েছে সেগুলো পরীক্ষার জন্য মাছের স্যাম্পল মহাখালী ল্যাবে পাঠাতে হবে। বারবার অনুরোধ করার পরও ল্যাব টেস্টের জন্য তারা কোন মাছের স্যাম্পল নিয়ে যাননি। শুধুমাত্র পুকুরের পানির পিএইচ, অক্সিজেন, অ্যামোনিয়া পরিমাণ হাতে লেখা টেস্ট রিপোর্ট দিয়ে চলে গেছেন।
সামগ্রিক বিষয়টির ব্যাপারে জানতে চাইলে নান্দাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনসুর আহমেদ এগ্রিনিউজ২৪.কম কে বলেন, রিপোর্ট না পেলে আমরা মামলা নিতে পারবোনা তা নয়। মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে আমাদের পুলিশ টিম ঘটনাস্থলে গিয়েছেন এবং আমরা প্রাথমিক তদন্ত কাজ শুরু করেছি। ভিকটিম আমাদের কাছে এখনো পর্যন্ত কোন লিখিত অভিযোগ করেননি, লিখিত অভিযোগ পেলে আমরা অবশ্যই মামলা নেবো এবং আসামীদের গ্রেফতারে ব্যবস্থা নেবো।