ফকির শহিদুল ইসলাম(খুলনা) : ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে খুলনার উপকূলীয় কয়রা উপজেলায় ক্ষতিগস্থ বেড়িবাঁধ মেরামতের দায়িত্ব সেনাবাহিনীকে দেওয়া হয়েছে। সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার্স কোরের অগ্রগামী টিম ইতোমধ্যে কয়রায় অবস্থান নিয়ে প্রাথমিক কাজও শুরু করেছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করে কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিমুল কুমার সাহা জানান, সেনাবাহিনীর সদস্যরা শুক্রবার (২২ মে) থেকে কয়রার মদিনাবাদ মডেল স্কুল, কালনা মাদ্রাসা ও সুন্দরবন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে অবস্থান নিয়েছেন। তারা প্রাথমিকভাবে স্থানীয় দক্ষিণ বেদকাশির গোলখালী, সদর ইউনিয়নে হরিণখোলা ও উত্তর বেদকাশির রতনাঘেরি কাটকাটা এলাকায় বাঁধে মাটি, বালু ভরাট কাজ শুরু করেছেন। কয়রা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রবিউল ইসলাম বলেন, কয়রার বাঁধ মেরামতের জন্য ৩শ’ সেনা সদস্য আসার কথা রয়েছে। শুক্রবার থেকে অগ্রগামী টিম কয়রায় অবস্থান নিয়েছে।
খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে কয়েকটি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তবে অর্থ বরাদ্দ না থাকায় এখনই বাঁধে মেরামত কাজ করতে পারছে না পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। এ কারণে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে কয়রায় তিনটি পয়েন্টে বাঁধ মেরামত কাজ করবে সেনাবাহিনী।
খুলনা-৬ আসনের সংসদ সদস্য মো. আকতারুজ্জামান বাবু বলেন, সেনাবাহিনী বাঁধ মেরামতের কাজ পাওয়ায় মানুষের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে। সেনবাহিনীকে উত্তর বেতকাশির গাজিপাড়া ও মহারাজপুর দশালিয়া এলাকার বাঁধ মেরামতের জন্য বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে এখানে প্রায় ৩০ ফুট গভীরতার খালের মতো তৈরি হয়েছে। ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের আঘাতে কয়রার জোড়শিং বাজার, গোলখালী, গাজীপাড়া, ঘাটাখালীসহ ১১টি পয়েন্টে বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ ফসলি জমি ও ঘরবাড়ী প্লাবিত হয়। এতে নদীতে জোয়ারের সময় লবণ পানি থেকে জমির ফসল রক্ষায় স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বাঁধ সংস্কারের উদ্যোগ নেয় ক্ষতিগ্রস্থরা।
কয়রার দক্ষিণ বেতকাশি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শামছুর রহমান জানান, বেড়িবাঁধের নাজুক অবস্থা সম্পর্কে আগেই পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু তারা গুরুত্ব না দেওয়ায় ভাঙনে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রতিবছর যেনতেনভাবে বাঁধ সংস্কারের নামে টাকা লুটপাট হয়। কিন্তু টেকসই বাঁধ নির্মাণ না হওয়ায় দুর্যোগ এলেই আতঙ্কে থাকে উপকুলীয় এ জনপদের মানুষ।
তবে অর্থবরাদ্দ না থাকায় গত কয়েকবছরে বাঁধ সংস্কারে বড় ধরনের কোনো কাজ করা যায়নি বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জী। তিনি বলেন, কয়রা, দাকোপ ও বটিয়াঘাটায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণে প্রায় ১০ হাজার ৫০০ কোটি টাকার প্রকল্প দেওয়া হলেও এখনো তা অনুমোদন হয়নি। একের পর এক ঘূর্ণিঝড়ে এখানকার প্রায় ৯০ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। অমাবশ্যা ও বর্ষা মৌসুম সামনে থাকায় ক্ষতি এড়াতে কয়েকটি পয়েন্টে জরুরি ভিত্তিতে বাঁধ মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
অপরদিকে পাইকগাছার দেলুটি ইউপির কালীনগর ওয়াপদা বাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হওয়ায় পানি বন্দী হয়েছে প্রায় ১৩ হাজার মানুষ। সুপার সাইক্লোন ঘুর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে লন্ড ভন্ড হয়ে গেছে উপজেলার দ্বীপ বেষ্টিত দেলুটি ইউনিয়ন। ওয়াপদার ২২ নং পোল্ডারের বেঁড়িবাধটি ভেঙে প্লাবিত হয়েছে বিস্তির্ণ এলাকা। হাজার হাজার ঘর বাড়ী শ্রোতে ভেসে গেছে। দেলুটির ৯ টা চক নিয়ে গঠিত ২২ নং পোল্ডার। যার ৪ পাশেই রয়েছে নদী বেষ্টিত। চিংড়ি চাষ মুক্ত এলাকাটির জনগন ধান, তরমুজ ও বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করে থাকেন। ঐ এলাকার উৎপাদিত ফসল দেশের বিভিন্ন এলাকায় রপ্তানী হয়ে থাকে। বর্তমানে উক্ত ২২ নং পোল্ডারের আওতাভুক্ত চাষিদের তরমুজ বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা সহ উত্তর বঙ্গে রপ্তানীর কার্যক্রম অব্যহত রয়েছে। তরমুজ বাগান থেকে গাড়ীতে লোড আনলোড করতে হাজার হাজার শ্রমিক কাজ করেন। যেখানে জমির মালিক, বর্গাদার, শ্রমিক, ব্যবসায়ী প্রত্যেকে স্ব স্ব স্থান থেকে উপার্জন করে থাকে তরমুজ মৌসুমে। কিন্তু প্রলয়ংকারী ঘুর্ণঝড় আম্পান সব কিছুই তছনছ করে দিয়েছে। কেড়ে নিয়েছে মুখের হাসি। ফলে এখানকার তরমুজ চাষিদের ঋনের ফাঁদে হাবু ডুবু খেতে হবে। ঘুর্ণিঝড় আম্পান বুধবার রাতে শুরু হওয়ার পর কালীনগর ওয়াপদা ভেঙ্গে জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে। ঐ রাতেই বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে যায়। তলিয়ে যায়, শত শত বসত বাড়ী, ভাসিয়ে নিয়ে যায় কোটি কোটি টাকার তরমুজ, বাঙ্গী, শাক সবজি। এলাকার জনগন স্বেচ্ছা শ্রমের মাধ্যমে ভাঙ্গন মেরামতের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।