শহীদ আহমেদ খান (সিলেট সংবাদদাতা) : সিলেটের বিভিন্ন উপজেলায় ভাসমান বেডে সবজি চাষে কৃষকরা বেশ আগ্রহী হয়ে উঠেছে। দেশের সবজির ঘাটতি পূরণ এবং বিকল্প উপায়ে সহজে ভাল সবজি পাওয়ার লোভে কৃষকরা ভাসমান বেডে কম খরচে সবজি চাষে এগিয়ে এসেছে। সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ ও কঠালপুর এলাকায় ব্যাপক ভাবে ভাসমান বেডে সবজি চাষ শুরু হয়েছে। এ পদ্ধতিতে শীত ও বর্ষাকালিন সময়েও শাক, সবজি চাষ করা সম্ভব। এই ধরণের প্রযুক্তিতে খরচ যেমন কম, ঠিক তেমনি সবজিতে রোগবালাই, পোকামাকড় এর উপদ্রব কম। তাই কীটনাশক ও সার তেমন একটা দিতে হয় না। নতুন এই প্রযুক্তি কৃষকদের মধ্যে আশা জাগাচ্ছে।
হাওর প্রধান সিলেট অঞ্চলের পুকুর, ডোবা, খান, বিল ও নালায় সারা বছর পানিতে টইটুম্বর থাকে। বৃষ্টিবহুল এ অঞ্চলে দেশের অন্যান্য এলাকার সবজি ফলানোর সুযোগ কম। ফলে পুরো এলাকায় সবজি ঘাটতি এবং সেই ঘাটতি মেটাতে দ্বারস্ত হতে হয় দেশের অন্যান্য অঞ্চলের উপর।
সম্প্রতি সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ রোডের কঠালপুর এলাকায় যাওয়ার সময় চোখে পড়ে রাস্তার দুইপাশের জলাশয়ে পরপর সাজানো অনেকগুলি ভাসমান বেডে বিভিন্ন প্রকারের সবজি চাষ করা হচ্ছে। বাঁশের খুটি ও বাতা দিয়ে মাচা তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। মাচায় সবজির লতাপাতা ছড়িয়ে ঝাড় হয়ে গেছে।
কৃষকদেরকে ভাসমান বেডে সবজি চাষের কলাকৌশল শিখিয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সরেজমিন গবেষণা বিভাগের বিজ্ঞানীরা। বিশেষ করে সিলেটের সরেজমিন গবেষণা বিভাগে কর্মরত বিজ্ঞানীরা সিলেটের বিভিন্ন ডোবায় ভাসমান বেডে সবজি চাষে এলাকার কৃষকদের উদ্ধুদ্ধ করেন এবং তাদেরকে প্রয়োজনীয় সব ধরণের পরামর্শ প্রদান করেন। সবকিছু আয়ত্ত্ব করার পর কৃষকরা ডোবায় সবজি চাষ শুরু করেন। বেডগুলোতে কৃষকরা শসা, লাউ, চালকুমড়া, লালশাক, কলমিশাক, ঢেড়শ সহ বিভিন্ন প্রকারের সবজি চাষ করছেন।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, একটি প্রকল্পের আওতায় জলাশয়ে ভাসমান বেডে এই সবজি চাষে উদ্ধুদ্ধ করা হচ্ছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এই প্রকল্পের নাম ভাসমান কৃষি প্রযুক্তি জনপ্রিয়করণ ও সম্প্রসারণ। এই প্রকল্পরে আওতায় আগ্রহী চাষীদের প্রাথমিকভাবে বিনা মূল্যে বেডে তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত গোলাপগঞ্জ ও কঠালপুর এলাকায় ১৫০টি বেডে চাষ করা হচ্ছে। এগুলোতে ক্রমান্নয়ে সবজি উৎপাদিত হচ্ছে।
কৃষক বিলাল আহমদ বলেন, ভাসমান বেডে সবজি চাষ একটি নতুন পদ্ধতি। পতিত ডোবা ও পুকুরে এ পদ্ধতিতে সবজি চাষের ফলে আমি সহ অন্যান্য কৃষকরা ভেজালমুক্ত সবজি উৎপাদন করে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রি করে আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছেন।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এর সরেজমিন গবেষণা বিভাগ, সিলেট এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মাহমুদুল ইসলাম নজরুল বলেন, সিলেট অঞ্চলে সবজি ঘাটতি রয়েছে। সেখানে এই প্রযুক্তিতে পানির উপর স্বল্প খরচে সবজি চাষ করা যাচ্ছে। যারা ভাসমান বেডে সবজি চাষ করবেন, তারা নিজেদেও পরিবারের চাহিদা বিক্রিও করতে পারবেন। তাই আমরা এই প্রযুক্তিকে সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছি।